ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কন্যা সন্তান জন্মানোর অপরাধে স্ত্রীকে ছেড়ে গেছেন স্বামী

সুফিয়ান আল হাসান লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৩০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

লালমনিরহাটের আদিতমারীতে পরপর দুটি কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় স্ত্রীকে ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানোর অভিযোগ উঠেছে আমিনুর রহমান নামের এক মাদরাসা শিক্ষক স্বামীর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় প্রথম সন্তানকে হত্যার চেষ্টা, দ্বিতীয় সন্তান গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের উদ্দেশ্যে অত্যাচারসহ যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে আমিনুর ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে।
এঘটনায় ভুক্তভোগী নারী নয়জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল আদিতমারী উপজেলাধীন কাচারীপাড়ার মৃত আব্দুল বাতেনের মেয়ে লায়লা বিলকিছ বানুর সাথে একই উপজেলার মহিষখোঁচা বারঘড়িয়া গ্রামে আমজাদ হোসেনের ছেলে আমিনুর রহমানের বিয়ে হয়। লায়লা একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আমিনুর একটি দাখিল মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাদের কোল জুড়ে আসে প্রথম কন্যা সাদিয়া।
লায়লার অভিযোগ-  ‘কন্যা সন্তান হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন আমিনুর। তাকে নির্যাতনের পাশাপাশি অবুঝ সন্তানটির ওপরেও চালান হত্যার চেষ্টা। এরপর তরিঘরি করে দ্বিতীয় সন্তান গর্ভধারনে বাধ্য করান। আট মাস পরে পেটে আসে দ্বিতীয় সন্তান। আলট্রাসনো রিপোর্টে জানতে পারেন গর্ভের সন্তানটিও কন্যা। শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। গর্ভপাতের উদ্দেশ্যে পেটে লাত্থি মারলে গুরুত্ব অসুস্থ হন তিনি’।
লায়লা আরো জানান- পেটে আঘাত প্রাপ্ত হওয়ায় গর্ভের পানি শুকিয়ে যায়। ফলে নির্ধারিত সময়ের ২২দিন আগে দ্বিতীয় কন্যা সন্তানটির জন্ম হয়। এরপর থেকে লাপাত্তা আমিনুর।
বিয়ের পর থেকেই আমিনুর ও তার পরিবার যৌতুকের জন্য নানাভাবে লায়লাকে নির্যাতন করে আসছিলো। প্রথম থেকে ছেলে পক্ষের চাহিদা মত যৌতুক দিলেও তাতে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এখন নগদ ১৫লাখ টাকা, জমি কিনে ফ্লাট বাড়ি নির্মাণ করে নিজ নামে দলিল করে চান আমিনুর। আর এসবের ইন্ধন যোগাচ্ছেন তারই বড় ভাই শহিদুল ইসলাম- এমন দাবি লায়লার মায়ের।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আমিনুর রহমানের সাথে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার তার কর্মস্থল ও বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। আর বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ পরিবারের অন্যান্যরাও।
তবে মামলার ২নং আসামী অমিনুর রহমানের বড়ভাই শহিদুল ইসলাম জানান- দায়েরকৃত মামলায় তারা সকলেই জামিনে আছেন। আইনী জটিলতা এড়াতে এরই মধ্যে আদালতের মাধ্যমে দেন মোহরের টাকা জমা দিয়ে লায়লাকে তালাক দেওয়া হয়েছে।
এ ধরনের ঘটনাকে মানসিক দৈন্যতা আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা ও কঠোর বিচার দাবি করেছেন জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ নেটওয়ার্কের সভাপতি ফেরদৌসী বেগম বিউটি। তিনি বলেন-আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় নারী-পুরুষের সমঅধিকারের নিশ্চিত করতে যেখানে সরকার বদ্ধপরিকর। সেখানে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন একজন যৌতুকলোভী স্বামীর এমন মানসিকতা সমাজের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। দ্রুত অভিযুক্ত আমিনুরকে আইনের আওতায় নেওয়া দাবি জানান তিনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোক্তারুল ইসলাম বলেন- ঘটনাটি তদন্তাধিন রয়েছে। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।