ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কোরআন তিলাওয়াতের আদব

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:২৪:০০ পূর্বাহ্ন | ধর্ম

কোরআনুল কারিম মানব জাতির হেদায়েতের মাধ্যম। এর মাধ্যমে মুক্তি অনুসন্ধান করা হয়। এতে রয়েছে আরোগ্য। এর দ্বারা শারীরিক ও রুহানি রোগের মুক্তি মিলে। তার অসাধারণত্ব, মোজেজার শেষ নেই। শেষ নেই এর উপকারিতার। এটি এমন এক গ্রন্থ যা পূর্ববর্তী-পরবর্তী, জিন-মানুষ সবাইকে পথ দেখায়। কোরআন উপেক্ষা করলে হেদায়েত অসম্ভব। যারা তার ওপর ভরসা রাখবে তারাই হবে কামিয়াব। যারা সে অনুসারে আমল করবে তারাই হবে পার্থিব ও আখেরাতের সৌভাগ্যে সিক্ত। এতসব বৈশিষ্ট্যের কারণ এ কোরআন সংরক্ষিত। সংরক্ষিত হওয়ার রয়েছে অনেক কারণ। তন্মধ্যে অধিক পরিমাণ তিলাওয়াত হওয়া অন্যতম। অন্যসব গ্রন্থ থেকে এটি আলাদা ও বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এর বরকত অর্জনে আদবের সঙ্গে তিলাওয়াত কর্তব্য। নিচে কোরআন তিলাওয়াতের কয়েকটি আদব উল্লেখ করা হলো।

১. অজু সহকারে তিলাওয়াত করা। সম্মানের সঙ্গে তিলাওয়াত করা। বসে, শুয়ে, দাঁড়িয়ে যে অবস্থায়ই তিলাওয়াত করা হোক সওয়াব হবে। তবে কোরআনের সম্মানটা ধরে রাখা চাই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বুদ্ধিমান তারা, যারা আল্লাহকে (সর্বাবস্থায়) স্মরণ করে, দাঁড়িয়ে, বসে এবং শায়িত অবস্থায়।’ সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১। অবশ্য উত্তম হলো অজু অবস্থায় বসে কিবলামুখী হয়ে তিলাওয়াত করা। আসন করে বসা কিংবা টেক লাগিয়ে বসা থেকে বিরত থাকা। ২. তিন দিনের কমে খতম না করা। এর চেয়ে কম সময়ে খতম করলে তিলাওয়াতের হক আদায় হয় না। নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে তিন দিনের কমে কোরআন খতম করল সে কোরআন বোঝেনি।’ আবু দাউদ : ১৩৯৪। তবে সাত দিনে কোরআন খতম একটি মধ্যম পন্থা। নবী (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-কে বলেন, সাত দিনে কোরআন খতম কর, এর চেয়ে কম সময়ে করো না।’ মুসলিম : ১১৫৯। তিলাওয়াতকারী আলেম হলে এবং কোরআনের অর্থ ও মর্ম সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা উদ্দেশ্য ভালো হলে তার জন্য এক মাসে এক খতম করাও যথেষ্ট। ৩. কোরআন তারতিল তথা খুব ভালোভাবে ধীরে ধীরে পড়া মুস্তাহাব। কোরআনের উদ্দেশ্যই হলো আয়াত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা। ধীরে ধীরে পড়লে চিন্তা-ভাবনা করতে সহজ হয়। উম্মে সালামা (রা.) নবী (সা.)-এর তিলাওয়াত সম্পর্কে বলেছেন, ‘নবী (সা.) একেকটি অক্ষর খুব স্পষ্ট করে পড়তেন।’ নাসায়ি : ১০২২। তা ছাড়া ধীরে ধীরে পড়লে অন্তরে এর প্রভাব পড়ে অনেক বেশি। ৪. তিলাওয়াতের মাঝে কোরআনের সতর্কবাণী, কিয়ামতের অবস্থা এবং পূর্ববর্তী জাতিসমূহের ধ্বংসের বিবরণ সম্পর্কিত আয়াতে চিন্তা-ভাবনা করা এবং ক্রন্দন করা মুস্তাহাব। নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘কোরআন পড়, কাঁদ। কাঁদতে না পারলে কাঁদার ভান কর।’ ইবনে মাজাহ : ১৩৩৭। আশা-আকাক্সক্ষার আয়াত অতিক্রম করলে সেগুলো প্রার্থনা করা এবং ভয়ভীতির আয়াত পড়ে গেলে তা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা। ৫. আয়াতের হক আদায় করা। সিজদার আয়াত পড়লে কিংবা কারও থেকে শুনলে সিজদা করে নেওয়া, তবে শর্ত হলো অজু অবস্থায় থাকতে হবে। মুখস্থ তিলাওয়াত করলে সে অবস্থায় অজু না থাকলে অজু করে পরে সিজদা করে নেওয়া। ৬. শব্দ করে তিলাওয়াত করা। এতটুকু শব্দ অবশ্যই হওয়া চাই যেন নিজ কানে শোনা যায়। জোরে তিলাওয়াত অন্তর জাগ্রত করে। চিন্তা-ভাবনা শানিত করে। ঘুম দূর করে এবং পড়ায়ও আসে তৃপ্তি। তবে নিজের মধ্যে লোক দেখানোর আশঙ্কা হলে আস্তে পড়াই ভালো।

লেখক : মুহাদ্দিস জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম বাগে জান্নাত চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ