৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। বেলা তিনটায় ওই খবর প্রচার হয়। রাস্তায় ঢল নামে ছাত্র-জনতার। বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা পৃথকভাবে বিজয় মিছিল বের করে। সেদিন বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদ পর্যায়ে দেখা গিয়েছিল বিএনপির জনপ্রিয়তা। যে জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটার ছিল আকাশচুম্বি। সেদিনের প্রতিটি বিজয় মিছিলে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই সেই বিজয় মিছিল আর আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। অন্তত ডজনখানেক কারণে বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকেন সাধারণ মানুষ।
বিএনপিকে নিয়ে নানান সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেন সাধারণ মানুষ। সপ্তাহ দশদিনের মাথায় দলের নীতি নির্ধারকদের টনক নড়ে। বিশেষ করে দলের হাই কমান্ড কঠোর নির্দেশনা দিতে থাকেন দায়িত্বশীলদের প্রতি। দায়িত্বশীলরা নড়েচড়ে বসেন। হাইকমান্ডের কঠোর নির্দেশনার কথা পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েও জানিয়ে দেন। তারপরও দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়-এমন কাজ থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না দুর্বৃত্তদের। বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
সুনিদির্ষ্ট অভিযোগে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু দলীয় পদ নেই যেসব দুর্বৃত্তের তাদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নিতে পারছে না বিএনপি। ফলে দিন দিন দুর্বৃত্তদের দুর্বৃত্তপনা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ওই দুর্বৃত্তপনা সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে পথ হারাচ্ছে বিএনপি। ধরে রাখতে পারছে না আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা। দলের নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে প্রচন্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিএনপির নিম্নমুখি জনপ্রিয়তা নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়েছে। দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের সাথে কথা হয়েছে। পাওয়া গেছে প্রায় একডজন কারণ। ৫ আগস্টের পর সিলেটসহ সারা দেশে অসংখ্য মামলা হয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশই হত্যা, হামলা, ভাঙচুর লুটপাটের। সিলেটে ঢালাওভাবে অনেক মামলা হয়েছে। এসব মামলাকে কেন্দ্র করে অনেক মামলা বাণিজ্য হয়েছে। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে দুর্বৃত্তরা কামিয়েছেন দুই হাতে। এই মামলা বানিজ্য করতে গিয়ে নিরিহ লোকজনকে আসামি করেছে দুর্বৃত্তরা। এমন কি বিএনপির দলীয় কর্মী ও সাংবাদিকও আসামি হয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে কর্মী আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তিনি এখন মামলার আসামি হয়ে আত্ম’গোপনে। এসব ঘটনায় সিলেটজুড়ে ছিছি শোনা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্ট বিকেল তিনটার পর সিলেট নগরীতে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। এ থেকে বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীর বাসা বাড়িও রক্ষা পায়নি। একজন কর্মী জানান, ৫ আগস্ট বেলা তিনটার পর তিনি নগরীর কোর্ট পয়েন্টে ছুটে যান। অংশ নেন বিজয় মিছিলে। বিজয় মিছিলে থাকতেই তিনি খবর পান তাঁর বাসায় হামলা হয়েছে। হামলা করেছে বিএনপি নামধারী দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি বিএনপির ওই কর্মীর জন্যে দু:খজনক। এরকম অনেক ঘটনা ঘটেছে সিলেট নগরীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায়।
বিএনপির দলীয় কর্মীরা জানান, ৫ আগস্টের পর দলীয় দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে ভীড়তে পারেন না নিবেদিত প্রাণ কর্মীরা। দায়িত্বশীল নেতার অফিস বা বাসায় গেলে দেখা যায় চাটুকার পরিবেশিষ্ট হয়ে আছেন নেতা। এসব চাটুকারকে ডিঙিয়ে নেতার কাছে যাওয়া যায় না। যে কর্মী মাঠে ময়দানে ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, নির্যাতন আর কারাভোগের শিকার হয়েছেন সেই কর্মী নেতার কাছে ভিড়তে না পেরে ফিরে আসেন।
সুযোগ সন্ধানী, বসন্তের কোকিলরা এখন বিএনপির নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে দাপট দেখিয়ে বেড়ায়। জন্ম দেয় অনেক অপকর্মের। এসব দুর্বৃত্তের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দলের ভাবমূর্তি।
অনুপ্রবেশকারীদের ধাক্কাও সামাল দিতে পারছেন না দলের প্রকৃত কর্মীরা। অনুপ্রবেশকারীদের ঠেলায় ছিটকে পড়েন দলের প্রকৃত কর্মীরা। কতিপয় নেতাও এই অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিচ্ছেন। গ্রুপ শক্তিশালী করতে কতিপয় নেতা ওই পথ বেছে নিয়েছেন। এসব অনুপ্রবেশকারী দলের ট্যাগ ব্যবহার করে অপকর্ম করছে, আর বদনাম হচ্ছে বিএনপির-এমন তথ্য জানিয়েছেন দলটির কর্মীরা।
দলীয় কর্মীরা জানান, বিএনপির মুখোশ পড়ে গত ১৭ বছর কতিপয় দুর্নীতিবাজ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে তারা নির্বিঘ্নে তাদের অপকর্ম চালিয়ে গেছে। এখন তারা আবার বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে অপকর্ম শুরু করেছে। এর দায়ভার বহন করতে হচ্ছে বিএনপিকে।
দলীয় কর্মীরা জানান বিএনপির নামের সাথে চোরাচালান সিন্ডিকেট যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। সিলেট সীমান্তজুড়ে গত কয়েক বছর ধরে চোরাচালানের রমরমা ব্যবসা চলছে। প্রতিদিন শতশত ট্রাক ভারতীয় চিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ৫ আগস্টের আগে ওই চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করতো ছাত্রলীগ। ৫ আগস্টের পর ওই চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে নতুন একটি দুর্বৃত্ত দল। এই দুর্বৃত্ত দল নিজেদেরকে যুবদল ও ছাত্রদলের বলে পরিচয় দিচ্ছে। ফলে বিএনপির নামের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে চোরাচালান। যা সিলেটের সর্বত্র প্রচার পেয়েছে।
বিএনপির দলীয় কর্মীরা জানিয়েছেন, ওইসব পরিস্থিতি দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। যার জন্যে দলের ভাবমূর্তি উজ্জল হচ্ছে না। উল্টো দলের যে আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা ছিল, তাতে ধস নামছে।