সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জে ইউপি সদস্য প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ায় একটি বাড়ির চার পাশে কাটা তারের বেড়া দিয়ে দুটি পরিবারের লোকজনকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ঐ ইউপি সদস্য প্রার্থী সহ তার লোকজন। দীর্ঘদিন ধরে একমাত্র চলাচলের একমাত্র রাস্তা ও বাড়ির চার পাশে স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারের লোকজন জোরপূর্বক কাটা তারের বেড়া দেওয়ায় ভুক্তভোগী দুটি পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বাড়িটি অবরুদ্ধ করে রাখায় ভূক্তভোগী পরিবারের লোকজন সহ তাহাদের গৃহপালিত গভাদি পশু চলাচল করতে পারছে না। এতে করে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পরিবারের লোকজনদেরকে।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের কাঠালিয়া গ্রামের তৌফিক মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটি একেবারেই অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, বাড়ির চার পাশে কাটা তারের বেড়া দিয়ে একেবারে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। সেই সাথে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন আছে, এই দুটি পরিবারকে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগও দিতে বাঁধা প্রদান করা হচ্ছে। বাড়িতে অনেক গবাদি পশু গুলাও মানুষের মতো অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে কোন ভাবেই বের হতে পারছেন না।
ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্য মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে তৌফিক মিয়া জানান, গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে কামাল হোসেন, সদ্য বিদায়ী তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে একজন ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে
তিনি প্রতিপক্ষের কাছে পরাজিত হওয়ায় আমাদেরকে বলেন আমরা তাঁকে ভোট দেই নি, তাই তার জায়গা দিয়ে আমরা চলাল করতে পারবো না। এই কথা বলে গত রবিবার সকালে আমাদের বাড়ির চার পাশে তার লোকজনকে নিয়ে কাটা তারের বেড়া দিয়ে আমাদের বাড়িকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এই সময় গ্রামের অনেকেই বাঁধা নিষেধ করলেও তিনি কোন কর্ণপাত করেননি। আজ ৪দিন ধরে আমরা একঘরে অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। এতে পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে পরিবারের কোন সদস্যই জরুরী কাজে বসত বাড়ী হতে বের হতে পারছি না। এমনকি আমার পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশপাশি পরিবারের সদস্যদের অন্যত্র হতে নলকূপের পানি সংগ্রহ করতে বাঁধা প্রদান করে আসতে থাকে। আমার বাড়ীতে নলকূপ নেই, বাহির থেকে এনে আমি নলকূপের পানি পান করতে পারছিনা, ডোবার পানি ২ দিন যাবৎ খাইতেছি, আপনারা আমার জন্য কিছু করেন।
অভিযুক্ত কামাল হোসেন জানান, আমার জায়গায় আমি বেড়া দিয়েছি। জায়গাটি আমার, সে যে দিকে পারোক সে দিকে যাক। আমার কিছু যায় আসে না। আমি আমার জায়গায় রাস্তা বন্ধ করেছি। কার বাপের কি।
শিমুলবাক ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি গ্রামবাসীকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছি। মানবিক বিবেচনায় রাস্তা হতে কাটা তারের বেড়া উঠাইয়া নেওয়ার জন্য প্রতিপক্ষকে অনুরোধ করেছি। তারা শুনেনি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ্জ জামান অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আজ সকাল বেলা অভিযোগ পেয়েছি। ইতিমধ্যে আমি থানা পুলিশকে অবগত করে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। থানা পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তবে বিকেলেই স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রচেষ্ঠায় উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে কাটা তারের বেড়া কেটে ঐ পরিবারের লোকজনকে অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত করা হয়।
শান্তিগঞ্জ থানার এসআই লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এই বাড়িটির লোকজনকে মুক্ত করে দেন। এসময় স্থানীয় লোকজনকে দিয়ে কাটা তারের বেড়া কেটে চলাচলের রাস্তা করে দেয় পুলিশ।