দেশে ব্যবসা করা জীবন বিমা কোম্পানিগুলো সঠিকভাবে গ্রাহকের দাবির টাকা পরিশোধ করে না- এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ফলে বছরের পর বছর দেশের বিমা খাত সাধারণ মানুষের অনাগ্রহের তালিকায় থেকে গেছে। বিমার প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। আগের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিলুপ্ত করে নতুন নামে নতুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে করা হয়েছে আইন। এরপরও বিমা দাবি পরিশোধ না করার অপবাদ রয়েই গেছে বিমা কোম্পানিগুলোর ওপর।
বিমা দাবির টাকা না পেয়ে গ্রাহকের আইনের আশ্রয় নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। একাধিক কোম্পানিতে প্রশাসক বসিয়েছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এরপরও দেশে ব্যবসা করা জীবন বিমা কোম্পানিগুলোতে সম্মিলিতভাবে প্রায় অর্ধেক দাবি বকেয়া পড়ে আছে। অবশ্য এর মধ্যে কিছু কিছু কোম্পানি সিংহভাগ বিমা দাবি পরিশোধ করেছে।
কয়েকটি কোম্পানিতে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে এবং কিছু কোম্পানি গ্রাহকের দাবির টাকা পরিশোধ করছে না- এসব বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। মূলত এ ধরনের কিছু কোম্পানির কারণে সার্বিক বিমা খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সব কোম্পানি সঠিকভাবে বিমা দাবি পরিশোধ করলে বিমার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়তো।
জীবন বিমা কোম্পানিগুলোতে পড়ে থাকা বকেয়া বিমা দাবির হারকে হতাশাজনক বলছেন খোদ এ খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দাবি পরিশোধের হার কমপক্ষে ৮০ শতাংশ হওয়া উচিত। সেখানে অর্ধেক বিমা দাবিই বকেয়া পড়ে থাকা কিছুতেই সন্তোষজনক নয়। এমন বিপুল পরিমাণ বিমা দাবি বকেয়া পড়ে থাকায় এ খাতের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা আসছে না।
বিমা দাবি পরিশোধ নিয়ে চলতি বছর বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে জীবন বিমা কোম্পানিগুলো ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫২২টি বিমা পরিশোধ করেছে। বিপরীতে বকেয়া বিমা দাবি রয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ৬১৬টি।
এ সময়ে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর পরিশোধ করা বিমা দাবির পরিমাণ ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার ৫৭৭ টাকা। বিপরীতে বকেয়া থাকা বিমা দাবির পরিমাণ ৭৮৮ কোটি ৬১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫৮ টাকা।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সব থেকে বেশি বিমা দাবি বকেয়া রয়েছে বায়রা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ এবং পদ্মা ইসলামী লাইফের। এর মধ্যে বায়রা লাইফে উত্থাপন হওয়া ১১ হাজার ৪২১টি বিমা দাবির বিপরীতে কোম্পানিটি মাত্র ১২৭টি দাবির টাকা পরিশোধ করেছে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটিতে ১১ হাজার ২৯৪টি বা ৯৯ শতাংশ বিমা দাবি বকেয়া রয়েছে।