ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ভোটের আগে জোটের দূরত্ব

Author Dainik Bayanno | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ০৩:২৬:০০ পূর্বাহ্ন | রাজনীতি

 

 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর এখন পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের কোনো নেতা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এখনো জোটের কর্মপরিকল্পনা, ঐক্যবদ্ধভাবে পথ চলার কোনো আভাস দেখছেন না শরিকরা। আওয়ামী লীগের এসব পদক্ষেপ ও অবস্থান একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল’ বলে মনে করেন শরিক জোটের অনেকেই। সে কারণে ১৪ দলীয় জোট নিয়ে আওয়ামী লীগের কৌশল কী তা পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন শরিকরা। জোট প্রধান দলের একলা চল নীতিতে ক্ষুব্ধ তারা। জোটের ভিতরে দূরত্ব বাড়ছে বলে মনে করেন শরিক দলের নেতারা।  

 

এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি এবং সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু  বলেন, জোট নিয়ে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ কী কৌশল গ্রহণ করছে, তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি পরিষ্কার করবে।’  

 

আওয়ামী লীগের ‘একলা চলো’ নীতিতে জোটের শরিকরা ক্ষুব্ধ হলেও কোনো ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়নি বলে দাবি জোটের প্রধান শরিক দল আওয়ামী লীগের নেতাদের। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ  বলেন, ‘গতকালও ১৪ দলের ভার্চুয়াল সভা ছিল। সেখানে জোট শরিকরা অংশ গ্রহণ করেছেন। সেখানেও দূরত্ব নিয়ে কোনো কথা হয়নি। বরং সবাই ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন যে, চলার পথে ভুলত্রুটি থাকলেও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কারণ বাংলাদেশকে নিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। জোটে কোনো দূরত্ব নেই। ঐক্য অটুট রয়েছে।’ 

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই বছরই ২৩ দফা ঘোষণা দিয়ে ১৪ দলীয় জোটের যাত্রা শুরু হয়। আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ১১ দলীয় জোট মিলে এই জোট গঠিত হয়। কিন্তু জোট গঠনের পরপরই ১১ দল থেকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-সহ কয়েকটি দল বেরিয়ে যায়। কিন্তু জোটটি ১৪ দল নামেই বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। পরে ২০০৭ সালের এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় জোটের শরিক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার প্রায় ১৩ বছরে আর কোনো দল আওয়ামী লীগের জোট ছেড়ে যায়নি। বরং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি) ও নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বাধীন তরিকত ফেডারেশন জোটে যোগ দেয়। ২০১৬ সালে সংগঠনের কাউন্সিলকে ঘিরে দুই ভাগ হয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাসদ গঠন করা হয়। সেই থেকে বাংলাদেশ জাসদ আওয়ামী লীগের শরিকই ছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনে একটি আসনে বাংলাদেশ জাসদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি মৃত্যু বরণ করলে ওই আসনে আওয়ামী লীগ কোনো ছাড় দেয়নি। এ নিয়ে বাংলাদেশ জাসদের নেতারা ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের ওপর। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের শরিক জোটের কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি বাংলাদেশ জাসদকে।

 

২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনকালে শরিক দলের একাধিক নেতাকে মন্ত্রী করা হলেও এবার মন্ত্রিসভার বাইরে রাখা হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেও কোনো কর্মপরিকল্পনা তৈরির তাগিদ দেখছেন না শরিকরা। আওয়ামী লীগের এসব পদক্ষেপ ও অবস্থান একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল’ বলে উল্লেখ করেন শরিক দলগুলোর বেশ কয়েকজন শীর্ষনেতা। তাই দ্রুত ১৪ দলের বৈঠক ডেকে জোটভুক্ত সরকারি দলের অবস্থান পরিষ্কার করা জরুরি। তা না হলে ১৪ দলীয় জোটের ঐক্য নিয়েই জনমনে ‘নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ দেখা দিতে পারে। 

 

এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা  বলেন, ‘সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মান্ধদের আস্ফালন এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির লাফালাফি দেখছি। ১৪ দলীয় জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের দায়িত্ব ছিল শরিকদের সঙ্গে নিয়ে কীভাবে এই আস্ফালন বন্ধ করা যায় সে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা। যুগোপৎ কর্মসূচিতে যাওয়া। কিন্তু সে লক্ষণ নেই। আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদ নির্বাচন নিয়েও কোনো ভাবনা নেই। ভোটের সব প্রস্তুতির আগের (মনোনয়নপত্র জমা) রাতে বুঝিয়ে দিলে তো জোট হয় না। এসব নিয়ে আওয়ামী লীগকে এখন থেকেই ভাবতে হবে।’ জোটের একাধিক নেতা জানান, বিগত সময়ে জোটের শরিকদের সরকারে নেওয়া হলেও এখন আওয়ামী লীগ ‘একলা চলো’ নীতিতে আছে। এখন সময় এই নীতি পরিহার করার। সব রাজনৈতিক দলেরই লক্ষ্য থাকে, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা জনগণের সেবা করা। আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত কোনো জোট শরিক দলের নেতাকে সরকারে নেয়নি। আবার সরকারে না নিলেও অন্যভাবে মূল্যায়নের সুযোগ ছিল, সেটাও করছে না। ফলে দূরত্ব বাড়ছে। জোট শরিকদের দাবি, প্রধান দল হিসেবে ‘যথাযথ’ আচরণ করছে না আওয়ামী লীগ।  

 

এ প্রসঙ্গে ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন  বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতাদের ‘সম্মানজনক মূল্যায়ন’ অনুপস্থিত লক্ষ্য করছি। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় সেটা আরও পরিষ্কার হচ্ছে। জোট করেছিলাম অনেক লক্ষ্য নিয়ে। তার মধ্যে সরকার গঠনও এক সঙ্গে হওয়ার কথা। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগই ক্ষমতার উপকারভোগী। এ আচরণ পরিহার করা দরকার।’ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী  বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে জোটকে আরও সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করা প্রয়োজন।’