বাঁশখালীর খানখানাবাদ ইউনিয়নে সরকারি ভিজিএফ চাল চুরি ঠেকালেন এমপি মুজিবুর রহমান সিআইপি। এমপির অভিযানের পর চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার গায়েব করা চাল ফেরৎ এনে জেলেদের মাঝে বিতরণের ব্যবস্থা করলেও এনিয়ে বাঁশখালী জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে গতকাল বুধবার সকালে এমপি মুজিবুর রহমান সিআইপির নেতৃত্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযানে এক ট্রাক সরকারী ভিজিএফ চাল জব্দ করা হয়েছে। একই সাথে সরকারী ভিজিএফ চাল আত্মসাতের অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন এমপি। এই ঘটনায় বাঁশখালী জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ এমপি মুজিবুর রহমানের ভূমিকার প্রশংসা করার পাশাপাশি চেয়ারম্যানের চাল চুরির ঘটনায় নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়েছে।
জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার খুব ভোরে এমপি মুজিবুর রহমান সিআইপি খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের যান। সেখানে আগে থেকেই জেলেদের মাঝে ভিজিএফ চাল বিতরণের কথা ছিল। খানখানাবাদ ইউনিয়নের ১ হাজার জেলের জন্য মাথাপিছু ৫৬ কেজি করে ৫৬ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। ওই চাল ১০ জুন রিসিভ করে ইউনিয়ন পরিষদ। গতকাল এই চাল বিতরণের সময় সেখানে আচমকা হাজির হন বাঁশখালীর এমপি মুজিবুর রহমান সিআইপি। এসময় ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্টরা বিতরণ কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে তড়িঘড়ি করে চালের বস্তা খোলা শুরু করেন।
এমপি মুজিবুর রহমান চালের বস্তা খোলার আগে সব বস্তা গুণে তারপর বিতরণের কথা বলেন।
ঘটনাস্থলে উত্তেজিত জনতার উদ্দেশ্য এমপি মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি বাদী, পরিষদ বিবাদী, ফয়সালা দিবে আদালত।’ এই কথা বলার পর উত্তেজিত জনতা শান্ত হন।
তিনি জনগনের সাথে কথা বলেন এবং গুদামের চাল গুনে দেখেন। গননার পর দেখা যায় ৫৬ টন চাল থেকে ১৬ টন চাল গায়েব। এই বিষয়ে এমপি মুজিবুর রহমান সিআইপি তাদের কাছে কৈফিয়ত চাইলে পরিষদের পক্ষ থেকে তারা তাৎক্ষনিক কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। এসময় এমপি মুজিবুর রহমান জেলের চাল আত্মসাতের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় তিনি সেখানে ট্রাক ভর্তি ৫ টন চাল জব্দের নির্দেশ দেন। পরে সেগুলো থানায় নিয়ে আসা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খানখানাবাদ ইউনিয়নে ১ হাজার জেলে নেই। চেয়ারম্যান মেম্বারদের আত্মীয় স্বজন এবং বড়লোকদের নাম জেলে হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত করলে বিষয়টি বেরিয়ে আসবে বলে জানান এলাকাবাসী।
খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার জানান, ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউনের ধারণ ক্ষমতা ৩৫ টন। সেখানে ৪০ টন চাল ১০ তারিখ রিসিভ করে পরিষদে নিয়ে আসা হয়। বাকী ১৬ টন চাল বুধবার আসার কথা। ভোরে এমপি মহোদয় ঘটনাস্থলে যখন আসেন তখনও একট্রাক চাল খাদ্যগুদাম থেকে খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে আসেন। তিনি জানান, ৫৬ টন চাল বুধবার সারাদিন বিতরণ করা হয়েছে এখনো (রিপোর্ট লেখার সময়) বিতরণ চলছে। চাল আত্মসাৎ কিংবা চাল চুরির প্রশ্নই আসেনা। একটি মহল এমপি সাহেবকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের হয়রানি করেছে।
বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমদ জানান, খানখানাবাদ ইউনিয়নে চাল বিতরণে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর রয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবেন। চাল বিতরণের সময় পুলিশী সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমার পুলিশ সবসময় সেই সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। চাল আত্মসাৎ কিংবা কোন অনিয়ম সংশ্লিষ্ট দফতর থানা পুলিশকে জানালে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহিরুল হক জানান, আমি ৪ থানার দায়িত্বে আছি। বাঁশখালীতে কি হয়েছে আমি অবগত নই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলেও জানান খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহির।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন আক্তার জানান, ঘটনার বিষয়ে আমি পরে জেনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে তার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।