বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের ঝিকরগাছা ব্রীজে ঠিকাদারের অপরিকল্পিত ও উদাসীন ভাবে কাজ করার কারণে ঘন্টার পন ঘন্টা পাঁচ কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়েছে। যশোরের ঝিকরগাছার গদখালীর হাজিরআলি থেকে ঝিকরগাছা লাউজানি পর্যন্ত এ দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার যানজট। পাঁচ কিলোমিটার অংশজুড়ে পণবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, বাসসহ ব্যক্তিগত গাড়ির জট থাকছেই প্রতিদিন। এর ফলে ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
বেনাপোল বন্দর থেকে ট্রাক ড্রাইভাররা মালামাল নিয়ে ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত জেলাগুলোতে যেতে গিয়েও পড়ছে চরম বিপাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে বন্দর থেকে নিয়ে আসা গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নিয়ে। রাস্তার পাশে যানজটের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ট্রাক থেকে মালামাল চুরি হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক ট্রাক চালক। এ দুর্ভোগের কারণে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
বাংলাদেশের দার হিসেবে পরিচিত দেশের প্রধান ও সর্ববৃহৎ বন্দর বেনাপোল স্থলবন্দর। এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৩ হাজার পাসপোর্টযাত্রী ভারতের যাতায়াত করে থাকেন। তবে মহামারী করোনাভাইরাসে সংক্রমণের কারণে যাত্রী যাতায়াতে কিছুটা ভাটা পড়লেও এ বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের অধিকাংশ কলকারখানার কাঁচামাল আসে ভারত থেকে। এক্ষেত্রে আমদানি ও রপ্তানি কোনো প্রভাব পড়েনি। এ বন্দর থেকে গড়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৫৫০ ট্রাক আমদানিকৃত মালামাল নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে থাকে। যে কারণে বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের গুরুত্ব অপরিসীম।
রবিবার দুপুরে ঝিকরগাছা ব্রিজের কাছে গিয়ে দেখা যায়, যানজটের কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রী ও চালকরা। দীর্ঘ সময় রাস্তার মধ্যে আটকা পড়া এক ট্রাক চালক অন্য এক চালকের সঙ্গে বাকবিতন্ডে জড়িয়ে পড়েন। এ চরম ভোগান্তিতে এলাকায় কোন ট্রাফিক পুলিশ বা থানা পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসা নির্মল ঘোষ বলেন, আমি ক্যান্সারের রোগী। গত দুই মাস ধরে ভেলোরে চিকিৎসা নেয়ার পরে বাংলাদেশে ফিরেছি। বেনাপোলে আসার পর সোহাগ পরিবহনের একটি বাস যোগে ঢাকাতে ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু বেনাপোল থেকে ঝিকরগাছার গদখালি পর্যন্ত ভালোভাবে এসেছি। এরপর আমাদের বাসটি আর সামনে যেতে পারছে না। শুনেছি সামনে জ্যাম লেগেছে। বাসের মধ্যে প্রায় দেড় ঘন্টা বসে আছি। কিন্তু এখনো জ্যাম ছাড়ায়নি। এটা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটা সড়ক। এ সড়কের যদি এ অবস্থা থাকে তাহলে কিভাবে রোগীরা ভারতে যাতায়াত করবে। তাই তিনি দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন।
বেনাপোল থেকে মালামাল নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়া ট্রাক চালক নজরুল ইসলাম বলেন, রবিবার সকালে বেনাপোল বন্দর থেকে মালামাল নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছি। ঝিকরগাছার গদখালী হাজিরালীতে আসার পরে জ্যামে আটকে আছি। ঝিকরগাছা থানার সামনে নতুন ব্রিজের দুই মাথা বন্ধ করে কাজ করার কারণে এ যানজট তৈরি হয়েছে। এটি ঠিকাদারের উদাসীনতা ছাড়া আর কিছুই না। ঠিকাদার ব্রিজের কাজ সম্পন্ন করার আগেই ব্রিজে যান চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। তাছাড়া ব্রিজটি সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি হওয়ার আগেই পুরাতন ব্রিজটি ভেঙে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালীপনার কারণে হাজার হাজার যাত্রী ও সড়কে চলাচল যানবাহনের চালকদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে যশোর জেলার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর খন্দকার মশিউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ঠিকাদার কৃত্রিমভবে যানজট তৈরি করেছে। ব্রিজ ও রাস্তায় যদি কাজ করতে হয় তাহলে ঠিকাদারদের নিজস্ব লোক ওখানে দিবে। কোন ভাবেই যেন যানজট না হয়, সেটা তাদের তদারকি করার দায়িত্ব। এরপরেও যদি কোন সমস্যা হয়, তাহলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লোকাল থানা কে জানাবেন। লোকাল থানা সমস্যা নিরসনের জন্য ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
ব্রিজের প্রজেক্ট ম্যানেজার আশরাফুজ্জামান বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। তাই বিষয়টি ভালোভাবে বলতে পারবো না। তবে যেটা শুনেছি ব্রিজটি ডিজাইন করার সময় কিছু সমস্যা ছিল। যে কারণে কাজটা করার প্রথম থেকে কিছুটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যানজটের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে ব্রিজের পাশে আরেকটা ব্রিজ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। পাশ দিয়ে আরেকটা ব্রিজ হলে যানজট সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগ তৈরি হতো না। দ্রুত কাজ করতে গিয়ে এ জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
যশোর সড়ক ও জনপদের নিবার্হী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিষয়টি একটা প্রকল্পের অধীনে। প্রকল্প কর্মকর্তা জনদুর্ভোগ তৈরি করে রাস্তা নির্মাণ করছে কিনা সেটি ওই প্রকল্পের কর্মকর্তা বলতে পারবেন। আমাদের তরফ থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে কোন ধরনের জনদুর্ভোগ তৈরি করে যেন কোন কাজ না করা হয় বলে জানান এ কর্মকর্তা। #