* হোটেল কক্ষের পাঁচগুণ দাম।
*হোটেল কক্ষ না পেয়ে বালিয়াড়িতে রাত্রিযাপন।
*নিম্নমানের খাবার পরিবেশন খাবারের অতিরিক্ত দাম।
* গণশৌচাগার সংকটে সৈকতে শৌচকর্ম সারতে হচ্ছে।
বিজয় দিবসের টানা ছুটিতে কক্সবাজারে প্রায় ৪ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটেছে । হোটেল গুলোয় ঠাঁই মিলছেনা পর্যটকের। অনেকে রুম না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করতে দেখা গেছে। শৌচাগার না পেয়ে অনেক পর্যটক সৈকতের বালিয়াড়িতে শৌচকর্ম সেরেছেন। অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে অনেক রেস্তুরেন্ট ব্যবসায়ী অতিরিক্ত দাম নিয়েও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করছেন বলে অভিযোগ পর্যটকদের।
বিজয় দিবসকে সামনে রেখে পর্যটনের ভরা মৌসুমে কক্সবাজারে আবাসিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও রেস্তোরাঁগুলো গলাকাটা বাণিজ্য শুরু করেছে রীতিমতো । আবাসিক হোটেলগুলোয় রুম ভাড়ার তালিকা টানানোর নিয়ম থাকলেও মালিকরা তা মানছেন না।
কক্সবাজারে ছোট-বড় চার শতাধিক আবাসিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজে এমন নৈরাজ্য চললেও বিচ ম্যানেজমেন্ট ও ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা নেই বললেই চলে। এতে পর্যটন শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে হোটেল-মোটেল জোন কলাতলিতে ঘুরে পর্যটকদের কাছ থেকে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। পর্যটকরা বলছেন, অন্যান্য দিনগুলোতে একটি রুমের ভাড়া যত নেওয়া হয়, এখন তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। রেস্তোরাঁ গুলো নিম্নমানের খাবার দিয়ে অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেন। শুধুমাত্র ডাল, ভাত ও আলু ভর্তার দাম নিচ্ছে ১৫০ -২০০ টাকা জনপ্রতি।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা রফিক আজম বলেন, আমরা ঢাকা থেকে এসে কলাতলির সি-সান হোটেলে একটি নন-এসি রুম নিয়েছি। এই রুমের জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষ প্রথমে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। অনেক অনুরোধের পর আমাদের কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। অন্য সময়ে নেওয়া হয় মাত্র এক হাজার টাকা। এসব গলাকাটা বাণিজ্য বন্ধে জেলা প্রশাসনের কঠোর হওয়া দরকার।
যশোর থেকে আসা পর্যটক এনামুল হক জানান, সি-পার্ক হোটেলে একটি নন-এসি কাপল রুম চাচ্ছে ৮ হাজার টাকা, যা অন্য সময়ে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা দিয়ে পাওয়া যায়। এদিকে আমারী রিসোর্ট নামে একটি হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কাপল রুম ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৮-১০ হাজার টাকা করে। একই অবস্থা কক্সবাজারের সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল আর কটেজগুলোতে।
জানতে চাইলে হোটেল হোয়াইট অর্কিড এর ম্যানেজার বলেন, আমাদের কোনো নির্ধারিত ভাড়া নেই। আজ রুম ভাড়া বেশি। পর্যটক বেশি থাকায় আজকে পাচ হাজার টাকা করে নন-এসি রুম ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। দু-একদিন পরে এই ভাড়া কমে যাবে।
অন্যদিকে সি-সান রিসোর্টের কর্মকর্তা মো. আরিফের কাছে ভাড়া নির্ধারিত করা কি-না জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অনেক পর্যটক বৃহস্পতিবার রাতে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে হোটেল রুম না পেয়ে ব্যাগ ও লাগেজ নিয়ে অবস্থান করছেন বালিয়াড়িতে। আবার অনেক পর্যটক অবস্থান করছেন সাগরতীরে। ভ্রমণে এসে অনেক পর্যটক হোটেল রুমের জন্য এদিক ওদিক ঘুরছেন। কেউ কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিতও হচ্ছেন।
এদিকে , শহরে গণশৌচাগার রয়েছে মাত্র কয়েকটি। আবার অনেক সময় মসজিদের শৌচাগার ব্যবহার করলেও সেটি তালাবদ্ধ থাকায় বিচের পাড় অথবা কোনো গলিতেই শৌচকর্ম সারতে হচ্ছে পর্যটকদের। এ কারণে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পর্যটকদের।
আমিনুল ইসলাম নামে এক পর্যটক জানান, রুম না পেয়ে রাতটা কোনো মতে ফুটপাতে কাটালেও শৌচকর্ম সারতে পারেনি। ঘুরতে এসে শৌচাগার না থাকায় খুব বিপাকে পড়েছি। গণশৌচাগার না থাকায় নারীদের খুবই সমস্যা হচ্ছে।
সী গাজীপুর রিসোর্টের মালিক বলেন, কক্সবাজারে বিপুল পরিমাণ পর্যটক আসায় ফুটপাত ও সৈকততীরে রাতযাপন করছেন অনেক পর্যটক। তারা শৌচাগার না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। গতকাল থেকে আমার হোটেলের একটি টয়লেট পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। গণশৌচাগার না থাকায় মানুষজন বিচের পেছনে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করছে। দুর্গন্ধে বিচে থাকা যাচ্ছে না।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের কাছ থেকে যেসব হোটেল-মোটেল মালিক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন তাদের সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্যুরিষ্ট পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে। পর্যটক হয়রানি ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের তৎপরতা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, পর্যটকদের কাছে রুম ভাড়া বেশি নেওয়ার বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ পাচ্ছি। তবে কোনো পর্যটক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।