ঢাকা, রবিবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ই পৌষ ১৪৩১

ছাত্র-জনতার বিজয় উল্লাসে মিষ্টিমুখ: হামলা, ভাঙচুর, গুলিতে আহত শতাধিক

মোঃ জালাল উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৬ অগাস্ট ২০২৪ ০৭:৪৯:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন
শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠেন।আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষের ঢল নামে। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে উল্লাসে ফেটে পড়েন। আনন্দ মিছিল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। সোমবার ০৫ আগস্ট ২০২৪ ইং, বিকালে শ্রীমঙ্গলে শেখ হাসিনার পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার পাড়া-মহল্লা বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট ছোট মিছিল বের করে ভুয়া, ভুয়া স্লোগান দিয়ে বিজয় উল্লাস করে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা চত্বরে ছুটে আসেন ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ। একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে মিষ্টিমুখ করান। বেলা সাড়ে ৩টা থেকে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা চত্বরে ছাত্র-জনতা জমায়েত হতে থাকেন। বেলা ৪টার সময় শ্রীমঙ্গল উপজেলার ঢাকা সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক দখল করে উল্লাসকারী ছাত্র-জনতার বিভিন্ন স্লোগানে মিছিল করেন। এ সময় শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা, মৌলভীবাজার রোড, হবিগঞ্জ রোড, স্টেশন রোড ও কলেজ রোড উল্লাসকারীদের দখলে ছিল। মহাসড়কে অবস্থানকালীন সময়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ যোগ দেন। এরপর হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষের অংশগ্রহণে শহরে বিজয় মিছিল বের হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, শেখ হাসিনা ভুয়া, দেশ ছেড়ে পালালো কেন? আজকে দেশে ছাত্র-জনতার জয় হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের একটি অংশ দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগ করেও কোন পদ-পদবী না পাওয়ায় তাঁরাই শ্রীমঙ্গলে কৃষিমন্ত্রী বাসভবনে আগুন জ্বালিয়ে দেয় ও আওয়ামী লীগ নেতাদের দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে এবং থানায় ইটপাটকেল ছুঁড়ে ধিক্কার জানায়।
এরপর সাধারণ ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের একটি মিছিল শ্রীমঙ্গল থানার সামনে আসামাত্র বাধা দেয় পুলিশ। ওখান থেকে বাধা অতিক্রম করে সামনে আগাতে চাইলে মিছিল তুমুল সংঘর্ষে রূপ নেয়। একপর্যায়ে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়ে পুলিশ।
এ সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন কিশোরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শতাধিক মানুষ। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো শহর জুড়ে বিশাল ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন কালীঘাট রোডের ইসমাইল হোসেন, ফারদিন,  সিন্দুরখান রোডের ইমরান, জুয়েল, ছফেদ মিয়া রোডের ইমরান, জালালিয়া রোডের কামরুল, স্টেশন রোডের জিহাদ, রুবেল, উত্তর ভাড়াউড়ার নাজমুল, শান্তিবাগের আওয়াল, বিরাইমপুরের জুয়েল, মুসলিমবাগ এলাকার এনামুল হক, রামনগরের রুহেল, কাকিয়া বাজারের সাইফ, রুমেল, কলেজ রোডের রফিকুল, লালবাগের কাওছার, রমজান, উত্তর উত্তরসূরের আবু জাফর, আলিশারকুলের আব্দুল আহাদসহ শতাধিক। আহতদের প্রথমে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় গুলিবিদ্ধদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকরা আহতদের মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
সরজমিনে বেলা সাড়ে পাঁচটার সময় দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলিবিদ্ধ মানুষের সারি। মাথা, চোখ, বুক, পেট ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অনেকেই। আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন। এদের মধ্যে শুধু শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগেই চিকিৎসা নেন অন্তত অর্ধশতাধিক। সন্ধ্যা ০৭টার পর্যন্ত এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলিবিদ্ধ রোগী আসতে দেখা যায়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাসিফ আহমেদ বলেন, বিজয় মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ চিকিৎসা নিতে এসেছেন। আমরা তাদের চিকিৎসা দিয়েছি। অনেককে উন্নত চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছি বলে জানান।
এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা জাহিদ, আবু জাফর, সাব্বির, ইসমাইল, শুভ বলেন, আমরা সবাই আনন্দ মিছিল করছিলাম। পুলিশ হঠাৎ করেই অতর্কিতভাবে আমাদের ওপরে হামলা চালায়। প্রথমে রাবার বুলেট মারলেও পরে অন্যান্য বুলেট ছুড়তে থাকে। আমরা অনেকেই গুলিবিদ্ধ। অনেক শিশু রয়েছে।
এদিকে শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ সড়কের স্যামসাং ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের শো’রুম ও শ্যামা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারসহ বেশকিছু জায়গায় হামলা-ভাঙচুরের খবর শুনে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি। এ সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের একটি অংশ দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগ করেও কোন পদ-পদবী না পাওয়ায় তাঁরাই শ্রীমঙ্গলে কৃষিমন্ত্রী বাসভবনে আগুন জ্বালিয়ে দেয় ও আওয়ামী লীগ নেতাদের দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে এবং থানায় ইটপাটকেল ছুঁড়ে ধিক্কার জানায়।
সাধারণ ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে জানতে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিনয় ভূষণকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে কল রিসিভ করেননি তিনি।