“মা কথাটি ছোট্ট অতি, জেনে রেখ ভাই, মায়ের চেয়ে দরদী আর ত্রি-ভুবনে নাই।” মা শব্দটি খুবই ছোট। কিন্তু এর আপেক্ষিক গুরুত্ব অসীম। মা অপরের চোখে যতই মন্দ হোক না কেন, সন্তানের চোখে তিনি পরম শ্রদ্ধার ব্যক্তি। পক্ষান্তরে একজন সন্তানের নিকট তার মা হলো- পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। মা হলো সন্তানের সবচেয়ে বেশি নিরাপদ আশ্রয়স্থল। ঘনিষ্ঠ কোন বন্ধুও যদি মা সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করে, সেক্ষেত্রে ওই বন্ধু কোন বাচ-বিচার ছাড়াই চরম শত্রুতে পরিণত হয়। তদ্রƒপ কোন জাতশত্রুও যদি মায়ের প্রশংসা করে, সেক্ষেত্রে সেও ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠে। তাই মা, মায়ের ইজ্জত, স্বাস্থ্য ও সম্পদ রক্ষা করা প্রত্যেক সন্তানের অতি কর্তব্য। আর মাতৃভাষা হলো- কোন ব্যক্তি, জাতি ও দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, স্বকীয়তার ধারক ও বাহক। তাই মাতৃভাষাও প্রত্যেক মানুষের পরম ধন। তাই তো ১৯৫২ সালে বাঙালি সন্তানরা মাতৃভাষা রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছে। তাই তো কবি ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত তার মাতৃভাষা কবিতায় উল্লেখ করেছেন- “মাতৃসম মাতৃভাষা পুরালে তোমার আশা/তুমি তার সেবা কর সুখে।” এ ছাড়া মাতৃভূমি হলো প্রত্যেক মানুষের নাড়ি-পোতা ভূমি। এ মাটিতেই জন্ম, এ মাটিতেই খেলা করে শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যৌবন খুইয়ে এক সময় এ মাটিতেই জীবনের শেষ ঘুম দেয়। তাই এ মাটি পরম আপনের চেয়েও আপন। তাইতো সাহিত্য ও ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে- “বিনা যুদ্ধে নাহি দেব, সূচাগ্র মেদিনী।” যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। ত্রিশ লক্ষ বাঙালির জীবন আত্মোৎসর্গ আর দুই লক্ষাধিক মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমাদের প্রাণ-প্রিয় মাতৃভূমিকে হায়েনাদের হাত থেকে রক্ষা করেছি। পরিশেষে, মা মাতৃভাষা আর মাতৃভূমি সকলের পরম ধন। তাই এগুলো রক্ষা করা প্রত্যেকের জন্মগত, ধর্মীয় ও নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেই সাথে সেগুলোর অবমাননাকর কাজ থেকে সবাইকে বিরত থাকা উচিত। চলছে মহান ভাষার মাস। ভাষা ও ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান দেখানো আমাদের সকলের দায়িত্ব।
কামরুল হাসান (লেখক: সাংবাদিক ও ডিরেক্টর- বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব, ঢাকা।)