ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় উড়িষ্যা রাজ্যের বালাসোরে তিন ট্রেনের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় কয়েকজন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২ জুন) শালিমার স্টেশন থেকে করমন্ডল এক্সপ্রেসে করে ভেলর যাচ্ছিলেন ঝিনাইদহের মো. আক্তারুজ্জামান ও তার স্ত্রী মোছা. নূরজাহান। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বালাসোরের বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় তাদের ট্রেন দুর্ঘটনা পড়ে। বর্তমানে এই দম্পতি সুস্থ আছেন।
জানা যায়, ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়া ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কাজিরবেড় ইউনিয়নের পাকড়াইল গ্রামের মৃত আব্দুল ওহাবের ছেলে ও মহেশপুর সরকারি পদ্মপুকুর শেখ হাসিনা ডিগ্রি কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারি শিক্ষক মোঃ আক্তারুজ্জামান ও তার স্ত্রী মোছাঃ নূর জাহান। স্ত্রী নূর জাহানের চোখের সমস্যা নিয়ে বৃহস্পতিবার (১ জুন) সকালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান তারা।
মোঃ আক্তারুজ্জামানের বড় ছেলে অনিক রহমান নূর বলেন, মায়ের চোখের সমস্যা নিয়ে বেশ কয়েকবার ভারতে চিকিৎসা করিয়েছেন তার বাবা। এবার সিদ্ধান্ত নেন ভেলর গিয়ে চিকিৎসা করাবেন। বৃহস্পতিবার সকালে (১ জুন) তারা ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবা-মা ভালো আছেন। তারা সহি-সালামতে আছেন । বাবা বলেছেন, সর্বশক্তিমান তাদের বাঁচিয়েছেন। দুর্ঘটনার পর বাবার সাথে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। বাবা বলেছে শুক্রবার (২ জুন) দুপুরে ট্রেনের টিকিট নিয়ে শালিমার স্টেশন থেকে করমন্ডল ট্রেনটি করে ভেলরের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা যখন উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলার বাহানাগাঁ এলাকায় পৌঁছান, তখন ট্রেনটির দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রেনের মধ্যে থাকা হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। তারা পিছনের বগিতে থাকায় তাদের তেমন কোন সমস্যা হয়নি।
আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর তাদের উদ্ধার করে, পরে সুস্থ আছে কি না পরীক্ষা করার পর বাসে করে ২'শ কিলোমিটার দূরে ভুবনেশ্বর স্টেশন থেকে পন্ডিশ্রী নামে আরেকটি ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোববার সকালে ভেলরে গিয়ে পৌঁছাবে তারা। ঐদিন বাবা এবং মা এসি বগিতে ছিল, তাদের সামনে ছিল আরও কয়েকটি বগি থাকাই তাদের কোন সমস্যা হয়নি।
এদিকে মো. আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় দৈনিক বায়ান্নের। তিনি জানান, স্ত্রী নুর জাহানের চোখের সমস্যা। বেশ কয়েক দফা ভারতে চিকিৎসা করিয়েছেন। এবার সিদ্ধান্ত নেন ভেলর গিয়ে চিকিৎসা করাবেন। সেই ইচ্ছায় গত ১ জুন ভারত যান। এরপর ট্রেনের টিকিট নিয়ে শুক্রবার দুপুরে শালিমার স্টেশনে হাজির হন। ৩টা ২০ মিনিটে তাদের বহনকারী করমন্ডল ট্রেনটি স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা যখন উড়িষ্যার বালাসোর জেলার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় পৌঁছান তখন ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তারা বিকট শব্দ ও ঝাঁকুনি অনুভব করেন। ট্রেনের মধ্যে থাকা হাজার হাজার মানুষ কান্নাকাটি শুরু করেন। তারাও বুঝে নেন ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়েছে।
আক্তারুজ্জামান জানান, তারা ছিলেন ২-এ এসি বগিতে। তাদের সামনে ছিল আরও কয়েকটি বগি। তারা দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে সামনে কী ঘটেছে দেখার চেষ্টা করেন, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে সেখানে উপস্থিত স্থানীয় মানুষ তাদের বাধা দেন। তারা উদ্ধারকাজ শুরু করেন, আর যারা অক্ষত আছেন তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি জানান, ট্রেন থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়ার পর তারা বাসযোগে কিছুটা দূরে এক এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেন। সেখান থেকে পরদিন সকালে ভুবনেশ্বর স্টেশন থেকে আরেকটি ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা এখন ভেলরের পথে। ঘটনাস্থল থেকে বাসে ওঠা পর্যন্ত সময়টুকু তাদের আতঙ্কে কেটেছে। কী হচ্ছে সামনে, তা তারা কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। অনেক বাংলাদেশি ছিল এই ট্রেনে তারা কেমন আছেন সেটাও বোঝা যাচ্ছিল না। শুধু তারা ভালো আছেন এই খবরটা স্বজনদের কাছে মুঠোফোনে জানিয়ে দিচ্ছিলেন।
এভাবে কিছু সময় যাওয়ার পর ট্রেনের কর্মকর্তারা এসে তাদের সরিয়ে দেন। গোটা রাত তারা থেকেছেন পাশের একটি শহরে। শনিবার সকালে মাইকে তাদের ভুবনেশ্বর স্টেশনে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। তারা সেখানে গেলে পন্ডিশ্রী নামের আরেকটি ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়।
আক্তারুজ্জামান জানান, ঘটনার পর কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। তবে যখন তাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল তখন দেখতে পান হতাহতদের নিয়ে ছুটাছুটি, যা দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। আহত মানুষের চিৎকার কষ্ট দিয়েছে। শুধু ভেবেছেন এত বড় এক দুর্ঘটনায় পড়েও তারা ভালো আছেন।
মহেশপুর সরকারি পদ্মপুকুর শেখ হাসিনা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আক্তারুজ্জামান স্ত্রীকে চিকিৎসা করতে ভারতে যাওয়ার জন্য পাঁচ দিনের ছুটি নিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর শুনে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করি তিনিও ওই দুর্ঘটনায় পড়েছে কি না। তখন জানতে পারি তিনি এবং তার স্ত্রী দুজনই দুর্ঘটনায় কবলিত ওই ট্রেনেই ছিলেন তবে সুস্থ আছেন। পরে আমিও তাদের সাথে কথা বলেছি তারা এখন অন্য ট্রেনে করে ভেলরের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে।
কাজিরবেড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইয়ানবী বলেন, পাকড়াইল গ্রামের শিক্ষক আক্তারুজ্জামান ও তার স্ত্রী দুজনে ভারতে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। সেখানে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনে তারাও ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জেনেছি তারা সুস্থ আছেন।