বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান কতক্ষণ খোলা রাখা যাবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে সময়সীমা। ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ তালিকা কার্যকর হবে। নতুন নিয়মে সাধারণ ওষুধের দোকান বন্ধ করতে হবে রাত ১২টার মধ্যে। হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত ওষুধের দোকান খোলা রাখা যাবে রাত ২টা পর্যন্ত। ওষুধের দোকানের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আহসান জুয়েল বলেন, আমার বৃদ্ধা মা অসুস্থ। আমার দুই বাচ্চা। মায়ের জন্য অনেক ওষুধ কিনতে হয়। এই বয়সে যে কোনো মুহূর্তে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। রাত ১০টা ১১টার পর সাধারণত অধিকাংশ ওষুধের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। দু-একটা দোকান খোলা থাকে। এখন সেগুলোও বন্ধ থাকলে জরুরি প্রয়োজনে ওষুধ পাবো কোথায়। ওষুধের যে পরিমাণ দাম বেড়েছে একসঙ্গে অনেক ওষুধ কিনে রাখার সামর্থ্যও এখন নেই।
ধানমন্ডি এলাকার একটি ফার্মেসির কর্মী মাসুদ বলেন, আমাদের দোকানে এত আলো কিংবা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচের কিছু নেই। দুটা ১০ ওয়াটের বাল্ব আর একটা ফ্যান চলে। এলাকার মানুষ জানে একটা দোকান খোলা থাকে, সেজন্য জরুরি প্রয়োজনে এখানে আসে। এছাড়া অধিকাংশ ফার্মেসি রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ সিটি করপোরেশনের এই সিদ্ধান্তকে হঠকারী বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, একটি সিটি করপোরেশন এ ধরনের কাজ করতে পারে না। কারণ ওষুধের দোকান জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম সরবরাহ করে। যে এলাকায় যে দোকানটা রাতে খোলা থাকে সে দোকান সম্পর্কে এলাকার বাসিন্দাদের এক ধরনের নির্ভরশীলতা থাকে। তারা জানে এ দোকানটা রাতে খোলা থাকে, আমি জরুরি ওষুধটা এখান থেকে পাবো। এটা যদি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় বিপাকে পড়তে হবে। এছাড়া গভীর রাতে অন্য এলাকায় যাওয়াটাও ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, শপিংমলগুলোতে দোকানদাররা অসংখ্য বাতি জ্বালিয়ে রাখেন। ওষুধের দোকানে কিন্তু তেমনটা নেই। এছাড়া বর্তমানে এনার্জি বাল্বগুলোতে বিদ্যুৎ অনেক কম খরচ হয়। ওষুধের দোকানে তেমন বিদ্যুৎ অপচয় হওয়ার কথা নয়।
‘সিটি করপোরেশনের মূল কাজ হলো তার এলাকার মানুষদের সেবা দেওয়া। সেখানে অকল্যাণকর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। এই সিদ্ধান্ত একেবারেই হঠকারী। এটি দ্রুত প্রত্যাহার করা উচিত। এমনকি এজন্য দুঃখপ্রকাশ করা উচিত। এই সিদ্ধান্তের ফলে একজন লোকেরও যদি কষ্ট হয় অথবা জীবন বিপদে পড়ে এর দায় সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে।’
এই নিয়মের সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘মানুষের অসুস্থ হওয়ার সময়ও বেঁধে দিতে চায় সরকার। মানুষ দিন-রাতের কোন সময়ে গুরুতর অসুস্থ হবে, একথা কেউ বলতে পারে না। গভীর রাতে অসুস্থ হলে তখনই তার ওষুধের দরকার হতে পারে, অস্ত্রোপচারের জন্য ওষুধসহ অন্য চিকিৎসা সরঞ্জামের প্রয়োজন হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ওষুধ কেনা নিয়ে ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। মানুষ কখন অসুস্থ হবে, কখন ওষুধ কিনবে, কখন ওষুধ খাবে—সেই সময় বেঁধে দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই সরকারের।’