ঢাকায় যাবার দশদিন আগেও মিলছে না টিকিট। এ যেন সোনার হরিণ। অথচ নতুন করে ঢাকা-বেনাপোল রুটে ট্রেনটি চালু হবার পর চারটি বগি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বেনাপোল কাস্টমস, বন্দর ও আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের গুরুত্ব বিবেচনা করে ব্যবসায়ী আর চিকিৎসা সেবীদের স্বাচ্ছন্দে যাতায়াতে বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল রুটে অত্যাধুনিক সুবিধা নিয়ে চালু হয় ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ নামে একটি যাত্রীবাহী রেল সার্ভিস। করোনার কারনে ৮ মাস বন্ধ থাকার পর আবারো এরুটে রেল চলাচল শুরু হলেও ইন্দোনেশিয়ার অত্যাধুনিক ১২টি বগি কমিয়ে ভারতীয় আটটি বগি যুক্ত করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার তৈরি রেলটি পরিবর্তন করে নিম্নমানের রেল সেবায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।
এছাড়া ষ্টেশনে ইয়ার্ড সংকটে সময় মত রেল পৌছাতে না পারায় ভোগান্তির পাশাপাশি নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে যাত্রীদের। তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছেন, চলমান সমস্যা সমাধানে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ট্রেন পাল্টে দেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছেন নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোর এবং সেবা সংগঠন ঝিকরগাছার পক্ষে। তাদের দাবি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ট্রেনটি রেলমন্ত্রী তার নিজের এলাকায় নিয়ে পুরোনো একটি স্ক্রু কাপ্লিং ট্রেন দ্বারা এই রুট চালু করতে চাইছে। এ রুটে শুধুমাত্র বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষই যাতায়াত করে না বরং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতগামী ও ভারতফেরত অন্যান্য দেশের নাগরিকবৃন্দ এই ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করে থাকে। বাহিরের দেশের নাগরিকের কাছে দেশের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করতে পিটি ইনকা সিবিসি কাপ্লিং ট্রেন দ্বারা পূর্বের নিয়মে চালু করার জন্য নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোর এবং সেবা সংগঠন ঝিকরগাছার পক্ষে আহবান জানানো হয়েছে। তাদের দাবি প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ইন্দোনেশিয়ান পিটি ইনকা সিবিসি কাপ্লিং ট্রেন ফেরত না দিলে আগামীতে রেলপথ অবরোধের মত কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
জানা যায়, বেনাপোল বন্দরে আমদানি বাণিজ্য থেকে বছরে সরকারের ৬ হাজার কোটি টাকা ও ভ্রমনখাতে প্রায় একশ’ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। ব্যবসা, শিক্ষা, ভ্রমন ও চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রতিবছর প্রায় ১৮ লাখ পাসপোর্টযাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে। সড়ক পথে যাতায়াতে ফেরিতে দীর্ঘ সময়ক্ষেপন ও সড়ক দূর্ঘটনা এড়াতে দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াতকারী যাত্রীদের দাবী ছিল বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল রুটে রেল সেবার। অবশেষে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বেনাপোলের গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল রুটে চালু করে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’। প্রধানমন্ত্রী নিজেই ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ নামটি পছন্দ করেন এবং এই ট্রেনটি তিনি নিজের হাতে উদ্বোধন করেন। সেসময় ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা পিটি ইনকা সিবিসি কাপ্লিং ট্রেন দ্বারা এই রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। চলাচল বন্ধের আগ পর্যন্ত ‘বেনাপোল এক্সপ্রেসে’ যুক্ত ছিল ইন্দেনেশিয়ার পিটি ইনকা অত্যাধুনিক ১২টি বগি। এর মধ্যে চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগি ছিল। কিন্তু নতুন করে চালু হওয়ার পর ইন্দোনেশিয়ার ১২টি বগির স্থলে যুক্ত হয় ৮টি নিম্নমানের ভারতীয় বগি। এছাড়া চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগি কেটে ফেলা হয়। নতুন করে যুক্ত হওয়া একটি বগিতে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি মাত্র কেবিন। এ কেবিনে দিনে রয়েছে ৮টি সিট ও রাতে থাকছে ৪টি সিট। প্রতিটি সিটের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৪৭ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সব বগিতেই রয়েছে চেয়ার সিটের ব্যবস্থা। এসব সিটের ভাড়া ৪৫৫ টাকা। ট্রেনে মোট ধারণ ক্ষমতা ৮শ’ যাত্রী। সপ্তাহে একদিন বুধবার চলাচল বন্ধ থাকে। এ রুটে ট্রেনটি চালু হওয়াতে সাড়ে সাত ঘন্টায় বেনাপোল থেকে ঢাকায় পৌছানো সম্ভব হচ্ছিল।
বর্তমানে এ ট্রেনটি যাত্রীভারে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ট্রেনের টিকিট এখন সোনার হরিণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ঢাকায় যাত্রার দশদিন আগেও স্টেশনে টিকিট কাটতে গেলে মিলছে না কাঙ্খিত টিকিট। এ কারণে যশোরসহ বেনাপোলের যাত্রীরা ট্রেনটিতে আগের মত ১২টি বগি সংযুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। যাতে তারা চাহিদা মত টিকিট কেটে নিরাপদে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারেন।
করোনার কারনে ৮ মাস বন্ধ থাকার পর আবারো গত ২ ডিসেম্বর থেকে এপথে চালু হয়েছে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’। তবে ইন্দানেশিয়ার তৈরী আগের রেলটি পরিবর্তন করে নিম্নমানের ভারতের তৈরী রেল দেওয়ায় অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়েছেন এরুটের যাত্রীরা। এ রেলটিতে পূর্বের কোন সুবিধা নেই। আগের রেলটি পঞ্চগড় রুটে চালানো হচ্ছে আর সেখানকার রেলটি দেওয়া হয়েছে বেনাপোল রুটে। যাত্রীরা ইন্দোনেশিয়ার তৈরী রেলটি বেনাপোল-ঢাকা রুটে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানিয়েছেন।
রেল যাত্রী মশিউর রহমান জানান, ‘বেনাপোল এক্সপ্রেসে’র পূর্বের রেলটি পরিবর্তন করায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ভোগ করতে হচ্ছে। নামাজের ব্যবস্থা নেই, এসি চেয়ার কোচ নেই, বাথরুম ভালো না। এছাড়া ষ্টেশনে চাহিদা মত ইয়ার্ড না থাকায় সময় মত রেল ষ্টেশনে পৌছায় না।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বেনাপোলবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের রেলটি বর্তমানে উত্তরবঙ্গে নিয়ে গেছেন রেল মন্ত্রী। নিম্নমানের রেল দিয়েছেন বেনাপোল রুটে। বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল রুটে পূর্বের ট্রেনটি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
বেনাপোল রেল ষ্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান জানান, ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনটির টিকিটের চাহিদা অত্যাধিক। মানুষ নিরাপদে কম সময়ে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য এ ট্রেনটি বেছে নিয়েছে। কিন্তু মানুষের চাহিদামত টিকিটের যোগান দিতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। বেনাপোল বন্দর থেকে বেনাপোল-ঢাকা রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস, খুলনা-বেনাপোল রুটে বেতনা এক্সপ্রেস ও খুলনা-বেনাপোল-কলকাতা রুটে বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল করে। তবে করোনার কারনে বর্তমানে খুলনা-কলকাতা রুটে বন্ধ রয়েছে বন্ধন এক্সপ্রেস।
যশোর রেলস্টেশনের মাস্টার আয়নাল হোসেন বলেন, ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ আন্ত:নগর ট্রেনটির ইন্দোনেশিয়ার বগি বদলে গেছে। এখন ৮টি ভারতীয় বগিতে ট্রেনটি চলাচল করছে। কিভাবে বগিগুলো বদলে গেছে সেটা তার জানা নেই। তবে যাত্রীর চাহিদার কারণে বগি বৃদ্ধির বিষয়টি তারা রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে জানান।