ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যা মামলার তদন্ত আগামী এক মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৭ ডিসেম্বর।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) মামলার শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।
গণঅভ্যুত্থানের পর দেশত্যাগ ও ইন্টারপোলের সহযোগিতা
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যেই ইন্টারপোলের সহযোগিতা চেয়েছে।
গণহত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ও অভিযোগ
একইদিনে ট্রাইব্যুনাল গণহত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের ১৩ জন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, এসব ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনের নির্দেশনা দিয়েছেন, পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সরাসরি সহায়তা করেছেন। তিনি আরও বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রসচিব এ ধরনের অপরাধে সরাসরি জড়িত ছিলেন। এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য।”
তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক আইনে প্ররোচনা দেওয়া, অপরাধের পরিকল্পনা করা, প্রতিরোধে ব্যর্থতা বা শাস্তি প্রদানে অবহেলা—এসবই গুরুতর অপরাধ।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও অভিযুক্ত ব্যক্তির তালিকা
গত ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এর মধ্যে শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা রয়েছেন।
পরোয়ানা জারি হওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ফুপাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এবং ভাতিজা ফজলে নূর তাপস। যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নামও তালিকায় রয়েছে।
তালিকায় আরও আছেন সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত।
অন্য আসামিদের হাজিরা
পরোয়ানা জারির পর, অন্যান্য মামলায় আটক ১৪ জনকে গত ২৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য আবেদন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল এই আবেদন মঞ্জুর করে এবং ১৮ নভেম্বর ওই আসামিদের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়।
তদন্তের দিকনির্দেশনা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই মামলাকে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে তদন্ত সংস্থাকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে। আগামী দিনে এই মামলার অগ্রগতি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে গভীর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বায়ান্ন/এমএমএল/এএস