ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

রাজশাহীতে শিশুদের বিনোদনকেন্দ্রটি ধুঁকছে ঠিকাদারের অবহেলায়

রাজশাহী ব্যুরো: | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১৮ জানুয়ারী ২০২২ ০৪:০৫:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

রাজশাহী অঞ্চলের শিশুদের বিনোদনের জন্য ২০০৪ সালে নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় গড়ে তোলা হয় শহীদ জিয়া শিশু পার্ক। পার্কটি চালু হওয়ার পর শিশুদের পাশাপাশি বয়স্কদেরও বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

 

কিন্তু দেড় যুগেও এই পার্কটিকে আর ঢেলে সাজানো হয়নি। এমনকি পুরনো রাইডগুলোর মধ্যে অন্তত ৭টি রাইড অকেজো হয়ে পড়ে আছে। বাকি ১১টিও ধুঁকছে সংস্কারের অভাবে। ফলে ক্রমেই দর্শনার্থী হারাচ্ছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন অন্যতম এই বিনোদনকেন্দ্রটি। যদিও পার্কটি লিজ দেওয়া হয়েছে ’ডমেষ্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেনোলজি সার্ভিসেস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। তারাই পার্কটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। কিন্তু সেটিও ব্যর্থ হয়েছে। ফলে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিশু-কিশোরদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা রাইডগুলো। ফলে আনন্দ করতে এসে অনেটা নিরাশ হয়েই বাড়ি ফিরছে শিশুরা।

 

এদিকে ১০ বছরের লিজের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৫ বছর আগে ২০১৬ সালে। ২০০৬ সাল থেকে এখনো পার্কের দর্শনার্থীদের নিকট থেকে টাকা আদায় করে চলেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ’ডমেষ্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেনোলজি সার্ভিসেস’। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। সেই সুযোগে আয় হওয়া লাখ লাখ টাকাও তোছরুপ করছে তারা।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চারিদেকে সাজানো-গোছানো পরিবেশ হলেও পার্কের ভিতরটা যেন রুগ্নপ্রায়। দেড় যুগ ধরে পার্কটিতে নতুন কোনো রাইড বা নতুনত্ব আসেনি। সংস্কারও হয়নি এই সময়ে। ফলে ধুলো-মাটি ও নষ্ট হওয়া রাইডগুওেলাতে অনেকটা বিশ্রি অবস্থাতেও পরিণত হয়েছে কোথাও কোথাও। পার্কের ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে দুটি বাঘের মুর্তি। এই মূর্তিগুলোতেও রং-তুলির আঁচড় পড়েনি দেড়যুগে। ফটকের সাথেই রয়েছে একটি থ্রিডি গ্যালারী। কিন্তু উন্নতমানের চশমা ও ব্যাটারির সংকটের কারণে চালুর কয়েক বছর পর থেকেই নষ্ট হয়ে গেছে এই গ্যালারিটি।

 

পার্কের মাঝামাঝি রয়েছে মাথার ওপর দিয়ে যাওয়া মনোরেইল স্কাই বাইক রাইড। এটিও নষ্ট হতে বসেছে সংস্কারের ওভাবে।

সামনে উত্তর দিকের প্রাচীর ঘেঁষে রেললাইনের চলে গেছে সোজা। সেটি দিয়ে একটি ছোট আকারের বিদ্যুত চালিত রেলগাড়ী চলছে ঝমাঝম। তবে এখনো শিশুদের বিনোদন দিয়ে যাচ্ছে এ রেললাইনটি। রেলগাড়ীতে বসে শিশুরা আনন্দে মেতে উঠছে। রেললাইনের পাশে রয়েছে গোলাকার বাইক রাইড। সেখানে বসে প্যাডেল করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে শিশুরা। এখানেও শিশুরা বেশ উচ্ছ্বশিত। মূল ফটক দিয়ে ঢুকে একটু ডানে এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে ‘কিডি রাইড’ বা শিশুদের জন্যে বিভিন্ন রাইড। এখানে ছোট ছোট কয়েকটি রাইডে শিশুরা খেলা করতে দেখা গেলেও অধিকাংশই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাউন্সি ক্যাসেল। যেখানে উঠে লাফালাফি করতে পারত শিশুরা। এমনকি কিডি রাইডের সামনে ফাঁকা একটি জায়গা রয়েছে, যেখানে বড় আকৃতির বাউন্সি ক্যাসেল স্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু গত দেড় যুগেও হয়নি।

 

বাউন্সি ক্যাসেল থেকে একটু পূর্ব দিকে এগুলে সামনে পড়বে ‘ফ্রগ জাম্প’। ব্যাঙের মতো দেখতে এই রাইড, যেটিতে উপরে উঠে সারা পার্কটির দেখা যায়। সেখান থেকে পূর্ব দিকে আছে ‘ফ্লুইম রাইড’। এই রাইডের আকর্ষণ হলো ছোট ছোট গাড়িতে করে শিশু-কিশোররা বৈদ্যুতিক মোটরের সাহয্যে আস্তে ওপরে উঠে যেত। এর পর দ্রুতগতিতে আছড়ে পড়ত পানির মধ্যে। কিন্তু কারো কিন্তু কারও শরীরে পানি ছিটকে পড়ত না। একটি সাহসি শিশু-কিশোরদের এই রাইডটিও বন্ধ হয়ে আছে প্রায় ৫ বছর ধরে।

 

পার্কের মাঝখানে বেশ খানিক জায়গা নিয়ে তৈরী করা হয়েছে লেক। লেকটিতে রয়েছে ‘প্যাডেল বোট’ রাইড এবং মিনি রেল কারের জন্য তৈরী করা রেললাইন। কৃত্রিম একটি জলপরি এবং রেললাইনের ওপর দিয়ে তৈরীকৃত টানেলটি দর্শকদের বেশ আকর্ষণ করে।

 

পার্কেও রেল স্টেশনের পশ্চিম পাশে আছে ‘বাম্পার কার’ রাইডের জায়গা। তবে রাইডটি প্রায় ৯ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। তার পাশে অবস্থিত ‘টি কাপ’ রাইডটিও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।

 

এ পার্কে ঘুরতে আসা শিশু মোসাব্বের হোসাইন বলছিল, ‘পার্কটিতে অনেক সুন্দর সুন্দর রাইড আছে। কিন্তু সবই পুরনো। আবার অনেকগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এগুলো নতুন করে করা হলে আরো অনেক ভাল লাগত। আমরা অনেক মজা করতে পারতাম।’

 

পার্কে বেড়াতে আসা রাজশাহীর পুঠিয়ার আকবর আলী বলেন, ‘পার্কটির পরিবেশ অনেক সুন্দর এবং গোছালো। শিশুদের জন্যও বেশ কিছু ভাল রাইড রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ রাইডই পুরনো এবং নষ্ট। ফলে শিশুদের বিনোদন দিতে এসে তারা আরও মন খারাপ করছে।’

 

নগরীর উপশহর এলাকার শিশু নুজাহত পারভীন বলে, ‘ছোট শিশুদের রাইডগুলোর অধিকাংশই নষ্ট। তাহলে এথানে এসে আমরা মজা পাবো কিভাবে?

 

অপরদিকে স্থানীয় বাসিন্দা নাজমুল হক বলেন, ‘মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও কিভাবে এতোদিন ধরে পার্কটিতে ঠিকদারী প্রতিষ্ঠান ভোগ-দখর করে তা বোধগম্য নয়। সেই সুযোগে তারা দর্শনার্থীদের নিকট থেকে আয়কৃত লাখ লাখ টাকা তোছরুপ করছে। অথচ পার্কটিতে কোনো সংস্কার করেনি এই সময়ে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

 

এদিকে পার্কটিতে দায়িত্বরত ’ডমেষ্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেনোলজি সার্ভিসেস’ নামের টিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকগুলো রাইড নষ্ট হয়ে আছে। এগুলো আমাদের সংস্কার করার কথা। আমরা সেগুলো চেষ্টা করেছি। কিন্তু একেবারে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে অধিকাংশই সংস্কার করা যায়নি। তবে লিজের মেয়াদ শেষ হলেও আমরা নতুন করে চুক্তি করার চেষ্টা করছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এখন যা আয় হয়, সেই টাকার কিছু অংশ সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়। বাকিটা আমরা রেখে দেয়।’

 

জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী খায়রুল বাশার বলেন, ‘শহীদ জিয়া শিশু পার্কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু অর্থাভাবে আমরা সেটি করতে পারছি না। টাকা পেলেই পার্কটিতে কাজ শুরু করা হবে। নতুন নতুন আধুনিক রাইড বসানোসহ আরো যুগোপযোগী করা হবে পার্কটিকে। পাশাপাশি লিজের বিষয়টি ঠিক করা হবে।’