ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ভোলায় বিলুপ্তির পথে মজাদার খেজুরের রস

ভোলা প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : শনিবার ১ জানুয়ারী ২০২২ ০৪:৩১:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

ভোলায় খেজুর রসের চাহিদা থাকলেও আগের মতো খেজুর গাছ না থাকায় অনেকের স্বাদের রস ইচ্ছা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে না। এক সময় মানুষের বাড়িতে, সড়কের ধারে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যেত। শীতকাল আসলে গাছিরা সন্ধ্যায় গাছ কেটে হাঁড়ি বসিয়ে ভোরে রস বিক্রি করত। এখন গাছ নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে দু’একটি খেজুর গাছ থাকলেও তাও সবল নয়। দুর্বল প্রকৃতির গাছগুলোতে আগের মতো রস পাওয়া যায়না। তাই খেজুর রস সংগ্রহ করা বন্দ করে দিয়েছে গাছিরা।

বর্তমানে গাছিরা পরিবেশ দূষণকে দায়ি করে বলেন, আগে পরিবেশ ছিল ভালো, প্রতিটি ফল মূলের গাছে ছিল ফুলে ফলে ভরা। বিভিন্ন পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ে ফল মূলের গাছে আগের মতো ফল ধরে না। আগে সকালে হাঁড়ি নামিয়ে রস নিয়ে যাওয়ার পরও গাছে ফোঁটায় ফোঁটায় অবিরত ঝড়তে থাকত ফের হাড়ি বসানো পর্যন্ত।

খেজুর রস সংগ্রহকারী (গাছি) ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশার পালোয়ান বাড়ির জাহাঙ্গীর বলেন, ২০১৬/১৭ সালে আমার ৩০টি গাছ থেকে দৈনিক রস সংগ্রহ হতো প্রায় ১২০ লিটার। আর এ বছর এসে সংগ্রহ হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ লিটার। তিনি আরও বলেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন দূষণে গাছের শক্তি কমে গেছে।

তার মতে আগে প্রচুর খেজুর গাছ ছিল অত্র এলাকায়, কিন্তু পরিবেশ দূষণ ও গাছের ব্যাপারীরা ব্রিকফিল্ডের জন্য মালিকদের কাছ থেকে গাছগুলো লাকড়ি হিসেবে কিনে নেয়ার ফলে খেজুর গাছ ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।

 

এক সময় প্রতি হাড়ি (৪ লিটার) খেজুর রস বিক্রি হতো ৫ টাকায়। আর গুড় বিক্রি হত প্রতি হাড়ি ১৫ থেকে ২০ টাকায়। বর্তমানে সে খেজুরের রস প্রতি হাড়ি (৪লিটার) বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। অনেক জায়গাতে ১৫০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। গুড় বিক্রি হয় প্রতি হাড়ি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়। তিনি আরো জানান, রসের চাহিদা অনেক, কিন্তু এরপরও চাহিদা মতো দেয়া যায় না, অনেকে রসের জন্য ঝগড়াও করেন। পালা করে করে রস দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। রসের পিঠার মজাই আলাদা বলে বছরে একবার প্রতিটি পরিবারে রস সংগ্রহ করে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ভাপা পিঠা,গুরা পিঠা, চিতল পিঠা, পাটিসাপটা,হাতজারা পিঠা খেয়ে থাকেন। আবার অনেকেই আপন জনের বাসায়ও নিয়ে যান মজাদার খেজুর রস। বিকাল বেলায় অনেক কিশোর কিশোরী খেজুর গাছ থেকে ফোঁটা ফোটা রস খেতেন। ওই দিন আর পরিবেশ খেন শুধুই সৃতি। খেজুর রস পানের আগ্রহ কোনো কালেই যেন বিলুপ্ত না হয় সেজন্য পরিবেশ বান্ধব এই খেজুর গাছ লাগানো ও বনবিভাগ কর্তৃপক্ষের যথাযথ ভূমিকা নেয়ার দাবি জানান গ্রাম বাংলার প্রবীনেরা।