দুইদিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে আবারও লাগামহীন পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছুঁয়েছে প্রায় ১০০ টাকা।
গত শনিবার (১৯ আগস্ট) হঠাৎ পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় ভারত। এতেই যেন লঙ্কাকাণ্ড দেশের পেঁয়াজের বাজারে। শুল্কযুক্ত পেঁয়াজ বাজারে না আসতেই রাতারাতি বেড়ে গেছে পণ্যটির দাম। এতে জিম্মি দশা ক্রেতাদের।
সোমবার (২১ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়তেই পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশি পেঁয়াজের দামও ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। এদিকে খুচরায় পেঁয়াজের দর ছুঁয়েছে প্রায় ১০০ টাকা।
এদিকে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ শনিবারও (১৯ আগস্ট) প্রতি কেজির দাম ছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা।
ব্যবসায়ীরা সরবরাহের ঘাটতির কথা বললেও কারওয়ান বাজারের আড়তগুলোতে সরেজিমনে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত দেখা গেছে। ভারত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেও দেশের বাজারে এখনও আগের আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
রোববার (২০ আগস্ট) কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন,
পেঁয়াজ রফতানিতে ভারত শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশের জন্য ভয়ের কোনো কারণ নেই। ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হলেও, এখন পর্যন্ত দেশে এসেছে মাত্র তিন লাখ টন। এতে পেঁয়াজের এতই সংকট দেখা দিলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এতদিন চুপ করে বসে থাকত না। ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও দেশে দামে তেমন প্রভাব পড়বে না।
এছাড়া দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল ফরিদপুর, পাবনার কৃষকদের কাছে যথেষ্ট পেঁয়াজের মজুত আছে বলে জানান মন্ত্রী।
এরপরও ঠিক কী কারণে বাড়ছে দাম? সদুত্তর নেই ব্যবসায়ীদের কাছেও। এক পেঁয়াজ বিক্রেতা বলেন, দেশে আমদানি কম, তাই দাম একটু বেশি। তাছাড়া কৃষকও পর্যাপ্ত ফসল উৎপাদন করতে পারছে না। ভারতীয় পেঁয়াজের রফতানির ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তাই দাম বেড়েছে।
বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রির বিষয়ে আরেকজন বিক্রেতা বলেন,
দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বেচাবিক্রি কমে গেছে। এখন প্রতি কেজি ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে। আমাদেরও তো সংসার আছে। আমরা তো লাভ না হলে বিক্রি করব না।
তবে শুল্কযুক্ত পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম আরও বাড়বে বলে জানান বিক্রেতারা। অন্যদিকে শুল্ক আরোপের খবরেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না ভোক্তারা। ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
বাজারে এসে নাভিশ্বাস এক ক্রেতা বলেন, মাত্র ২ দুইদিনের ব্যবধানে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম এত বেশি বেড়ে যাওয়া অনেকটা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম যে হারে বেড়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। আরেকটু কমলে ভালো।
সবশেষ ৩৮ থেকে ৪৬ টাকায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। শুল্ক আরোপের পর কেজি প্রতি ৫৩ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। এতে দাম আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা তাদের।
শনিবার (১৯ আগস্ট) ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাতে এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। তাই স্থানীয় পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে ও সরবরাহ বাড়াতে পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে দিল্লি সরকার। যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। এ নির্দেশনা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এদিকে সোমবার (২১ আগস্ট) সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পচনশীল হওয়ায় ও সংরক্ষণ করতে না পারায় দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ উৎপাদন ও সরবরাহ করা না গেলে, সিন্ডিকেট ভেঙে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
তবে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও; সেটি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছাবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন,
দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেঁয়াজ রফতানির ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপ করেছে ভারত। এতে বাংলাদেশে আমদানি কম হয়েছে। তাই দেশেও এর প্রভাব পড়ছে।
এছাড়া ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীকে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন হলে মিশর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। পাশাপাশি গ্রীষ্মকালেও পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি করা হবে।