ঢাকা, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

সিলেটি মা: ‘ধর্মীয় অনুশাসনে কঠোর’

এমএ রহিম, সিলেট : | প্রকাশের সময় : সোমবার ১৫ জানুয়ারী ২০২৪ ০৫:৪৭:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

‘ধর্মীয় অনুশাসনে কঠোর মা। আজো সেই অনুশাসন অব্যাহত রয়েছে। ৭০ বছর বয়সে এসে আজো ধর্মীয় কর্মকান্ড সম্পর্কে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখেন মা। ভাই বোনেরা যেখানেই থাকুক না কেন-যোগাযোগ করে প্রথমেই জানতে চান নামাজ বন্দেগী সম্পর্কে। যা সত্য তাই জানাতে হয় মাকে। অন্যথায় কুরুক্ষেত্র।’ এই মা আমিনা খাতুন সম্পর্ক জানাচ্ছিলেন তাঁরই সুযোগ্য সন্তান এডভোকেট মাহফুজুর রহমান মাহফুজ। তিনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সিলেট জেলা বারের দুইবারের সাবেক সাধারণ সম্পদক। আইন পেশার পাশাপাশি নানান সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত আছেন এডভোকেট মাহফুজ।

তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় এডভোকেট মাহফুজ। আছেন ৫ বোন। সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। বড় ভাই মাহবুবুর রহমান ফার্মেসি ব্যবসায়ী। ছোট ভাই কানাডা প্রবাসী। বোন রাসেদা বেগম কানাডা প্রবাসী, সৈয়দা বেগম সিনিয়র শিক্ষক, জেসমিন বেগম আমেরিকা প্রবাসী, সেলিনা বেগম ফ্রান্স প্রবাসী ও জাহেদা বেগম আমেরিকা প্রবাসী। সকল বোনর সন্তানরা শিক্ষা জীবনে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। অনেকেই দেশে ও বিদেশে নামকরা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করছে।

 

সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল গ্রাম আদিনিবাস এডভোকেট মাহফুজের। বাবা খলিলুর রহমান ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি বেঁচে নেই। দাদা হাজী আইনুল্লাহ ছিলেন ল্যান্ডলর্ড। বাবা খলিলুর রহমান শৈশবে সিলেট শহরে অবস্থান করে লেখাপড়া করতেন। জায়গীর হিসেবে অন্যের বাড়িতে থাকতেন। দাদা হাজী আইনুল্লাহর কাছে বিষয়টি বেমানান দেখায়। সন্তানের জন্যে সিলেট শহরের শেখঘাটে বাড়ি কেনে। পরবর্তীতে ওই বাড়িতে বসবাস করে লেখাপড়া করেছেন খলিলুর রহমান। পরে এই বাড়িতে স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন। এডভোকট মাহফুজ বসবাস করেন এই বাড়িতে। এখানেই সন্তানের সাথে মা আমিনা খাতুন বসবাস করেন। তাঁর বয়স এখন ৭০ বছর।

 

 

মমতাময়ী মা সম্পর্কে বলতে গিয়ে এডভোকেট মাহফুজ বলেন, ‘তাঁর জন্ম হয়েছে কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল গ্রামে। চার বছর বয়সে পরিবারের সাথে চলে আসেন শেখঘাটের বাসায়। ভাইবোনদের লেখাপড়া নির্বিঘ্ন করতে বাবা খলিলুর রহমান ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ৫ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হন এডভোকেট মাহফুজ। সে সময় শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকরা স্কুলে যেতেন না। পাড়ার অন্যান্য শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধ হয়ে স্কুলে যেতেন। ওই দলের সাথে এডভোকেট মাহফুজও স্কুলে যেতেন। একই অবস্থা ছিল অন্যসব ভাইবোনদের বেলায়ও। মা বাড়ির প্রধান ফটকে অবস্থান করে দলবদ্ধ শিক্ষার্থীদের দলে ভিড়িয়ে দিতেন সন্তানকে। এখানেই শেষ নয়। স্কুল ছুটির সময় ঘনিয়ে এলে মা এসে অবস্থান নিতেন বাড়ির প্রধান ফটকে। সন্তান স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে-এমন দৃশ্য দেখে মায়ের কপালে প্রশান্তির ছাপ পড়তো। এতে আজ অনুভব করছি-মা আমাদেরকে স্কুলে পাঠিয়ে সারাদিন অস্থিরতায় কাটাতেন। সবাই বাড়ি ফেরার পর কেটে যেত ওই অস্থিরতা।’

 

 

মমতাময়ী মা এর সন্তান, সংসার ইত্যাদি সম্পর্কে বলতে গিয়ে এডভোকেট মাহফুজ বলেন, ‘আমরা ভাই বোনদের ঘিরে মায়ের স্বপ্ন ছিল। যা আজো অব্যাহত আছে। সন্তানের সফলতায় উচ্ছ¡সিত হয়ে উঠেন মা। মা এর ক্লান্তহীন নজরদারির কারণে আমরা সকল ভাই বোন সুশিক্ষিত হয়েছি। আমরা সকল ভাই-বোন ¯œাতক পাস করেছি। পরবর্তীতে কেউ কেউ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছি। এই জন্য মা বিশেষ সম্মাননাও পেয়েছেন।’

এডভোকেট মাহফুজ বলেন, ‘ মা এর সাধনা। ফজর নামাজের আজান হওয়া মাত্র ঘুম থেকে উঠেন মা। নামাজ শেষে আমাদের সকল ভাইবোনকে ডেকে তুলতেন। নামাজ পড়ার জন্যে নির্দেশ দিতেন। এতে কোনো ধরণের গড়িমশি করা যাবে না। কেউ অজুহাত দেখালে তার উপর কঠোর শাস্তি নেমে আসতো। এই অবস্থায় ধর্ম পালনে আজো আমরা কোনো ধরণের অজুহাত সৃষ্টি করি না। ফজরের নামাজ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই বাসায় এসে হাজির হতেন আরবি শিক্ষক। আমরা সকল ভাইবোন আরবি শিক্ষকের কাছে পড়তে বসতাম। পড়া শেষে সকালের নাস্তা। এরপর স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি। সবাইকে প্রস্তুত হতে সহযোগিতা করতেন মা।’

 

 

এডভোকেট মাহফুজ বলেন, ‘স্কুল থেকে ফিরে দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে খেলাধুলার জন্যে ঘর থেকে বের হতাম। এই অবস্থাটুকুও মায়ের চোখ এড়ানো সম্ভব হতো না। বলতে গেলে চোখে চোখে রাখতেন আমাদেরকে। কিন্তু মাগরিবের আজান হতেই সবাইকে বাড়িতে ফিরতে হতো। ব্যাতিক্রম হলে শাস্তি। সন্ধ্যার পর শিক্ষক আসতেন। সবাই পড়তে বসতাম শিক্ষকের কাছে। লেখাপড়া ও পরে খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই ঘুমোতে যেতাম। এখানেও মা এর নজরদারি থাকত। পরিবারের সকল সদস্য ঘুমিয়ে পড়লে গভীর রাতে মা যেতেন ঘুমাতে।’

 

 

এডভোকেট মাহফুজ জানান, ‘মমতাময়ী মা এখনো ওই একই ধরণের তদারকি করেন। রাতে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন মা। রাত গভীর হলেও মা জেগে থাকেন। দরজা খোলার শব্দ পেলে নিজ কক্ষ থেকে এসে দেখে যান। মুখের দিকে তাকিয়ে ফিরে যান নিজ কক্ষে। মা এর কাছে আমি এখনো সেই শিশুটি।’