বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত অক্টোবর থেকে বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে এ গণসমাবেশ শুরু হয়। এরপর ধাপে ধাপে খুলনা, বরিশাল, রংপুর, সিলেটসহ দেশের বাকি সব বিভাগীয় শহরে এ গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ করবে দলটি।
গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম ছাড়া সব জায়গায় পরিবহন ধর্মঘট দেওয়া হয়েছিল। রাজধানীর সমাবেশ ঘিরে ধর্মঘট হবে কি না তা নিয়ে এখনো কোনো পক্ষ পরিষ্কার বার্তা দেয়নি। সাধারণ মানুষের মনে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ধর্মঘট হলে একরকম, না হলে আরেক রকম- তাদের অফিস কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয় আছে।
পরিবহন খাতের নেতারা কেউ কেউ বলছেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের দিন কিংবা আগে-পরে পরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। তবে কেউ কেউ আবার বলছেন, এখনো সময় আছে, কী সিদ্ধান্ত আসে বলা যাচ্ছে না।
কিছু নেতা অবশ্য জানিয়েছেন, ধর্মঘটের কারণে তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়। তাই তারা ধর্মঘট চান না।
ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে চলাচলকারী একটি পরিবহনের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা কখনোই চাই না পরিবহন ধর্মঘট হোক। কারণ একদিন পরিবহন ধর্মঘট করলে আমাদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়। সুতরাং আমরা যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করব।
মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবরোধের সিদ্ধান্ত নেই। আমাদের দাবি-দাওয়া থাকলেও আমরা কোনো অবরোধ করব না। এজন্য আমাদের মহাসচিব নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আমাদের মহাসচিব দেশের বাইরে। তিনি আসলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এর আগে সারা দেশে যারা অবরোধ করেছেন সেখানে ফেডারেশনের কোনো নির্দেশনা ছিল না। নিজেরাই তাদের জানমাল রক্ষা অথবা যানবাহন ভাঙচুর থেকে রক্ষা পেতে এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। ঢাকায় এ রকম কোনো সম্ভাবনা আমি দেখি না।
কিন্তু ভিন্ন কথা বলছেন আরেক পরিবহন নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাস মালিকদের একটি সংগঠনের ওই নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটা ভয় ভীতি, আতঙ্ক সবার মধ্যেই আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাস বন্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এখনও সময় আছে, হতে পারে। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, সিদ্ধান্ত হলে বাস মালিকরা নিজ থেকে নেবেন। এতে সংগঠন কোনো সিদ্ধান্ত দেবে না।
এর আগে অক্টোবর ও নভেম্বর জুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হওয়া বিএনপির সমাবেশের আগে ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের মূল দাবি ছিল, মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ করা। কিন্তু দেখা গেছে, দাবি আদায় না হলেও গণসমাবেশ শেষ হওয়ার পরপরই তাদের ধর্মঘট আকস্মিকভাবে শেষ হয়ে যায়। শুরু হয় যান চলাচল। একইভাবে আগের মতোই মহাসড়কে চলাচল করে তিন চাকার যানও! অর্থাৎ ধর্মঘট যে কেবল বিএনপির সমাবেশের কারণেই ডাকা হয়েছিল তা পরিষ্কার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।