ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু সেতুর ওয়েট স্কেলের মাপে নয় ছয়ের অভিযোগ

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৪:৪৩:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

বঙ্গবন্ধু সেতুর ওয়েট স্কেলের মাপে নয় ছয়ের অভিযোগ তুলেছেন ট্রাক চালকরা। এর ফলে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলরত প্রায় প্রতিটি ট্রাকই ওয়েট স্কেলের মাপে নয় ছয়ের শিকার হওয়াসহ হচ্ছেন নানা ধরণের হয়রানীর শিকার। এতে চালকদের সময় নষ্টের সাথে সাথে বেড়েছে খরচ।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাড়ের ওয়েট স্কেল এলাকায় চালক ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়েট স্কেলে কর্মরত এক কর্মচারির বক্তব্যে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর ওয়েট স্কেলে ২৪ ঘন্টায় প্রায় ৬ হাজার ট্রাকের ওজন পরিমাপ হয়। প্রতিটি ট্রাকের স্কেল বাবদ নেয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। ওয়েট স্কেলে ২৪ ঘন্টায় গড়ে ৩ লাখ টাকা পাচ্ছেন সেতু কর্তৃপক্ষ। 

চট্টগ্রাম থেকে বগুড়াগামী ট্রাক চালক মেহেদী হাসান তারেক এর অভিযোগ, আমি প্রায় ১২/১৩ বছর যাবৎ বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে চলাচল করে আসছি। আমার ট্রাকসহ মালের ওজন ২২টন। চট্টগ্রাম থেকে রওনা দেয়ার পর দারোগ হাট ও দাউদকান্দি সেতুর দুটি স্কেলে মাপা হয়েছে। এরপরও অসংখ্যবার বঙ্গবন্ধু সেতুর স্কেলে আমার ট্রাকের ওজন বাড়তি দেখানো হয়েছে। এ কারণে ৫০ টাকা জরিমানার একটি স্লিপ দিয়ে ও প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের সেতুর নির্ধারিত লোড আনলোড পয়েন্টে নিয়ে অন্য ট্রাকের মাধ্যমে অতিরিক্ত ওই মালামাল সেতু পশ্চিম পাড়ে নেয়া হয়েছে। সেতুর স্কেল ম্যানের সহযোগি অতিরিক্ত ৪-৫ টন মাল পাড় করতে ৪-৫ হাজার টাকা নিচ্ছেন। এর ফলে তাদের অতিরিক্ত গুণতে হচ্ছে মাল পরিবহনের খরচ, জরিমানা ৫০ টাকা আর বাড়তি তেল। এছাড়াও ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটের দূর্ভোগ তো রয়েছেই।

বাংলাবান্ধা থেকে ঢাকাগামী ট্রাক চালক লাল চান এর অভিযোগ, আমার ট্রাকে মাল আছে ১৫ টন আর গাড়ী ওজন সাড়ে ৬ টন। আমার ট্রাকসহ ২২টন মাল পরিবহনের অনুমতি আছে। তবে এরপরও আমার স্কেল হয়নি বলে আমাকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কারণে আমাকে আবার প্রায় ২-৩ কিলোমিটার ঘুরে দ্বিতীয় বার স্কেল করতে হয়েছে। এর ফলে আমার বাড়তি সময় লাগলো প্রায় ১ ঘন্টা আর তেল খরচ হলো। তবে স্কেল না হওয়ার কারণে তাকে আর জরিমানা টাকা দিতে হয়নি।

কেন এভাবে হয়রানি করা হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটি সেতু কর্তৃপক্ষ জানেন। তবে স্কেলের জন্য প্রতি গাড়ি থেকে ৫০ টাকা পাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মচারি জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাড়ের ওয়েট স্কেলে প্রায় প্রতিটি ট্রাকের পরিবহনকৃত মালামালের ওজন নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি ট্রাকেই বাড়ছে কমপক্ষে হাফ থেকে এক টন বা এর চেয়েও বেশি ওজন। পরিবহনের আগে স্ট্যান্ডিং স্কেলে ট্রাকসহ মালামালের ওজন হয়ে আসলেও সেতুর রার্নিং স্কেলে সেই ওজনের থেকে কমপক্ষে হাফ থেকে এক টন বা এর চেয়েও বেশি ওজন বাড়ছে। রার্নিং অবস্থার কারণ অথবা ট্রাকের ঝাঁকির কারণে ওই ওজন বাড়ছে বলে ধারণা করছেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব ট্রাক লোড আনলোডের শ্রমিক সর্দার জাহাঙ্গীর তালুকদার জানান, সেতু পারাপারে পন্যবাহী ট্রাকের অতিরিক্ত মালামাল লোড আনলোডের জন্য সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে একটি পয়েন্ট পরিচালিত হয়ে আসছে। পয়েন্টটি ইজারা বা ভাড়া দেয়া হয়নি। তবে আমি প্রায় ১২/১৩ বছর যাবৎ সেতুর ওই পয়েন্টে লোড আনলোড কাজের শ্রমিক সর্দার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম অংশে লোড আনলোডের কাজে আমাদের প্রায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করছে। সেতুর নির্ধারিত ওজনের থেকে ট্রাকে আনা বেশি মালামাল আমরা লোড আনলোড করি। পূর্ব পাড়ের পয়েন্টে সেতু পারাপারের জন্য থাকা খালি ট্রাকে বেশি মালামাল আনা ট্রাকের মালামাল আমরা তুলে দেই। এই লোড আনলোডের জন্য আমরা শুধু মজুরী পাই। এছাড়া ওয়েট স্কেলের বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না বলেও জানান তিনি।

ট্রাকে পরিবহনকৃত মালামালের ওজন নিয়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু সেতু ট্রাফিক সিকিউরিটি ম্যানেজার লে. কমান্ডার (অব:) মাহফুজুর রহমান। তবে বিষয়টি তার অধিনস্থ না হওয়ায় তিনি অভিযোগ বিবিএ কর্তৃপক্ষকে জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। 

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির বাপ্পি জানান, আমরা এ ধরণের কোন অভিযোগ পাইনি। দাউদকান্দি বা অন্যান্য সেতুর ওয়েট স্কেল আমাদের মানের সমতুল্য নয়। আমাদের সেতুতে ব্যবহৃত হচ্ছে রার্নিং স্কেল। এই স্কেলে দাঁড়ানো ট্রাকের মাপের ওজন থেকে কিছু ওজন বাড়তে পারে এটা বিশ^ স্বীকৃত। এছাড়াও বাংলাদেশের ফ্যাক্টরী গুলোতে ব্যবহৃত ওয়েট স্কেল গুলোতে ট্রাক গুলোকে ধামিয়ে মাপা হয়। এ কারণে আমাদের সেতুর রার্নিং স্কেলে সেই মাপে কিছু ভিন্নতা পাচ্ছেন চালকরা।

তিনি আরও জানান, সেতুর স্কেল তদারকির জন্য প্রকৌশলী নিযুক্ত আছেন। তেমন কোন পার্থক্য দেখলে অবশ্যয় তারা বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষকে অবগত করবেন।