ঢাকা, মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২২শে মাঘ ১৪৩১

জলঢাকায় ভুট্টা চাষে পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের ভাগ্য

হাসানুজ্জামান সিদ্দিকী হাসান, জলঢাকা | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১১:৩০:০০ পূর্বাহ্ন | কৃষি ও প্রকৃতি

নীলফামারীর জলঢাকায় ভুট্টা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশী চাষ হচ্ছে। তিস্তা ও বুড়ি তিস্তা সহ উপজেলার  নদী সমুহের বুকে জেগে উঠা ধু-ধু রুপালী বালু চর সহ বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টা চাষ করে বিপ্লব ঘটিয়েছেন কৃষকেরা। ফলে ভুট্টা চাষে বদলে যাচ্ছে এসব এলাকার মানুষের ভাগ্য । উপজেলায় এবার প্রায় ১ হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

এদিকে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর বেশী জমিতে ভুট্টা চাষ করছেন কৃষকেরা। এর লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে, এ উপজেলায় চাষ যোগ্য জমি রয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার হেক্টর। তার মধ্যে ভুট্টা ১ হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া আলু ৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর, শাক সবজি ৯৩০ হেক্টর, পেয়াজ ৮৫ হেক্টর, রসুন ৩৫ হেক্টর, মরিচ ৪৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। 

জলঢাকার বিভিন্ন চরাঞ্চলের ১০ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৮ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফসলের আবাদ করা হয়ে থাকে। এসব জমিতে বেশির ভাগই চাষ হচ্ছে ভুট্টা। 

উপজেলায় ভুট্টা চাষ শুরু হয় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় ১৯৯৮ সালের দিকে। মাত্র ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমি দিয়ে ভুট্টার চাষ শুরু হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টা চাষ বাড়তে থাকে।  বর্তমানে পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ভুট্টা চাষ। 

ভুট্টা অন্যতম রবিশস্য ফসল, যা সম্প্রতি এ অঞ্চলের ব্র্যান্ডিং পন্য হিসাবে খ্যাতি পেয়েছে ।

রবিবার সরেজমিনে উপজেলার চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা ও জানাযায়, এলাকার চরাঞ্চল সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। তিস্তা ও বুড়ি তিস্তা নদীর দুই পাশে এক সময় দেখা যেত শুধু রাশি রাশি  রুপালী বালু। সেখানে ফসল উৎপাদনই ছিল চিন্তার বাইরে। 

তিস্তা ও বুড়ি তিস্তা নদী সহ উপজেলার বিভিন্ন নদী সমুহে ভিটে বাড়ী সহ ফসলি জমি হারানো মানুষের দুঃখ কষ্ট ছিল নিত্য দিনের সঙ্গী। এক সময় চরাঞ্চল সমুহের জমিতে ফসল উৎপাদন করতে না পেরে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করেছে দিনের পর দিন। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের কারনে চরাঞ্চলে আজ ভুট্টা সহ বিভিন্ন ফসল চাষে পরিনত হয়েছে সবুজের সমারোহ। যা এক মনোরম দৃশ্য।অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় শুধু চরাঞ্চলেই নয়,উপজেলার সর্বত্র এখন চাষ হচ্ছে এই ভুট্টা। এই ভুট্টা চাষের মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে এলাকার মানুষের ভাগ্য সহ জীবন যাত্রা।  

তবে কৃষকেরা দাবী জানান এখানে যদি একটি সরকারী ভাবে ভুট্টা ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হলে তারা ন্যায্য মুল্য পাবেন। 

উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের তিস্তার চরাঞ্চল এলাকার শাহ আলম বলেন ভুট্টা চাষের মাধ্যমে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আমরা ন্যায্য মূল্য পাই না। তাছাড়া এবার সার ও বীজের দাম বেশি। ফলে আমাদের উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। 

শিক্ষক আব্দুল মালেক বলেন, ভুট্টা চাষের মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে তিস্তা ও বুড়ি তিস্তা নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চল সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। 

এসব এলাকায় মানুষ ভুট্টা সহ  বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছেন। এবং মানুষের জীবন যাত্রা অনেক উন্নত হয়েছে। তবে ভুট্টা কেন্দ্রিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়ন সহ বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন আহমেদ জানান এ উপজেলায় ভুট্টা চাষের মাধ্যমে কৃষকেরা কৃষিতে বিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা  করছে। কৃষকেরা এখন চাষাবাদে ব্যাস্ত সময় পার করছেন।  আমরা তাদেরকেসব সময় পরামর্শ দিয়ে  যাচ্ছি।