ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিচার কার কাছে দেব, অবন্তিকার মায়ের আহাজারি

বায়ান্ন ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৬ মার্চ ২০২৪ ০৩:৩৭:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

‘এক বছরের মধ্যে স্বামী ও মেয়ে চলে গেল, এটাই বুঝি আমার প্রাপ্য ছিল। একটা বিধবা নারীর প্রাপ্য ছিল। আমি এখন সন্তানহারা। আমি এর বিচার কার কাছে দেব?’- এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরোজ অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। তার আহাজারি যেন থামছেই না।

 

শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে অবন্তিকার আত্মহত্যার পর সাংবাদিকদের কাছে নিজের কষ্ট প্রকাশ করেন তিনি।

 

তিনি বলছিলেন, ‘গত রোজায় সরকারি কলেজের অধ্যাপক স্বামীকে হারালাম। এবার মেয়েকে হারালাম। এক বছরের মধ্যে স্বামী ও মেয়ে আমার কাছ থেকে চলে গেল। মেয়ে আমার বিচারক হতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা তাকে বাঁচতে দিল না। ও সাহসী মেয়ে ছিল। বিচার না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল।’

 

তাহমিনা শবনম বলেন, ‘হায় রে অবন্তিকা তুই আমারে কত বলছিলি মা একটা জিডি করো মা একটা জিডি করো। আমি বলেছি মা এগুলা করব না। আল্লায় বিচার করবে। আমার আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ছিল। আল্লাহ আমার কাছ থেকে তোরেই নিয়ে গেল! আরে তোরে নিয়ে গেল অবন্তিকা? আমি কত কষ্ট করলাম। আমি এই জন্যই কষ্ট করলাম।’

 

গতকাল ইফতারের পর মেয়েকে বিষণ্ন দেখেছিলেন মা তাহমিনা শবনম। তখন মন খারাপ কেন জানতে চেয়েছিলেন মা। অবন্তিকা শুধু বলেছিলেন, ‘এমনি।’ কিন্তু মেয়ে যে আত্মহত্যা করবে, এটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি তিনি।

 

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বলেন, ঢাকায় কিছুদিন আগে মেয়েটা কলতা বাজারে ছিল। এখানে ইউনিভার্সিটির ছেলেগুলা ওই বাসা পর্যন্ত গিয়ে জানাইছে যে ওর নামে জিডি আছে। ওরে ওখান থেকে বের করে দিয়েছে। ওই বাসার মেয়েরা তো জানার কথা না। আমার মেয়ে এসে বলতেছে মা ওরা তো আমাকে এইভাবে মেন্টাল টর্চার করতেছে। আমি পড়তে পারি না। পরে আমি ওর সঙ্গে গেলাম ঢাকায়। আমি যখন গেলাম মেয়েরা তখন চুপ। আমি বুঝতে দেই নাই মেয়েদেরকে যে ওর (অবন্তিকার) পরীক্ষা চলতেছে। মেয়ের পরীক্ষা যখন শেষ আমি যেদিন চলে আসি মেয়েরা বলতেছে তোমার কি পরীক্ষা শেষ? না কি পরীক্ষা শুরু হবে? তার মানে তাদেরকে ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্ধন দিয়ে রাখছে তাকে কীভাবে টর্চার করবে।

 

তিনি বলেন, রাফি, আম্মান, মাহিয়া, লাকি, রিমি তারপরে আঁখি, বন্যা, দ্বীন ইসলাম এ ঘটনার জন্য মূল দায়ী। আমি জিজ্ঞেস করলাম যে আপনারা ছেলেদেরকে জিজ্ঞেস করেন তারা কেন এমন করছে। সে তো একটা স্টুডেন্ট ভালো। ক্লাসের টপ লিস্টেড মেয়ে। তার সঙ্গে কেন এরকম করছে? বলে যে ওই আপনার মেয়ে একটা মেসেজ দিয়েছে। ওই মেসেজটা কীসের? মেসেজটা কিন্তু আমার কাছে আছে। এই মেসেজে কোনদিন কোনো জিডি হয় না, কোনো কিছু হয় না। মানে, ও ওর সঙ্গে অ্যাফেয়ার করেছে, এই কথাগুলো। এই কথাগুলো দিয়া তো কখনও জিডি হয় না।

 

মা তাহমিনা শবনমের অভিযোগ, এক বছর আগে থেকে অবন্তিকার এক সহপাঠী নানাভাবে তাকে উৎপীড়ন করতেন। এ নিয়ে তার মেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের কাছে নালিশ করেন। কিন্তু সহকারী প্রক্টর ঘটনার বিচার করেননি, উল্টো মেয়েকে ডেকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। ওই ছেলের পক্ষ নেন তিনি। তখন ওই ছেলে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েন। আপত্তিকর মন্তব্য করতেন, হুমকি দিতেন। এসব ঘটনার বিচার চেয়ে না পেয়ে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

 

শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে ফাইরোজ অবন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে দায়ী করে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। পোস্ট করার কিছুক্ষণ পরই ওই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।