টাঙ্গাইল শহরের সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলের আবাসিক ভবন থেকে শিহাব মিয়ার (১০) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। রিপোর্টে শ^াসরোধ করে কিংবা গলা চেপে ধরে হত্যা করার আলামত পাওয়া গেছে। রোববার ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ফলাফল পাওয়া যায়। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডাঃ আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টটি থানায় পাঠানো হয়েছে। এদিকে হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঢাকা ও টাঙ্গাইলে চলছে আন্দোলন। সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছেন বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা।
গত ২০ জুন সন্ধ্যায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিহাব মিয়ার লাশ সৃষ্টি স্কুলের আবাসিক ভবন থেকে উদ্ধার করা হয়। নিহত শিহাব মিয়া জেলার সখীপুর উপজেলার বেরবাড়ী গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী ইলিয়াস হোসেনের ছেলে। পরদিন (২১ জুন) টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে শিহাবের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। যদিও সৃষ্টি একাডেমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনাকে শুরু থেকে আত্মহত্যা বলে আসছিল। কিন্তু পরিবার দাবি করছিল এটা পরিকল্পিত হত্যা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শিহাবের লাশ ময়নাতদন্ত করার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আরএমওসহ তিন চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। ওই তিন সদস্যদের মেডিকেল বোর্ড ময়নাতদন্তের কাজ সম্পন্ন করে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কোন কিছু (গামছা জাতীয়) পেঁচিয়ে শ^াসরোধে হত্যার আলামত পাওয়া যায়। তাছাড়া শরীরের অন্য কোন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে হত্যার আলামত আসার পর পুলিশ সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলের দুইজন শিক্ষককে আটক করে। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আরেকজন পুলিশ হেফাজতে আছেন। এছাড়া টাঙ্গাইল র্যাব জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ জন শিক্ষককে নিয়ে যায়।
নিহত শিহাবের ফুফাতো ভাই আল আমিন সিকদার বলেন, চার মাস আগে সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে শিহাব মিয়াকে ভর্তি করা হয়। ঘটনার দিন সৃষ্টি একাডেমিক স্কুল থেকে জানানো হয়েছিল শিহাব এক্সিডেন্ট করেছে। আবার ফোন করে জানানো হয় শিহাব মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। শিহাব যেখানে থাকতো সেখানে তাদের যেতে দেওয়া হয়নি। শিহাব আত্মহত্যা করার মতো ছেলে না।
নিহতের বাবা ইলিয়াছ হোসেন বলেন, কোন নিরপরাধ সন্তানকে যেন আর হত্যার শিকার না হতে হয়। আমি আমার একমাত্র ছেলে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। যাতে এ ধরনের জঘন্য ঘটনা ঘটাবার সাহস কেউ না পায়। নিহত শিহাবের মা আসমা আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শিহাব হত্যার বিচারের দাবিতে টাঙ্গাইলের বিভিন্নস্থানে টানা মানববন্ধন ও সমাবেশ করছে ছাত্র-ছাত্রীরা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে উঠেছে নিন্দার ঝড়। জানানো হয় হত্যার তীব্র প্রতিবাদ। শিহাব হত্যার বিচারের দাবিতে রোববার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন এবং সমাবেশ করেছেন টাঙ্গাইলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সোমবার টাঙ্গাইল শহরে মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে তারা জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছে।
শিহাব হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন বলেন, এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়তে আসে মরতে নয়। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।
এ ব্যাপারে সৃষ্টি শিক্ষা পরিবারের চেয়ারম্যান ডক্টর শরিফুল ইসলাম রিপনের মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুয়ায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। অপরাধী যেই হোক, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।