জামালপুরে নরমাল ডেলিভারির চেয়ে হরহামেশাই হচ্ছে সিজারিয়ান অপারেশন। নরমাল ডেলিভারিতে সরকারের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আগ্রহ নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। প্রসূতিরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসব ব্যথা নিয়ে গেলে তাদের নরমাল ডেলিভারির চেয়ে সিজারের দিকেই কৌশলে ঠেলে দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এক শ্রেণির দালাল প্রসূতিদের সাধারণ সেবা থেকে বঞ্চিত করে ক্লিনিকমুখী করছে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠা বেসরকারি হাসপাতালের নিয়োগকৃত মাঠকর্মীরা প্রতিটি সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বেতনভিত্তিক নিয়োজিত থাকে। তারাই প্রসূতিদের ক্লিনিকমুখী করে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, সাত উপজেলার ৬৮ ইউনিয়নের মধ্যে ২৮টিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারির সরকারি ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া জেলা শহরে জেনারেল হাসপাতালসহ সাত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও নরমাল ডেলিভারির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারি নিশ্চিতে ডিমান্ড সাইড ফাইন্যান্সিং (ডিএসএফ) শীর্ষক প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পের অধীন মাসিক নরমাল ডেলিভারি লক্ষ্যমাত্রা ১০০ ভাগ। তবে বাস্তবায়ন হচ্ছে ৭৮-৯০ ভাগ।
অপরদিকে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক প্রসূতিসেবা জোরদার করণে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সার্বক্ষণিক সেবা সংক্রান্ত সঠিক পরিসংখ্যান সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি।
তবে জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, উপজেলার আট ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টিতে সার্বক্ষণিক প্রসব সেবায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রসব পূর্ব সেবা পেয়েছেন ৪২০ জন, কিন্তু স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে মাত্র ১২ জনের। অক্টোবরে প্রসব পূর্ব সেবা ৩২০ জন পেলেও স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে মাত্র ছয়জনের। সর্বশেষ নভেম্বরে প্রসব পূর্ব সেবা পেয়েছেন ২৭১ জন। কিন্তু স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে মাত্র ১৩ জনের।
বাস্তবায়নের এ হার বিগত অন্যান্য মাসগুলোতে আরও নাজুক। প্রসব পূর্ব সেবার তুলনায় এত কম স্বাভাবিক প্রসব হলেও বাকি প্রসূতিদের কোনো পরিসংখ্যান নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। সরিষাবাড়ী উপজেলার মতোই জেলার অন্য ছয় উপজেলার অবস্থা একই রকম বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রসূতিদের ক্লিনিকমুখী করছে মাঠকর্মীরা
এ বিষয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মাজহারুল হক চৌধুরী বলেন, সংখ্যাটা অবশ্যই সকলে মিলে বৃদ্ধি করতে হবে, সেটাই করা উচিত। তবে অনেক সেন্টারে ডেলিভারিতে পারদর্শী লোক তেমন নেই।
জানা গেছে, জেলায় নিবন্ধিত প্রাইভেট ক্লিনিকের সংখ্যা ৪৩টি। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে নিবন্ধনের বাইরে প্রায় দ্বিগুণ ক্লিনিক। সব ক্লিনিকই প্রসূতি সেবার নামে গলাকাটা ব্যবসা করে থাকে। ক্লিনিক স্থাপনের ক্ষেত্রে পৃথক নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থা রাখার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও মানছে না কেউ। হাতেগোনা কয়েকটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভালো সেবা মিললেও অধিকাংশই বাণিজ্য নির্ভর। প্রতিটি ক্লিনিকের মাঠকর্মীরা ওঁৎ পেতে থাকে সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে। এমনকি সরকারি চিকিৎসক ও অসাধু কিছু নার্স কমিশন ভিত্তিতে প্রসূতিদের স্থানান্তর করেন ক্লিনিকে। এসব বন্ধে জেলা সিভিল সার্জন বার বার অভিযান চালালেও কাঙ্ক্ষিত সমাধান মেলেনি।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস বলেন, সবচেয়ে নরমাল ডেলিভারি বেশি হয় বকশিগঞ্জে, এরপর ইসলামপুরে। সবচেয়ে সিজার বেশি হয় সরিষাবাড়ীতে। আমরা পর্যায়ক্রমে সব উপজেলায় সরকারের বেঁধে দেওয়া নরমাল ডেলিভারির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কাজ করছি।