ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ট্রেনের চাকার আকৃতির অসাধারণ প্রকৌশলবিদ্যা

মোঃ মাসুদ (রাজশাহী ব্যুরো), রাজশাহী: | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৪:৫০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

ছোটবেলায় ট্রেনে চড়ার সময় প্রায়শই অবাক হতাম এটা ভেবে যে, আচ্ছা, একটা ট্রেন বাঁক নেয়ার সময় কীভাবে তার ট্র্যাকে থাকে সমর্থ হয়? ট্রেনের চাকা তো লাইনচ্যুত হয়ে যাওয়ার কথা! আজকে কথা বলব এর পেছনের বিজ্ঞান নিয়েই।

 

রহস্য লুকায়িত আছে ট্রেনের চাকায়। প্রথম দেখায় চাকাগুলোর শেইপ সিলিন্ডার আকৃতির মনে হতে পারে, কিন্তু কখনো আরেকটু কাছ থেকে দেখতে পারলে বোঝা যাবে যে চাকাগুলো খানিকটা অর্ধ-কনিকেল শেইপের মতো। কনিকেল শেইপ হলো ত্রিমাত্রিক শেইপ যা দেখতে একটি সমবৃত্তভূমিক কোনকের ন্যায়। তো যাই হোক, এই নিবন্ধে আমি মূলত কনিকেল চাকা কেন অন্যান্য ডিজাইনের তুলনায় কার্যকরী, সেটা নিয়ে কথা বলব।

 

ট্রেনের চাকাগুলো একটি ধাতব দণ্ড দিয়ে লাগানো থাকে, যাকে বলা হয় Axle/Shaft. এর কারণেই ট্রেনের চাকাগুলো সমদ্রুতিতে ঘুরতে পারে। সরলরৈখিক ট্র্যাকের জন্য এই কনস্ট্রাকশন খাটলেও যখন বাঁক নিতে হয়, তখন এটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বক্রপথের বাইরের অংশের দৈর্ঘ্য অভ্যন্তরের তুলনায় বড়, তাই অভ‌্যন্ত‌‌রের তুলনায় বা‌হি‌রের দি‌কে চাকাকে অ‌ধিক দূরত্ব অ‌তিক্রম কর‌তে হয়। কিন্তু য‌দি উভয় চাকায় সমহা‌রে ঘুর্ণায়মান হয়, তাহ‌লে একই সম‌য়ে এক‌টি চাকার তুলনায় অপর চাকা কীভা‌বে বে‌শি দূরত্ব অ‌তিক্রম কর‌তে পা‌রে!!!

 

এজন‌্যই ট্র‌্যা‌কের ওপর চাকা‌কে ধ‌রে রাখ‌তে তা‌দের শেইপ সাধারণত ক‌নি‌কেল রাখা হয়। সুতরাং চাকার অভ‌্যন্ত‌রের প‌রি‌ধি বা‌হি‌রের তুলনায় বে‌শি।

 

রেললাইন ও চাকার স্পর্শ বিন্দুগু‌লো‌কে ‌বি‌বেচনা কর‌লে একই প‌রিমাণ কৌ‌ণিক সর‌ণের জন‌্য বড় ব‌্যাসার্ধের চাকার রৈ‌খিকভা‌বে অ‌তিক্রান্ত দূর‌ত্বের প‌রিমাণ হ‌বে বে‌শি এবং  ক্ষুদ্র ব‌্যাসার্ধের চাকার রৈ‌খিকভা‌বে অ‌তিক্রান্ত দূর‌ত্বের প‌রিমাণ হ‌বে কম।

 

এখন আসা যাক কীভা‌বে চাকাগু‌লো কে‌‌ন্দ্রের দি‌কে হে‌লে থা‌কে সেই ব‌্যাপার‌টি নি‌য়ে। যখন চাকার ভর‌কেন্দ্র খাড়া নি‌চের দি‌কে কাজ ক‌রে, তখন চাকার ওপর ক্রিয়াশীল বল দুই টাই‌পের হ‌য়ে থা‌কে। মহাকর্ষ বল যা পৃ‌থিবীর কেন্দ্র বরাবর খাড়া নি‌চের দি‌কে কাজ ক‌রে; আর রেললাই‌নের পা‌তের অ‌ভিলম্ব বরাবর প্র‌তি‌ক্রিয়া বল। 

 

সুতরাং বলদ্বয়ের আনুভূমিক উপাংশ একে অপরকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এটা তো গেল সরলরৈখিকভাবে গতিশীল ট্রেনের বিষয়টা।

 

কিন্তু যখন চাকাগুলো ধরি ডান দিকে কাত হয়ে গেল। ফলে অক্ষগুলোও tilted হয়ে যাবে, সেই সাথে Normal Force (Perpendicular to the surface of the cone) tilt হয়ে যায়। উপাংশে বিভাজন করে লব্ধি বের করলে দেখা যাবে যে, নেট বল বাম দিকে কাজ করছে। তাই Self-Centering Force (Often called centrifugal force, which is a fictitious force) এর কারণে wheel গুলো আবার ট্র্যাকে ফিরে আসে।তাই বামদিকে টার্ন নিতে চাইলে ডানে এবং ডানে টার্ন নিতে চাইলে বামে এই অলীক বল কাজ করবে।এই বলটাই মূলত কেন্দ্রমুখী বলের যোগান দিয়ে থাকে।বর্তমানে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে ট্র্যাকের ওপর থেকে ট্রেনের পড়ে যাওয়া ঠেকাতে  চাকার ওপর Flanges লাগানো হয়ে থাকে।

এভাবেই কনিকেল শেইপের জ্যামিতি ব্যবহার করে ট্রেন বাঁক নেওয়ার সময়ও কাত হয়ে ট্র্যাক থেকে পড়ে যায় না।