ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। দুর্ঘটনা রোধের অযুহাতে এই মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধে বিশেষ অভিযানে নেমেছে হাইওয়ে পুলিশ। এদিকে এই অভিযানের ফলে মহাসড়কের পাশে থাকা স্থানীয় চলাচলকারীদের বেড়েছে সীমাহীন ভোগান্তি।
মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে বিজয়নগরের সাতবর্গ পর্যন্ত মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এই অভিযানে নেমেছে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা পুলিশ। থ্রি হুইলার অটোরিকশা, ইজিবাইক এবং ইঞ্জিনচালিত তিন চাকার যেকোন যান মহাসড়কে ওঠলেই নিচ্ছে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এসব আটক করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুসারে প্রতি গাড়িকে আড়াই হাজার টাকা জরিমানা করে মামলা দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থেকে বিজয়নগর উপজেলার সাতবর্গ পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। আবার খাঁটিহাতা বিশ্বরোড মোড় থেকে কসবা উপজেলার কুটিচৌমুহনীর কালামুড়িয়া সেতু পর্যন্ত ৪৩ কিলোমিটার এলাকা কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক। এই ৭৬ কিলোমিটার এলাকা খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার অধীনে। তন্মধ্যে সরাইল-নাসিরনগর উপজেলার যাত্রীদের সুবিধার্থে মহাসড়কের সরাইলের কুট্টাপাড়া মোড় থেকে খাঁটিহাতা মোড় পর্যন্ত থ্রি-হুইলার চলার জন্য বিশেষ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ জানায়, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো.শাহজালাল আলমের নেতৃত্বে হাইওয়ে থানা পুলিশ সদস্যরা ঢাকা সিলেট মহাসড়কে থ্রি হুইলার অটোরিকশা, ইজিবাইক ও ইঞ্জিনচালিত তিন চাকার যান মহাসড়কে ওঠলেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে হাইওয়ে পুলিশের নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা আটক করে। পরে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুসারে প্রতি গাড়িকে আড়াই হাজার টাকা জরিমানা করে মামলা দেওয়া হয়।
এদিকে হাইওয়ে পুলিশের এই বিশেষ অভিযানের ফলে মহাসড়কের পাশে থাকা স্থানীয় চলাচলকারীদেরকে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, অভিযানের কারণে নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছেন তারা। বিশেষ করে মহসড়কঘেঁষা বাসিন্দাদের চলাচলের থ্রি হুইলার ছাড়া বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাদের ভোগান্তির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা জানান, ঘর থেকে বের হলেই মহাসড়ক। প্রাত্যহিক কাজ সারতে মহাসড়কে ওঠতেই হয়। অল্প অল্প জায়গা পেরুতে ত আর বাস পাওয়া যাবে না। এখন রিকশা, অটোরিকশাসহ থ্রি হুইলার বন্ধ করে দেয়ায় পায়ে হেঁটে মহাসড়কের উপর দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হচ্ছে। এছাড়া অনেক চালক রয়েছেন যাদেরকে মহাসড়ক অতিক্রম করেই সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনে গিয়ে গ্যাস সংগ্রহ করতে হয়। তাদের এখন কি হবে? গ্যাসের অভাবে গাড়ি চালাতে না পারলে সংসার চলবে কীভাবে?
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক রুবেল বলেন, 'পেটের দায়ে সিএনজি চালাই। মহাসড়ক দিয়েই আমাদেরকে প্রতিদিন গ্যাস নিতে যেতে হয়। তারপর আবার খেতে হয় মামলা।' আমেনা বেগম নামের এক অটোরিকশা চালকের মা বলেন, 'আমার বাড়ি মহাসড়ক লাগোয়া ইসলামাবাদ (গোগদ) গ্রামে।বাড়ি থেকে বেড়িয়ে মহাসড়ক দিয়েই চলতে হয়। আমি হতদরিদ্র মানুষ, দুই দিন আগে পুলিশ আমার ছেলের রিকশাটি ধরে মামলা দেয়। কোনোরকমে টাকা যোগাড় করে মামলা ভাঙ্গিয়ে আনি। আজকে আবারও ধরা পড়ে!' বিভিন্ন কোম্পানির ভ্যান চালকেরা বলেন, 'কোম্পানি চিপস, বিস্কুট, ভ্যান গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি দিয়ে নেওয়া যায়না। বিভিন্ন জায়গার দোকানে দোকানে কোম্পানীর মালামাল ডেলিভারি করতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই আমাদেরকে ভ্যান গাড়ি দিয়ে মহাসড়কে দিয়ে যেতে হয়।' তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া শিবানী বলেন, 'আমরা হিজড়াদের গাড়ি কোনো পুলিশ ধরে না, অথচ ওই ব্যাটা পুলিশ মহাসড়কে ওঠার কারণে মামলা দিয়েছে।'
খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার পরিদর্শক (ওসি) মো. শাহজালাল আলম বলেন, 'পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় আমরা মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন আটকের নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। আটককৃত থ্রি-হুইলারের বিরুদ্ধে ডাম্পিং ও প্রসিকিউশন দাখিল করে জরিমানা করা হয়েছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।'