ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১

মিথ্যা ঘোষণায় বেনাপেল বন্দরে ১৬ হাজার কেজি সালফিউরিক এসিড আমদানি

মনির হোসেন, বেনাপোল (যশোর) : | প্রকাশের সময় : বুধবার ১৭ জুলাই ২০২৪ ০৭:৫১:০০ অপরাহ্ন | খুলনা

যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত ১৫ হাজার ৭৫০ কেজি সালফিউরিক এসিড জব্দ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গত রোববার (১৪ জুলাই) পন্য চালানটি জব্দ করা হয়। যার বিল অব এন্ট্রি নম্বর সি-৫৫৯০৪। পণ্যটির ইনভয়েজ মূল্য ৯ হাজার ৬০৭.৫ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ১১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ।

 

কাস্টমস ডিউটিসহ পণ্যচালানটির মূল্য প্রায় ২১ লাখ টাকা বলে কাস্টমস সূত্রে জানায়। পন্য চালানটি ভারত থেকে চট্রগ্রামের রিফ লেদার লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান আমদানি করেছে। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো ভারতের কেরালার ক্যাটালাইস কেমিক্যাল ইন্ডাট্রিজ। পন্য চালানটি বন্দর থেকে খালাশের দায়িত্বে ছিল বেনাপোলের মোশারফ টেডার্স নামে সিএন্ডএফ এজেন্ট।

 

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চট্রগ্রামের রিফ লেদার লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান গত ২ জুলাই ফরমিক এসিড নাম ঘোষনা দিয়ে ১৫ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন সালফিউরিক এসিড আমদানি করেন। পন্য চালানটি বন্দরের টিটিআই মাঠের ৩৮ নম্বর শেডের মধ্যে রাখা হয়। বেনাপোলে দায়িত্বে নিয়োজিত একটি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তথ্যের ভিত্তিতে পন্য চালানটি কায়িক পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে ক্যামিকেল ল্যাবে পাঠানো হয়। ল্যাব টেস্টে ফরমিক এসিডের পরিবর্তে সালফিউরিক এসিড পাওয়া যায়। আর সালফিউরিক এসিড আমদানী করতে হলে এলসি খোলার আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া সালফিউরিক এসিড আমদানী করা সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। এ পন্য চালানে মোটা অংকের শুল্ক ফাকির ঘটনা ঘটেছে। ফরমিক এসিডের মোট শুল্কহার ৩৭% এবং সালফিউরিক এসিডের শুল্কহার ৭৮%। ঘোষনা বহিভুত পন্য আমদানী ও শুল্ক ফাঁকির প্রবনতা থাকায় পন্য চালানটি সাময়িক আটক করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সিএন্ডএফ এজেন্ট মোশারফ টেডার্সের সত্তাধিকারী মোশারফ হোসেন জানান, আমার আমদানীকারক ফরমিক এসিড আমদানী করেছেন। পন্য চালানটি বেনাপোলে বন্দরে প্রবেশ করার পরে কাস্টমস সেটা ল্যাবে পরীক্ষা করে ফরমিক এসিডের পরিবর্তে সালফিউরিক এসিড পেয়েছেন। এখানে আমার কোন ভুল নেই। ভুল করেছেন আমদানীকারক। এর সকল দায়িত্ব আমদানী কারকের। তিনি বলেন, আমদানীকারক কি আমদানী করছেন সেটা তিনিই ভালো জানেন। আমরা মাল ছাড় করনের জন্য কাজ করে থাকি। আমদানী করা পন্যের ভেতর কি আছে, কি নেই সেটা পন্যটি পরীক্ষার পরে বুঝতে পারি। তবে আমার আমদানিকারক এই পণ্য চালানটি পুনরায় ল্যাব টেস্টের জন্য বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বরাবর আবেদন করেছেন।

 

বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম জানান, মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির বিষয়টি তিনি শুনেছেন। কাস্টমস কর্মকর্তারা এ বিষয়ে আমদানিকৃত পণ্য চালানটি তদারকি ও করণীয় বিষয় দেখেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

 

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার আব্দুল হাকিম জানান, আমদানিকৃত কোন পণ্যে অনিয়ম পেলে সেটা তো আটক করতেই হবে। চট্টগ্রামের রিফ লেদার লিমিটেড নামে এক আমদানিকারক ফরমিক এসিড ঘোষণা দিয়ে এই পণ্য চালান আমদানি করেন। 

 

পণ্যটি বেনাপোল বন্দরে আসার পর ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। ল্যাব পরীক্ষার রিপোর্টে ফরমিক এসিডের স্থলে সালফিউরিক এসিড পাওয়া গেছে। সালফিউরিক এসিড আমদানি করতে হলে এলসি খোলার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে কোন অনুমোদন তিনি নেননি। আমদানি করার পূর্বে এটা একটা বড় ধরনের অপরাধ। তিনি বলেন, বর্তমান বেনাপোল কাস্টমস হাউসে অনিয়মে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। কেউ অনিয়ম করলে কোন প্রকার কাউকে ছাড় দেয়া হয় না বেনাপোল কাস্টমস হাউসে। এ পন্য চালানের ক্ষেত্রেও কোন ছাড় দেয়া হবে না বলে তিনি জানান।