ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ঐক্যমত সৃ্ষ্িট করতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির মত বিনিময় শুরু হচ্ছে এ সপ্তাহেই। দলটির নেতাদের ভাষ্য, বিকল্প এ সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দেশে গুণগত পরিবর্তন আনার প্রস্তাব এবং অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মতামত পারস্পরিক আদান-প্রদান হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির চার সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে এসব বিষয় উঠে আসে।
স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘নিরপেক্ষ সরকারের’ অধীনে করার মূল উদ্দেশ্যকে কেন্দ্রে রেখেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করবে বিএনপি। ইতোমধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন দলটির নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সহসাই মতবিনিময় শুরু করবো। সরকার পতন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করাই আমাদের এই আলোচনার মূল লক্ষ্য; এর বাইরে বড় কোনও লক্ষ্য থাকতে পারে না। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আলোচনার মধ্যে উঠে আসবে।’
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘অলরেডি আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে মহাসচিব ২০ দলীয় জোটের তিনটি শরিক দলের সঙ্গে গুলশানে কথা বলেছেন। আমিও আগে ৯ টি দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেছি। যারা জোটে আছে, ফ্রন্টে আছে তাদের মতামতও আমাদের শুনতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এককভাবে প্রোগ্রাম করছি। ফলে তারা কী মনে করছে, ভাবছে এসব বিষয় শুনতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও দলটির প্রভাবশালী দায়িত্বশীলরা জানান, ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে তিনটি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক টিমেই স্থায়ী কমিটির সদস্যরা রয়েছেন। প্রতিটি টিমের কোনও সুনির্দিষ্ট ‘প্রধান’ নেই। কোনও টিমে তিনজন, কোনও টিমে চারজন সদস্য রয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবারের মধ্যে যেকোনও দিন আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করবে বিএনপি। প্রথমদিকে যাদের সঙ্গে মত বিনিময় করা হবে, এসব দলের সঙ্গে এরইমধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন নেতারা। পারস্পরিক বোঝাপড়া তৈরি করা হচ্ছে। মত বিনিময়ের আগে গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, ‘আমরা টুকটাক কথা শুরু করেছি। ধারণা নিচ্ছি কার কী অভিমত। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মতামত দিচ্ছে। ইটস গোয়িং টু বি হ্যাপেন।’
আলোচনার মূল লক্ষ্য কী—এমন প্রশ্নের জবাবে নীতিনির্ধারক একজনের মন্তব্য এমন, ‘রাষ্ট্রের সবগুলো প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে, মূল লক্ষ্য এটাকে উদ্ধার করা। বিশেষ করে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের মতো আরও একটা এমন সরকার যেন না হয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সে লক্ষ্যেই জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করতে চাইছে বিএনপি।’
কাদের সঙ্গে আলোচনা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘যারা এই সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী, একমাত্র তারা ছাড়া সবার সঙ্গে ধাপে-ধাপে আমরা আলোচনা করবো। শিগগিরই মতবিনিময় শুরু হবে।’
বিএনপির সঙ্গে মত বিনিময়ে অংশ নিচ্ছে, এমন দুটো দলের মূল দায়িত্বশীলের সঙ্গে কথা হয় । শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে দুই নেতাই জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে বিএনপির অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে কর্মসূচি না দিলেও তারা দাবিতে একমত পোষণ করে এবং প্রক্রিয়াটিকে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের দিকে এগিয়ে নিতে একমত হয়েছেন তারা।
একটি দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে। হয়তো কিছুদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন দলগুলোর সঙ্গে তারা অফিসিয়ালি কথা বলবে। বামজোটের শরিকদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ দেখিয়েছেন বিএনপি নেতা। এটা আলাদা দলগতভাবে হবে। এ সপ্তাহের মধ্যে শুরু হতে পারে।’
আরেকটি সংগঠনের মহাসচিব এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা বিএনপির সঙ্গে মত বিনিময়ে অংশ নিলেও তাদের সঙ্গে ঐক্যজোট করবো না। যুগপৎভাবে কিছু হলে সেখানে আমরা অংশগ্রহণ করবো।’