ভোলা জেলার ৭ উপজেলার চরাঞ্চলে দেশি, বেলজিয়াম এবং বেইজিং হাঁস পালন করে প্রায় সহস্রাধীক বেকার যুবক ও উদ্যোক্তা এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। এখন তারা আর সরকারী চাকরী খুজছেননা।
বরংচ তারাই এখন ৪-৮ জনকে নিজেদের খামারে চাকরী দিয়েছেন। নিজ বাড়ির আঙ্গিনা, পুকুরে ,পতিত যায়গা কিংবা মাছের ঘের এবং পুকুর জলাশয়ে বাণিজ্যিকভাবে এ হাঁস পালন করছেন বেকার যুবক, যুবতী ও নারীরা। হাঁসের এসব খামার গড়ে ওঠায় জেলার অনেক বেকার যুবক-যুবতীরা এখন দেশি হাঁসের খামারে ঝুঁকছেন এবং করছেন বিনিয়োগ।বিভিন্ন এনজিও, মাল্টিপারপাস ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বেকার যুবক,যুবতী ও দরীদ্র নারীরা গড়ে তুলেছে প্রায় সহস্রাধীক হাঁসের খামার। তবে প্রশিক্ষণে পরামর্শ বা কারিগরী সহযোগীতা ও ভালো চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় জেলা উপজেলা প্রাণী সম্পদ দফতরের বিরুদ্ধে একাধীক খামার উদ্যোক্তা ও কৃষকেরা অভিযোগ করেন।
জানা গেছে, ভোলা সদরের কাচিয়ার মাঝেরচর, শিবপুর, ইলিশার কন্দ্রকপুর, ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া, উত্তর দিঘলদী, দক্ষিন দিঘলদী,দৌলতখানের-মাঝেরচর, মদনপুর, সৈয়দপুর, তজুমদ্দিনের-সোনাপুর, লালমোহনের-লর্ডহাডিন্স, চরফ্যাশনের আবদুল্লাহপুর,এওয়াজপুর, আমিনাবাদ, চরমাদ্রাজ, হাজারীগঞ্জ, জাহানপুর, নজরুল নগরসহ চরকলমী এবং কুকরি-মুকরী, মনপুরার-মনপুরা ইউনিয়নে ছোট-বড় এ দেশি হাঁসের খামারগুলো গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি রয়েছে গৃহস্থলি দেশী হাসের খামার হাজার হাজার। শিতে অধীক হারে হাঁসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হাটবাজারে এ হাঁস ও ডিম বিক্রী করে চড়া দাম পাচ্ছেন খামারী ও কৃষকেরা।
কালিবাড়ি রোডের গৃহিনী ইয়ানুর বেগম জানান, ১০ বছর আগের থেকে আমি দেশী ১০টি দেশী হাস পালনের মাধ্যমে আমার হাসপালন শুরু। বর্তমানে আমার বেইজিংয়ের ২০টি এবং দেশীয় ৩০টি হাস রয়েছে। আমার পরিবারের চাহিদানুযায়ী ডিম খেয়ে বিক্রিও করি। শীত মৌসুমে মাংসও চাহিদা মিটায় আমার পরিবারের। তবে জায়গার অভাবে হাসের পরিমান বাড়াতে পারিনা। মাঝেরচরের খামারী-হাসেম জানান, আমি এনজিও থেকে লোন নিয়ে ৩ বছর যাবত ১ হাজার ভাসমান হাসের খামার করে লোন শেষ করে পরিবার পরিজন ও সংসার চালিয়ে ১ লাখ ৭০ হাজা টাকা জমা করেছি। মাদ্রাজ ইউনিয়নের খামারী মোজম্মেল হক বলেন, আমি দীর্ঘ ৫বছর বিদেশে শ্রমীক হিসেবে কাজ করেছি। বিদেশি কর্মস্থলে পরিশ্রম করে যে টাকা পাইনি তা দুই বছরেই হাঁস পালন করে কামিয়েছি। আমাদের দেশের বেকার ছেলে মেয়েদের মধ্যে অনেকেই চাকুরী না পেয়ে হতাসাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার কেউ কেউ মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে। আমি বলতে চাই তাঁরা যেন পারিবারিক ব্যবসা বা চাষাবাদের পাশাপাশি হাঁস, মুরগী পালন অথবা মাছের চাষ করে।
তিনি আরও বলেন, আমি প্রথমে পৌনে দুই একর জমিতে পুকর খনন করে মাছ চাষের পাশাপাশি ৫শতাধীক হাঁস পালন করি। মুনাফা ভালো হওয়ায় অল্প সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবারও বিনিয়োগ করি। এখন আমার খামারে মাছের পাশাপাশি প্রায় ১৫শ হাঁস রয়েছে। বাজারে ডিমের পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে পাইকারদের কাছে হাঁস বিক্রয় করে অধীক মুনাফা পাচ্ছি।
আরেক খামারী তরুন উদ্যোক্তা সাবিনা ইসলাম বলেন, আমি একটি মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি) পাশ করেছি। আমার বাবা একজন কৃষক। বাড়িতে বেকার থাকা অবস্থায় আমার এক আত্মীয়ের পরামর্শে আমাদের ঘরে থাকা ১০টি হাঁস পালন করি। পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিবেশিদের কাছ থেকে প্রায় ৫০টি হাসের বাচ্ছা কিনে আমি তা পালন করি। এখন বাড়ির উঠোনে মা ও ছোট ভাইয়ের সহযোগীতায় জালের বেড়া তৈরী করে প্রায় ৫শতাধীক হাঁস পালন করছি। প্রতিদিন ২শতাধীক ডিম বাজারে বিক্রয় করে আমদের সংসারে সহযোগীতা করছি।
চর কলমী ইউনিয়নের প্রবাসি সামসুদ্দিন হাওলাদার বলেন, দেশে একসময় স-মিলে গাছ কাটার কাজ করেছি। অনেক কষ্ট করে ওমানে গিয়ে ফেরত আসি। আমার বেকারত্বেও মধ্যেও ছেলে মেয়েকে লেখা পড়া করিয়েছি। ছেলেটা এখন কলেজে পড়ছে। তাকে বাড়ির পুকুরে মাচা তৈরী করে হাঁস পালনের ঘর তৈরী করে দিয়েছি। ছেলে ও তাঁর মায়ের সহায়তায় আমাদের খামারে এখন এক হাজার হাঁস রয়েছে। হাঁস ও ডিম বিক্রয় করে অনেক টাকা জমিয়েছি। তাকে প্রথমে হাঁসের ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন জটিলতায় পড়তে হয় বলেও জানান তিনি।
জাহানপুর ইউনিয়নের জামাল মুন্সি বলেন, আমার খামারে ২ হাজার হাঁস রয়েছে। প্রতিদিন খালে বিলে হাঁস ছেড়ে দেই। কম পরিচর্যায় শামুক ও গুল্ম লতাপাতা ছাড়াও পুকুর জলাশয়ের প্রাকৃতিক খাবার খায় হাঁসগুলো।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণী সম্পদ দফতরের কর্মকর্তা ইন্দ্রজিত কুমার মন্ডল জানান, আমাদের তালিকা অনুযায়ী ভোলা জেলায় সহস্রাধীক হাসের খামার রয়েছে এবং ঘরোয়া ভাবে অনেক কৃষকেরা হাস মুরগী পালন করে। বেকার যুবক ও দরীদ্র নারীদের হাঁস পালনে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ করণে পরামর্শ ও মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা, ভ্যাকসীন দেয়া হচ্ছে।