হাতে সরকারবিরোধী বিভিন্ন ইস্যু থাকলেও কঠোর কোনো কর্মসূচি দেয় না বিএনপি। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা যেমন এই অভিযোগ করেন, তেমনি দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে খোদ সরকার পক্ষ থেকেও এমন বক্তব্য আসে।
তারপরও বিএনপি সরকার পতন কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো কর্মসূচি দেয়নি গত সাড়ে তিন বছরে। এই সময়ে ছোটখাটো বিক্ষোভ, মানববন্ধন আর আলোচনা সভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল বিএনপির আন্দোলন।
এ বিষয়ে দলের তৃণমূল নেতাকর্মী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনের চেয়ে নিজেদের দল গোছানোকেই প্রাধান্য দিচ্ছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে শুরু করে অধিকাংশ সিনিয়র নেতার বক্তব্য সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী না করে আন্দোলন কর্মসূচি দিয়ে লাভ নেই। সেজন্য গ্রাম থেকে মহানগর পর্যায় পর্যন্ত দলকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। মূল দল বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সব পর্যায়ের কমিটি গঠনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে লোক দেখানো কিছু ছোটখাটো কর্মসূচিও চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ঘর গোছানোর ক্ষেত্রেও তৃণমূল থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে অধিকাংশ জেলা ও উপজেলা কমিটি কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে তৃণমূলের ত্যাগী নেতারা ভাল পজিশন না পেয়ে হতাশার মধ্যে থাকছেন। ফলে কর্মসূচি দিলেও সফল হচ্ছে না। আবার যুবদল ও ছাত্রদলের আংশিক কমিটি দিয়ে রাখা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য পদপ্রত্যাশীরা হতাশায় আছেন।
জানা গেছে, এরই মধ্যে বিএনপির জেলাপর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর পুনর্গঠন প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের কাজও গুছিয়ে আনা হয়েছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ঘোষিত কমিটিগুলোতে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও সাহসী নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, চলমান পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিএনপির অঙ্গসংগঠন কৃষক দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নতুন কমিটি হয়েছে। সবগুলো কমিটির শীর্ষ পদে সাবেক ছাত্রনেতাদের এনে সংগঠন শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর দলের শক্তি বাড়াতে পুনর্গঠনের ওপর জোর দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরপরই দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়। তবে এবার শক্তিশালী সংগঠন গড়তে সুযোগ্যদের নেতৃত্বে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দলের দুজন নীতিনির্ধারণী ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস নাগাদ আন্দোলনের টার্গেট করে দল গোছাচ্ছে দলটি। মহানগর কমিটির পর বিএনপি এখন যেসব জেলায় কমিটি অকার্যকর সেগুলোতে নতুন কমিটি নিয়ে কাজ করছে। সব মিলিয়ে আগামী অক্টোবরের মধ্যে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে চায় বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, থানা-উপজেলা-পৌরসভাসহ সবপর্যায়ের কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করি তিন মাসের মধ্যে সব কমিটি হয়ে যাবে।
তিনি জানান, সারাদেশে বিএনপির ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে গত সাড়ে তিন বছরে ৬০টি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি গঠন চলমান প্রক্রিয়া।
আন্দোলন সংগ্রামের বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা আন্দোলনের মধ্যেই আছি। যে কোনো সময় জনগণের পক্ষে একটা অবস্থান নিতে পারি। সেটা তীব্রও হতে পারে আবার তীব্র থেকেও তীব্র হতে পারে।
এদিকে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে বিএনপি। এবারের আন্দোলন জোটগতভাবে না করে যুগপৎভাবে করতে চাইছে তারা। সে লক্ষ্যে গত ২৪ মে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠকের মধ্যে দিয়ে এই সংলাপ শুরু করেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে ২০দলীয় জোটের শরীক ৮টি দল, ঐক্যফ্রন্টের একটি দল ও বাম দুটি সংগঠনের সঙ্গে সংলাপ করেছে। এসব সংলাপে সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে একমত হয়েছে সবগুলো দল। কিছু দিনের মধ্যে ২০দলীয় জোটের বাকী ১১টি দলসহ আরও কিছু দলের সঙ্গে সংলাপ করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে অনেকগুলো দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। আরও বেশ কিছু দলের সঙ্গে সংলাপ হবে। আমরা যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছি। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। এ ইস্যুগুলোতে সবদল একমত হয়েছে।