ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ফুলবাড়ীয়ায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাঠকর্মীর বিরুদ্ধে কিস্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

মোঃ হাবিব, ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) : | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৪ জুলাই ২০২৪ ০৮:২০:০০ অপরাহ্ন | ময়মনসিংহ

গ্রাহকদের কিস্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা পল্লী সঞ্চয় (তৎকালীন একটি বাড়ি, একটি খামার) ব্যাংকের মাঠকর্মী সনজিব চন্দ্র রবিদাসের বিরুদ্ধে। বর্তমানে সে ভোলায় কর্মরত। বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক, মাঠকর্মীদের অনিয়ম-দূর্ণীতির কারণে বর্তমান এ শাখার কার্যক্রমে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে  গ্রাহকরা।

আসমা আক্তার নামের এক গৃহিণীর জানান, পরিবারের দারিদ্র্যতা আর অভাব ঘুচিয়ে নিতে উপজেলার চৌদার গ্রামে তিনিসহ অনেক নারীই পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক থেকে ২০১৭ সালে ২০ হাজার  টাকা ঋণ নেন। প্রথম মাসে ১৮ শত টাকা কিস্তি ২০০ ও  টাকা সঞ্চয় দেন সনজিব নামের মাঠকর্মীর কাছে । ঐ বছরের শেষের দিকে একেবারে ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বসাকুল্যে ২৩ হাজার ৬০০ টাকা দেন তিনি। টাকা নিয়ে হিসাব বইয়ে স্বাক্ষরও করেছেন সনজিব । পরে  টাকা পরিশোধ হলে মামলার ভয় দেখিয়ে সেই হিসাব বই নিয়ে যান দায়িত্বরত আরেক মাঠকর্মী। সম্প্রতি ঋণ পরিশোধের ৫ বছর পর হঠাৎ আসমা জানতে পারে অফিসে তার টাকা জমা হয়নি । শুধু আসমা আক্তারই নন এমন আরও অনেক সদস্যই এ মাঠকর্মীর প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলেও জানা গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে,  চৌদার কেন্দ্রের ২০ এর অধিক সদস্যদের কাছ থেকে কিস্তি আদায় করেছেন সনজিব।  সদস্যরা নিয়মিত তার কাছে কিস্তি জমা দিলেও তিনি তা অফিসে জমা দেননি। টাকা পরিশোধ শেষে  সদস্যদের হিসাব বইও হাতিয়ে নেন তিনি। কয়েকদিন পূর্বে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পাওনাকৃত টাকা আদায়ে কিস্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। সদস্যরা টাকা পরিশোধ করে ফেলেছেন বলে জানালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এতে করে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। উত্তোলনকৃত ঋণের টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে  গ্রাহকের টাকা উত্তোলন করার পর পাশবই ব্যাংকে প্রদর্শনের নিয়ম থাকলেও এসব পাশবই ব্যাংকে প্রদর্শন না করেই আত্মসাৎ করেন গ্রাহকের পরিশোধ করা ঋনের বিপুল পরিমান অর্থ। তিনি আরো বলেন, আমার লোনের টাকা পরিশোধ শেষে হিসাব  বই অফিসে নিয়ে এসেছে।  পরে আর আমি কোন টাকা নেয়নি। হঠাৎ জানানো হয় আমার টাকা পরিশোধ হয়নি। এখন আমার সংসার ভাঙার উপক্রম হয়ে গেছে। তার হিসাব বই থেকে পিন খুলে পাতা তুলে ফেলারও অভিযোগ করেন তিনি। এসময় ফাতেমা আক্তার নামে আরেক সদস্য জানান,ঋণ পরিশোধ শেষে আমার সঞ্চয়ের ৯ হাজার টাকা জমা হয়। আমাকে ঋণ না দিয়ে আমার স্বাক্ষর নিয়ে সনজিব সঞ্চয়ের ৯ হাজার টাকা দিয়েছে। এখন অফিস বলতেছে আমার কাছে তারা ৪০ হাজার টাকা পাবে। এখন আমি কেমনে কি করমু?। শামসুন্নাহার, শিউলি ও খাদিজাসহ আরও অন্যান্য সদস্যরা জানান, তারা অনেক আগেই লোনের পুরো টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে । তবুও তাদের বকেয়া রয়ে গেছে। বকেয়া পরিশোধ না করলে ম্যানেজার আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন। টাকা একবার পরিশোধ করেছি তা সনজিব নাকি জমা দেয়নি। এ নিয়ে অডিট হলেও আমাদের কিছু জানানো হয়নি। 

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সনজিবের মুঠোফোনে ব্যবহৃত নাম্বারে বারবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

পল্লি সঞ্চয় ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত মাঠকর্মী সনজিবের বিরুদ্ধে ৩ মাস পূর্বে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।  তিনি সাময়িক বরখাস্তও হয়েছিলেন।  বর্তমানে সে ভোলায় কর্মরত আছে । তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট খুব দ্রুত জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, সনজিব প্রতারণা করে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছেন। যে-সকল সদস্যদের পাশ বইয়ে সনজিবের  স্বাক্ষর আছে তারা টাকা ফেরত পাবে। 

 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাবেরী জালাল বলেন, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে অফিসারকে সাথে নিয়ে যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।