![](https://dainikbayanno.com/storage/titled-1-1.jpg)
চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানা এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, চাঁদা দাবির অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় বিএনপি নেতা মামুন আলী ওরফে কিং আলীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছিল পুলিশ। চাঁদাবাজির অভিযোগে দল থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সেই মামলায় জামিনে বের হয়ে উল্টো মামলার বাদী এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি, চুরি ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আদালতে মামলা করেছেন সেই কিং আলী।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের তৃতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর হোসেনের আদালতে মামলাটি করা হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
মামলার বিবাদীরা হলেন, পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আজাদ, একই থানার থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মানিক ঘোষ, বন্দর থানার এস আই আসাদুল হক, কিশোর মজুমদার, এস এস ট্রেডিং-এর স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম সুমন, ব্যবস্থাপক আরিফ মঈনুদ্দিন, উপ ব্যবস্থাপক মো. আমান ও সুপার ভাইজার দিদার হোসেন সজিব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় মোহাম্মদ ট্রেডিং নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, চাঁদা দাবির অভিযোগে গত বছরের ১৭ অক্টোবর বিএনপি নেতা কিং আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইসময় মোহাম্মদ ট্রেডিংয়ের কর্মকর্তা আরিফ মঈনুদ্দীন বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনার পর ১৯ অক্টোবর কিং আলীকে প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
সেই মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালে আতাহার ইশরাক সাবাব নামে একজনের কাছ থেকে চুক্তিপত্র অনুযায়ী জায়গা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছিল মোহাম্মদ ট্রেডিং। মূলত তাদের পাথরের ব্যবসা। ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কিং আলীর ভাই লোকমান আলী তাদের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে উচ্ছেদ এবং মালামাল লুটের হুমকি দেয়। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে বিএনপি নেতা কিং আলীর নেতৃত্বে অন্তত ২০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে। এরপর গালাগালি এবং একপর্যায়ে মারধর শুরু করে কর্মচারীদের। এতে কয়েকজন আহত হন।
চাঁদাবাজির সেই মামলায় জামিন পেয়ে মঙ্গলবার দায়ের করা মামলার আবেদনে কিং আলী উল্লেখ করেন, গত বছরের ১০ অক্টোবর বন্দর এলাকার জিএইচ এন্টারপ্রাইজ থেকে ২০ হাজার টন পাথর কেনেন মামুন আলী। এর বিপরীতে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন তিনি। এরপর পাথরগুলো পাহাড়তলীর টোল রোডের কিং আলী গ্রুপের ডিপোতে এনে রাখেন। একই বছরের ১৭ অক্টোবর অভিযুক্তরা ডিপোর কার্যক্রমে বাধা দেন। প্রতিবাদ করলে পাহাড়তলী থানার এসআই মানিক ঘোষ ওসির সঙ্গে দেখা করতে বলেন। সন্ধ্যায় বাদী ওসির কাছে গেলে পাথর কেনার রশিদ ও তার সকল জায়গার মূল্য ১০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে ১ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান।
চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার এবং বাদী ও মামলা সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের আসামি করার বিষয়ে জানতে চাইলে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মামুন আলী ও ওরফে কিং আলীকে কল করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তার আইনজীবী আশরাফুর রহমান জানান, বাবুল আজাদের নেতৃত্বে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ও অন্যান্যরা মামুন আলীর কাছ থেকে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা মামুন আলীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করেন।
পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আজাদ বলেন, আসামির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ পেয়ে দল থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এখন মামলা করলে আমাদের করণীয় কী থাকবে। সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবেন।
কিং আলীর করা মামলার দুই নম্বর আসামি পাহাড়তলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক ঘোষ বলেন, কিং আলী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে পাহাড়তলীর মোহাম্মদ ট্রেডিং নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জায়গা নিজের দাবি করে সেখানকার পাথর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীও ছিলেন। জরুরি সেবা ৯৯৯-এ খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় যা করণীয় তা আমি করেছি। পরে এ ঘটনায় যে মামলাটি হয়েছে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সেই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আমি। এটাই হয়তো আমার অপরাধ।
বায়ান্ন/পিএইচ