সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হলে সুস্থ রাজনীতি উপহার দেয়ার কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। সুস্থ রাজনীতি উপহার দিতে তিনি যেকোনো ধরণের ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত। অস্ত্রের মহড়া থাকবে না এখানে। পেশিশক্তি দেখিয়ে কেউ নেতৃত্ব দেখাতে পারবে না। শান্তির নগরী হবে সিলেট।
দৈনিক বায়ান্নকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও বিশিষ্ট শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুল নগর সাজানোর পরিকল্পনা, রাজনীতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি প্রভৃতি বিষয়ে কথা বলেছেন খোলামেলাভাবে। জানিয়েছেন, আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেটকে ডিজিটাল নগরীতে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটন খাতকে ঢেলে সাজাবেন। নান্দনিক শহরে পরিণত করবেন সিলেটকে।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় এই নেতা নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, সিলেট নগরীতে হেসে খেলে বড় হয়েছি। বলতে গেলে শৈশব থেকে ব্যবসার সাথে নিজকে জড়িয়েছি। সিলেটের মানুষের ভালোবাসায় নিজের পরিশ্রমে ব্যবসায়ী হিসেবে সফল। নিজের অবস্থান থেকে সমাজের অসহায়, অনাথ মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। যেখানেই থাকি দুর্যোগের সময় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। ব্যাপকভাবে সমাজের কাজ করার ইচ্ছে সৃষ্টি হয়। এই ইচ্ছা পূরণে প্রয়োজন বড় ধরণের একটি প্লাটফর্ম। সেই প্লাটফর্ম হচ্ছে রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দল হিসেবে সুস্থ রাজনীতি করছে পল্লীবন্ধু এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টি। দুই বছর আগে এই পার্টিতে যোগ দেন নজরুল ইসলাম বাবুল। যোগ দিয়েই তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য মনোনীত হন। রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সন্তুষ্টু হয়ে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক করেন বাবুলকে।
বাবুল বলেন, দায়িত্ব পেয়েই তিনি মহানগরীর ৪২ টি ওয়ার্ডের জাতীয় পার্টিকে ঢেলে সাজানোর পদক্ষেপ নেন। মাঠে গিয়ে দেখলেন দলের অবস্থা ভালো নয়। কিন্তু জাতীয় পার্টির অনেক কর্মী আছে। তারা ঘর থেকে বেড় হচ্ছেন না। ওযার্ড কমিটি গঠনের পদক্ষেপ নেয়া হলো। ঘোষণা দিলেন জাতীয় পার্টির সুস্থ রাজনীতি মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করবেন। এর পর থেকে ঘর থেকে বের হতে শুরু করলেন জাতীয় পার্টির কর্মীরা। শতশত কর্মী জাতীয় পার্টির কর্মী সমাবেশে যোগ দিতে শুরু করেন। ৪২ টি ওয়ার্ড কমিটি সফলভাবে গঠন করেন। ৫০০ মানুষের ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয় গত রমজান মাসে। কিন্তু দেখা গেলে ওই ইফতার পার্টিতে হাজারের উপরে কর্মী হাজির। ৫০০ জনের ইফতার হাজার মানুষ ভাগাভাগি করে খেয়েছেন। কোনো ধরণের জটিলতা সৃষ্টি হয়নি। এ থেকে প্রমাণ হয়েছিল জাতীয় পার্টির কর্মীরা সহনশীল।
নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, এরই মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ঘোষণা আসে। সিলেটের জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে লাঙ্গল নিয়ে মেয়র পদে লড়াই করার আহ্বান জানালেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলের মনোনয়ন দিলেন বাবুলকে। দলের মনোনয়ন নিয়ে এখন তিনি চষে বেড়াচ্ছেন মহানগরীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, সন্তান হিসেবে নগরবাসী তাকে মেয়র নির্বাচিত করলে তাঁর প্রথম কাজ হবে একটি মাস্টার প্লান তৈরি করা। এই মাস্টার প্লান দিয়ে তিনি সিলেট নগরী সাজাবেন। সবাই জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটবাসীর জন্যে আন্তরিক। তাই মহানগরকে সাজিয়ে তুলতে, বসবাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে তেমন একটা বেগ পেতে হবে না।
বাবুল জানাচ্ছিলেন, মহানগরের অবস্থা করুণ। দিনের অধিকাংশ সময় যানজট লেগে থাকে। এই যানজট থেকে মুক্ত করতে গ্রহণ করা হবে বিশেষ পরিকল্পনা। প্রশাসনের সাথে বসে ওই পরিকল্পনায় মহানগর থেকে যানজটের অভিশাপ দূর করা হবে।
তিনি বলেন, একটু খানি বৃষ্টি হলে নগরজুরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। নগরবাসীকে এজন্য চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ওই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থা দূর করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিদ্যুতের জন্যেও নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এই সমস্যার সমাধানেও পদক্ষেপ নেয়া হবে। নগরীর যে পরিমাণ বর্জ্য প্রতিদিন জমা হয়, তা দিয়ে বিদ্যুত উতপাদন করা সম্ভব। ওই বিদ্যুত দিয়ে মহানগরীর বিদ্যুতের ঘাটতি লাঘব করা সম্ভব।
বাবুল বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী। খেটে খাওয়া মানুষগুলো সারাদিন পরিশ্রম করে বাজারে গিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় সওদা করতে পারেন না। বেকারত্ব মারাত্মক আকার ধারণ করেছেন। একজন মানুষের জন্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে শতশত মানুষের সিভি জমা হয়। যা থেকে প্রমাণ হয় বেকারত্বের ভয়াবহতা। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, মাস্টার প্লানে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার অঙ্গিকার থাকবে। মাস্টার প্লান অনুযায়ী সিলেটকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে অনেক স্বপ্ন রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে সিলেট নগরীতে পর্যটকদের ঢল নামে। শনিবার পর্যন্ত ওই অবস্থা অব্যাহত থাকে। পর্যটকদের বহনকারী যানবাহনগুলো নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। অরক্ষিত থাকে। এই অবস্থায় পর্যটকরা বিমুখ হয় পর্যটন নগরী থেকে। এই অবস্থার অবসান ঘটানো হবে। শুধু তাই নয়। পর্যটন খাতকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো হবে। পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার পাশপাশি নান্দনিক নগরীতে পরিণত করা হবে সিলেটকে। আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেটের সফলতার শীতল হাওয়া ছড়িয়ে দেয়া হবে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়। আমরা গর্ব করতে চাই সিলেট নগরীকে নিয়ে।
নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছি। মানুষের মনের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করছি। এই ভাষায় ধরা পড়ছে তাদের স্বপ্নের কথা। নগরবাসী আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে। কারণ, নগরবাসী জানেন আমি মেয়র নির্বাচিত হলে কোনো ধরণের দুর্নীতি হবে না। সবাই জানেন আমি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। আমার দুর্নীতি করার কোনো প্রয়োজন নেই। অনিয়ম আর দুর্নীতি আমার মাধ্যমেই দূর হবে। আমি নির্বাচিত হলে নগরবাসীর ওই স্বপ্ন পূরণ হবে নিশ্চয়।