কোনো রকম টেনেটুনে বোরো চাষাবাদ করছেন কিশোরগঞ্জ সদরের মহিনন্দ এলাকার কৃষক ইছহাক মিয়া। কৃষি উপকরণ ও ডিজেল- সারের দাম বাড়ায় কীভাবে চাষাবাদ করবেন,তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি।
কৃষক ইছহাক মিয়া বলেন,গত বছর এক বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষে খরচ হয় ১৯ হাজার ৮০০ টাকা। ধান উৎপাদন হয় প্রতি বিঘায় গড়ে ২২ মণ। প্রতি মণ ধান ৮০০ টাকা দরে মোট ১৭ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি করেন। এতে লাভ দূরের কথা লোকসান হয় ২২০০ টাকা। এবার এক বিঘা জমিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রে বীজ ৫ কেজি ৬০০ টাকা, বীজ বপন ৩০০ টাকা, বীজ জমি থেকে তোলা ১০০ টাকা, জমির চারপাশে ধার ঠিক করা ৪০০ টাকা, হালচাষ ১২০০ টাকা, দুই বস্তা ইউরিয়া ২৪০০ টাকা, পটাশ এক বস্তা ১২০০ টাকা, ড্যাপ এক বস্তা ৮০০ টাকা, জিপসাম ৫০০ টাকা, গোবর সার ২৬০০ টাকা. ধানের চারা লাগানো ১০০০ টাকা, ওষুধ ৫০০ টাকা, নিড়ানি ৬ বার ২৪০০ টাকা, সেচের পানি গত বছর বিঘাপ্রতি খরচ ছিল ১৯ হাজার ৮০০ টাকা, লোকসান ২২০০ টাকা এবার খরচ পড়বে ২৬ হাজার ৩০০ টাকা, ডিজেলেই ৫০০ টাকা বেশি।
কৃষক ইছহাক মিয়া জানান,গত বছরের তুলনায় এবার কৃষি উপকরণ, ডিজেল ও সারের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এতে ব্যয় হবে আরও গড়ে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে বোরো ধান ফলাতে মোট খরচ হবে ২৬ হাজার ৩০০ টাকা। তিনি বলেন, ধার-দেনা করে চাষাবাদ করার পর শেষ পর্যন্ত খাওয়ার ধানও থাকে না।
পাশের কর্শাকড়িয়াল ইউনিয়নের চিকনিরচর গ্রামের কৃষক হুমায়ুন ও এমন হিসাব দেন। তাঁর কৃষিজমির পরিমাণ আট বিঘা। তার মাঠের সবকিছু সম্পন্ন হয় লোক দিয়ে। তিনি জানান, ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জমিতে সেচ খরচ আগের বছরের চেয়ে বিঘাপ্রতি ৫০০ টাকা বাড়বে। সরকারের দেওয়া ভর্তুকির সার সিজনের সময় পাওয়া যায়। না। বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হয়। হালচাষের ব্যয় বাড়বে আগের চেয়ে বিঘাপ্রতি ৬০০ টাকা বেশি। বীজ এবং মজুরি বাবদ গুনতে হবে বেশি। এসব হিসাব করলে কৃষিকাজ করা সম্ভব নয়। কিন্তু বাপ-দাদার জমি: অন্য কোনো পেশা নেই। জমি ফেলে রাখতে মন চায় না। বাধ্য হয়েই চাষাবাদ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন,
চাষাবাদে খরচ হয় ধীরে ধীরে। ধান বিক্রি করে একবারে টাকা পাওয়া যায় বলে লোকসানের চাপ বোঝা যায় না।
কৃষক হুমায়ুন বলেন, তিনি প্রতি বছর স্থানীয় কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেন। ধান বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেন। কিন্তু ব্যাংকের সব ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। ধানে লাভ না হওয়ায় প্রতি বছর ব্যাংকের ঋণ বেড়ে যাচ্ছে।
এদিকে গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে ডিজেলের দাম বেড়েছে। আগে ছিল ৮০ টাকা লিটার । দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৩৪ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৪ টাকা লিটার। খুচরা বাজারে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও ২ টাকা। বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে ১১৬ টাকা লিটার।