ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হাত পা অস্বাভাবিক, তবু কাঁধে সংসার

কিশোর কুমার দত্ত, লক্ষ্মীপুর সদর প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:০৭:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আনোয়ার হোসেন। পেশায় একজন রিকসা চালক। জন্মের পর থেকে তার দুই হাত ও দুই পা অস্বাভাবিক। অস্বাভাবিক হাত পা নিয়ে জীবন সংগ্রামে প্রতিবন্ধী আনেয়ারের কাঁধে সংসার।

নেই নিজের ঘর। বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন অন্যের জরাজীর্ণ একটি রান্না ঘরে। শারীরিক অক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেও ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেননি শারীরিক প্রতিবন্ধী আনোয়ার। জীবন যুদ্ধে হার না মানা আনোয়ারের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নের হেতিমপুর গ্রামে। বৃদ্ধ মায়ের স্বপ্ন ছিলো, ছেলে চাকরি করে সংসারের অভাব দূর করবে। তাদেরও হবে থাকার একটি ঘর। কিন্তু ঘুষ বাণিজ্যের কাছে মুচে যায় তাঁর চাকুরীর স্বপ্ন। গত ১৪ ডিসেম্বর নিজ এলাকায় আনোয়ারের মুখ থেকে শুনা তার জীবন কাহিনী।

 

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হেতিমপুর গ্রামের মৃত রফিক উল্লার ছেলে আনোয়ার হোসেন জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী। পারিবারিক অভাব-অনটন ও শারীরিক অক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও দরিদ্র মা-বাবার স্বপ্ন পূরণে স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। এরপর জীবিকার তাগিদে চাকরির পেছনে ছুটে ঘুষ বাণিজ্যের কাছে হেরে যান। পরে বাধ্য হয়ে ঋণ করে একটি রিকশা কিনে এখন নিজেই সেই রিকশার চালক। প্রায় ১০ বছর ধরে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে অন্যের জরাজীর্ণ একটি রান্না ঘরে বসবাস আসছেন আনোয়ার। জন প্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়ে মেলেনি মাথা গোঁজাবার ঠাঁই। পরিবার পরিজনদের নিয়ে অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

 

প্রতিবন্ধী আনোয়ার বলেন, রিকশা চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে ঋণের বোঝা, পারিবারিক চাহিদা ও ছেলে-মেয়ের পড়াশুনার খরচ এবং বৃদ্ধ মায়ের ঔষধপত্র সহ যাবতীয় খরচ মেটাতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সমাজের বৃত্তবানদের কাছে পরিবার পরিজন নিয়ে একটু মাথা গোঁজানোর ঠাঁই এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দাবী করেন তিনি। 

 

আনোয়ারের বৃদ্ধ মা শামছুন্নাহার বলেন, স্বপ্ন ছিলো ছেলে চাকরি করে সংসারের অভাব দূর করবে। তাদেরও হবে থাকার একটি ঘর। কিন্তু ঘুষ বাণিজ্যের কাছে মুচে যায় তাঁর স্বপ্ন।

 

এদিকে স্থানীয়রা এলাকাবাসী জানান, প্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেন জন্মের পর থেকে হাত-পা বাঁকা থাকায়, কঠোর সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাকে। রিকশা চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন, লেখাপড়াও ছাড়তে হয়েছে দারিদ্রতার জন্য। কিন্তু স্বল্প আয়ে পরিবারের দেখাশোনা করাও যেন দিনদিন কঠিন হয়ে পড়ছে সংগ্রামী আনোয়ারের। সরকারি ঘর বরাদ্ধসহ প্রতিবন্ধী আনোয়ারের কর্মসংস্থানের দাবী করেন তারা।

 

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, সরকারি ঘর বরাদ্ধসহ নিয়ম মেনে সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে বলে।