সবার জীবনে আনন্দের কিছু মুহূর্ত আসে। যে আনন্দ মুহূর্তের স্মৃতি কখনো ভুলা যায়না। ঠিক তেমনিভাবে কিছু কষ্টের মুহূর্ত আসে যার স্মৃতি ও কোনদিন ভুলা যায় না। কিছু পাওয়ার আনন্দ থাকে যা ব্যক্ত করা যায় না। কিছু না পাওয়ার কষ্ট থাকে যা কখনও বোঝানো যায় না।
না জানা এই মনে বারে বারে প্রশ্ন জাগে জীবনে আনন্দ আর পাওয়া টাই বেশি? নাকি কষ্ট আর না পাওয়াটাই বেশি? তবুও যেন জীবনের হিসাবের খাতা মিলাতে পারেনা অনেকেই । আর উত্তরও আমার জানা হয়না।
তখন মাঝে মাঝে মনে হয় এত উত্তর মিলিয়ে কি হবে? আমি তো খারাপ নেই। একরকম চলে যাচ্ছে! ভালো আছি। কিন্তু তারা? তারা কেমন আছে? যারা ওই ছোট্ট খুপরিতে রাত কাটাচ্ছে, দিনের পর দিন পার করছে, বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছে অসহায়ভাবে।
আমাদের সমাজে না খেয়ে না পরে জীবন পার করছে, অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তখনের ওই অবসর সময়টুকু তারা কি আমার মত বসে বসে নেয়ামতের তৃপ্তির ঢেকুর তুলে এই সৌখিন ভাবনা ভাবছে যে আমি কেমন আছি ? নাকি ভাবছে এর পরের বেলার আহার কি হবে,?
আমরা নিজেদের মতো নিজেরা ভালো থাকতে চেষ্টা করি, তাদের নিয়ে একটু ভাবার সময়ও আমাদের হয় না। তাদের এই অসহায় দৃষ্টি আমাদের দিকে পড়লেও যেন আমরা বিরক্ত বোধ করি। বিরক্ত ভঙ্গিতে মুখ ফিরিয়ে নেই। শুধু আমরা ভালো থাকতে চাই আমাদের মত করে।
তাদের ওই দুঃখের কথা ভাববার ফুরসত ও আমাদের নেই। ভাবতে গেলে বোধ হয় আমরাও ওই দুঃখের ভাগিদার হয়ে যাব আজ। আমাদের ভাবনা এমন,আহ কতই না সুন্দর আমাদের বিবেক!! বর্তমান সমাজের অসহায় মানুষের জন্য আজ আমার লেখা।
নানিয়ারচরের ০৩নং বুড়িঘাটের বিশেষ অসহায় মানুষের কিছু কথা:-
বুড়িঘাট ১৭নং টিলার মো: সোহারাফ হোসেন:-
সোহরাফ হোসেন বাড়ি বুড়িঘাটের ১৭নং টিলায়,পেশায় দিনমজুর,ভাঙা টিনের চালায় দিন যাপন করছেন,অসহায় সোহরাফ হোসেন ভিটে মাটিটুকু নেই বললেই চলে বর্তমান পঙ্গু স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে কোন মতে জীবন যাপন করে যাচ্ছেন, একটি হুইল চেয়ারের অভাবে চলাফেরায় অনেক কষ্টে দিন যাপন করছেন পরিবারটি প্রতিবন্দ্বনী ভাতার টাকা কতটুকু চলতে পারে,আমি কারো প্রতি অভিযোগ করছি না,বলছি শুধু সরোজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে এরা কি মুজিব শত বর্ষের ঘর পায় না,নুন আনতে যাদের পানতা ফুরিয়ে যায় তাহেদ কি দেখার কেউ নেই,আপনি আজ রাজার হালে চলছেন ঘুরছেন,ছেলেমেয়েদের ভালো স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন ভালো কথা,একদিন আপনাকে জবাব দিতে হবে আপনার দ্বায়ীত্বের অবহেলায় একটি পরিবার নিশ্ব জিবন যাপন করছেন।
বুড়িঘাট ১৭নং টিলা কাউসার (পালন)
একদিন চলার পথে হঠাৎ দেখা ছেলেটির সাথে হালকা একটু ধাক্কা লাগলে অসহায় লোকটি মৃদু হেসে দিল। বলল ভাইয়া দশটা টাকা দিন ,প্রতিবন্দ্বী ছেলেটি ডাকনাম পালন,পিতৃহারা অসহায় ছেলেটি হাতের উপর ভর দিয়ে চলাফেরা করে,একটি আবদার করে বসল ভাইয়া আপনি তো লেখালেখি করেন,আমার জন্য কিছু একটি লিখে দেন,আপনাকে দোয়া করবো,আমি সাথে সাথে বললাম কি লিখবো ভাইয়া আমার যদি একটি হুইল চেয়ার ব্যাবস্থা করে দিতে পারেন তাহলে একটু চলাফেরায় সুবিধা হত।আমাকে যখন কথাগুলো বলছিল সমাজের অনেকেই তাকিয়ে আছে কি বলছে আমার সাথে,সমাজের দোষ দিতে চাইনা,দিতে চাই সমাজ ব্যাবস্থাকে,যারা শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে,অসহায় লোকগুলো কিভাবে থাকছে,কিভাবে খাচ্ছে,ছেলেটির মিষ্টি মুখের কথাগুলো মিষ্টি হলেও কথাগুলো অনেক বেদনাদায়ক । দেখি শার্টে ময়লা ঝাড়ছে। সামান্য শীতের কাপড়টুকুও নেই। আমার সেদিন সামর্থ না থাকলেও লিখতে পারবো এইটুকু আশ্বস্ত করে আসছিলাম।
বুড়িঘাট ১৮নং টিলার মোছা: করফুল নেছা:
বিধবা নারী করফুল নেছা,ভাঙা ঘরে বসবাস স্বামী হারিয়েছেন অনেক আগেই,অনেক কষ্টে দিনতি পাত এবারে মুজিব শতবর্ষের ঘরটুকু ভাগ্যে নেই,তার অশ্রুজলে দীর্ঘশ্বাসে কথাগুলো বলছিল,সমাজে যাদের আছে তারাই শুধু পায়,আমি অসহায় প্রধানমন্ত্রী অসহায়দের ঘর দিচ্ছে আরো কত কি দিচ্ছে ? আমি তো পেলাম না,আমার বর্তমান ও পিছনের কষ্টের দিনগুলো এলাকার সবাই জানে।আমার প্রতি একটু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিন।আমি কথাটা যদিও তখন বুঝিনি তবে এখন একটু বুঝতে পারি। আহ কতই না কষ্ট লুকায়িত ছিল ওই ছোট্ট একটি কথার মধ্য বিধবা নারীটি বলতে গিয়ে এক রকম, কেঁদেই দিলেন।
পূর্ব হাতিমারার অন্ধ নারী মায়ানন্দী চাকমা:
অসহায় মায়ানন্দী চাকমা অন্ধ একজন বৃদ্ধ মহিলা,বুড়িঘাটের পূর্ব হাতিমারায় বসবাস,ছেলে মেয়ে দুইজন,পাহাড়ের মাচান ঘরে তার বসবাস,ভাঙা মাচানে শীতের রাতে কষ্টে পার করছেন এই বৃদ্ধ,এলাকাবাসীর কোন রকম সাহায্যে চলছে তার জীবন,অন্ধ থাকায় চলাফেরা অসুবিধা হয়,আল্লাহ আমাদের সবকিছু দিয়েছেন,যার কোন অঙ নেই সেই বুঝে কতটা সে অসহায়,ভাঙাঘরে বসবাস করলেও কারো চোখে পড়েনি মুজিব শতবর্ষের একটি ঘর সে কি প্রাপ্য ছিল না,নাকি অসহায়দের পক্ষে কেউ থাকে না,নাকি সমাজে বিবেকবান লোকের অভাব পড়েছে,সরোজমিনে না দেখলে করুন অবস্থা বুঝতে কষ্ট হবে?পাহাড়ি ভাষা কথাগুলো বলছিল আর কাদছিল বৃদ্ধ মায়ানন্দী চাকমা।
উত্তর হাতিমারার বাক প্রতিবন্ধী সুরবালা চাকমা:
বাকপ্রতিবন্ধী সুরবালা চাকমা আনুমানিক বয়স ৭০,এমনি কপাল তার প্রতিবন্ধী ভাতা তো দূরের কথা,কিছুই জোটেনি এ পর্যন্ত বাক প্রতিবন্ধী হওয়াতে কারো সাথে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না,অসহায় সুরবালা চাকমাকে প্রতিবেশীরা কিছু দিলে সেটাই খেয়ে জীবন যাপন করছেন,স্বামী হারা এ নারীর করুন দৃশ্য সরোজমিনে না দেখলে বুঝতে কঠিন হবে।
বুড়িঘাটের ১৬ নং টিলার অসুস্থ বাদশা মিয়া:
অসুস্থ বৃদ্ধ বাদশা মিয়া,স্বামী ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বসবাস, অনেক সময় না খেয়ে থাকেন,সন্তান থাকলেও তারা দেখাশুনা করেননা,অর্থের আভাবে ভালো চিকিৎসাটুকু থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন,অসুস্থ্ বাদশা চলাফেরায় অচল অবস্থা,এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,মহান আল্লাহ্ তায়ালা ছাড়া আর কেউ নেই।করোনায় তেমন কেউ সাহায্য টুকু করেনি,অসহায় অবস্থায় বিছানায় অনেকদিন পড়ে আছি,এখন সমাজের বিত্তবানের দিকে তাকিয়ে আছি,আমার চিকিৎসা ও ওষুধের কিছু অর্থ দান করলে আমি সুস্থ হয়ে উঠবো।
সমাজের কাছে প্রশ্ন?
এদের খুশি কত অল্পতেই, একই পৃথিবীর বাসিন্দা মোরা, তবুও তাদের পথ চলা টা ভিন্ন , কিন্তু এমন কেন? কার জন্য? বা কাদের জন্য? কে দায়ী এর জন্যে?
উত্তর গুলো বোধহয় খুব কঠিন, তাই জানি না। এসব ভাবলে সব কিছু এলোমেলো লাগে , ক্ষণিকের এই দুনিয়াকে একেবারেই মিথ্যে মনে হয়, কি লাভ এত এত স্বচ্ছন্দময় জীবন যাপন করে ।আজ এই দুনিয়াতে আমরা খুশি, এবং মিথ্য সফলকাম,আর ওই লোক গুলো অসহায়, হয়তো পরকালে তারাই হবে সফলকাম, আর আমরা হবো হতভাগা বা হতভাগি। তাহলে আসল সফলকাম আমরা ?নাকি তারা?
আল্লাহর শুকরিয়া ওই অসহায় মানুষগুলোর থেকে আমরা অনেক ভাল আছি, তবে আমাদের এই ভালো থাকা যেন আমাদের অভিশাপ না হয়ে দাঁড়ায় । আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে পরকালে ও আমাদের ভালো থাকতে হবে ,এই ভাবনা টুকু আল্লাহ আমাদের অন্তরে গেঁথে দিক।
এই অল্প সময়ের পৃথিবীতে কিছু প্রাপ্প পাওয়া কিছু কষ্ট কিছু খুশি, এখন প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে সুখ-শান্তি আর কষ্টের মধ্যেই পার হয়, তবে কম অথবা বেশি, এই কষ্ট দুঃখের মধ্যে থেকে, অথবা সুখ-শান্তির মধ্যে থেকেও পরকালেও যেন আমরা সফল হতে পারি আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দিন। আল্লাহ আমাদের কবুল করে নিক। সঠিকভাবে জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুক। আর ওই অসহায় মানুষগুলো, যারা ভালো নেই তাদেরকে আল্লাহ ভাল রাখুক। আমিন।