আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। এই ভাষার জন্য রক্ত জড়ালেন, জীবন দিলেন সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ নাম না জানা অনেকে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো দেশের মানুষ ভাষার জন্য জীবন দেই নি, রক্ত জড়াই নি। একমাত্র পূর্ববাংলার ( বাংলাদেশ ) মানুষই মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। রাস্তায় তাজা রক্ত ছিটিয়ে দিয়েছেন এই বীর বাঙালিরা। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম এই রক্তের দাম দিচ্ছে কি? ভাষার মর্যাদা রাখছে কি?
তখন উর্দু ভাষা যদি চাপিয়ে দিতো আজ বাংলা ভাষা বিলুপ্তির দিকে যেত। প্রাণ বাজি রেখে আন্দোলন সংগ্রাম করে, জীবন ত্যাগ করে অবশেষে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা নেওয়া হয়।
আজ বাংলা ভাষার মর্যাদা কেমন দিচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। চলুন কিছু ঘটনা দেখি।
গেলো ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শহিদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর অনেক তরুণ ও তরুণী দেখা যায়। সেখানে সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে গেলে ক্যামেরার সামনে আসে বেশকিছু তরুণী। প্রথম এক তরুণীকে সাংবাদিক জিগ্যেস করলেন স্বরবর্ণ কয়টি? মেয়েটি হাসতে হাসতে বলে আমি ক্যামেরার সামনে নারভাস ফিল করছি। সাংবাদিক তখন অপশন দিলো ২১টি নাকি ১১ টি? তখন মেয়েটি বললো ২১টি।
আবার আরও এক রমনীকে জিগ্যেস করলেন ব্যঞ্জনবর্ণ কয়টি? রমনী হাসতে হাসতে বলে উঠলো ব্যঞ্জনবর্ণ ‘অ, আ' নাকি ‘ক, খ’। তারপরে কিছুক্ষণ পর দ্বিধাদ্বন্দ্ব করে বললেন ২৯টি।
তাহলে একবার ভেবে দেখুন বাংলা ভাষার বারোটা বাজাইছে কি না!
আরেকটা ফানি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কবির একটা লাইন আছে ‘‘একুশ আমার অহংকার ’’ এই লাইনটাকে বিকৃত করে ফানি ভিডিও তৈরি করেছে মারজুক রাসেল। সেখানে ওই লাইনটির উত্তরস্বরুপ সে বলেছেন ‘‘অহংকার পতনের মূল’’। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে মর্যাদা কেমনে পাবে? আগামী প্রজন্ম কি শিখবে? তারা কি ইতিহাস পড়ে কি মজা নিবে?
বাংলা ভাষাকে জীবন্ত ও ভাষার মর্যাদা ঠিক রাখতে রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। ভাষা চর্চা করতে হবে। বাংলা একাডেমিককে আরও এগিয়ে আসতে হবে। সর্বপরি সবাইকে দেশ প্রেমে উদ্ভুদ্ধ হতে হবে।
লেখা:
সাংবাদিক ও কলামিস্ট, আরফান আলী
শেরপুর জেলা।