রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনায় দেশের প্রতিটি হাসপাতাল-ক্লিনিক-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনমের সংরক্ষণের পদক্ষেপ চেয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
একইসঙ্গে প্রচার ও ভ্যাকসিন দেওয়া চিকিৎসকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্নত প্রশিক্ষণ এবং দেশে পরিবেশ উপযোগী এ জাতীয় ভ্যাকসিন উৎপাদনের পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।
সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে প্রয়োজনীয় প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হবে।
জনস্বার্থে মঙ্গলবার (২৫ জুন) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. বাহাউদ্দিন আল ইমরান জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে কাছে এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেশের বেশ কিছু জেলায় রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কারণে বিষয়টি নিয়ে দেশবাসী উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। অনেকে প্রচার করছেন যে সাপটি কামড় দিলে দ্রুত মানুষের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, রাসেলস ভাইপার সাপ মেরে ফেরার প্রচারণাও চালাচ্ছেন অনেকে। ‘রাসেলস ভাইপার খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করে। ফলে সহসা দেশের গ্রামাঞ্চলে এ সাপের আধিক্য মানুষের জন্য হুমকি তৈরি করবে’ বলে ব্যাপক প্রচারণা রয়েছে। ফলে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত ব্যাপক হারে প্রচারের প্রয়োজনীতা দেখা দিয়েছে।
‘স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর বা বিষ নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন উপাদানকে অ্যান্টিভেনম বলা হয়। সাপের কামড় বা দংশনের পরে দ্রুত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিলে, অ্যান্টিভেনমের অ্যান্টিবডিগুলো বিষকে নিষ্ক্রিয় করে। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁচে যায়। ’
‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কয়েকটি জেলায় রাসেল’স ভাইপারের কামড়ে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার কাছেই মানিকগঞ্জের কিছু এলাকায় গত তিন মাসে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে অন্তত পাঁচজন মারা গেছেন বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এরপর ভোলাসহ আরও কয়েকটি জেলায় এ ধরনের সাপ ধরে ফেলার সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। ফলে কৃষকেরা মাঠে ফসল উৎপাদন-আহরণের ক্ষেত্রে আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। ’
‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, দেশে প্রতিবছর অনেকে বিষধর সাপের কামড়ে মারা যান শুধুমাত্র সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়া, বিশেষ করে হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম না থাকার কারণে। কারণ, দেশে স্থানীয়ভাবে কোনও অ্যান্টিভেনম তৈরি হয় না। দেশে সাপের কামড়ের চিকিৎসায় এখন যেসব অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা হয় তা ভারত থেকে আসে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে, সাপের কামড়ের রোগীর চিকিৎসার জন্য স্থানীয় সাপ থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরি হলে তা সবচেয়ে কার্যকর হয়। অন্য দেশের অ্যান্টিভেনম এ দেশে শতভাগ কার্যকর নাও হতে পারে। কারণ, একেক দেশের সাপের প্রকৃতি একেক রকম। ভারতে যেসব সাপ থেকে বিষ সংগ্রহ করা হয়, সেগুলোর পুরোপুরি বাংলাদেশের সাপের সঙ্গে মেলে না। অথচ বছরের পর বছর ধরে ভারতের অ্যান্টিভেনম দিয়েই বাংলাদেশের সাপের কামড়ের রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অ্যান্টিভেনমকে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বললেও বাংলাদেশ এখনও নিজেদের সাপের বিষের অ্যান্টিভেনম বানাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ‘
‘দেশের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন নেই’ বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গত ২৩ জুন দৈনিক ভোরের কাগজে ‘রাজশাহীজুড়ে ‘রাসেল ভাইপার’ আতঙ্ক, নেই পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যা রাজশাহীসহ সারা দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য বড় আতঙ্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। ’
তাই এ নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে সারা দেশের হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম ভ্যাকসিন সংরক্ষণ, ভ্যাকসিন দেওয়া চিকিৎসকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে উন্নত প্রশিক্ষণ, দেশের অভ্যন্তরে পরিবেশ উপযোগী সাপের বিষের প্রতিরোধক ভ্যাকসিন উৎপাদনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে জানানো হয়েছে।