গত ৩ দিন ধরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। ১৭ ডিসেম্বরের পর হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়নি।
করোনার নমুনা পরীক্ষার কিট নয়ছয় কাণ্ডের পর দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার অব্যাহতিতে এই সংকট বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে আগের নিয়মেই নমুনা পরীক্ষা চলছে।
জানা গেছে, রামেক হাসপাতাল ল্যাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) বিভাগীয় ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এসএম হাসান এ লতিফ ও হামিদ আহমেদ। গত বছরের মার্চ থেকে তারা রামেক হাসপাতাল ল্যাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
সর্বশেষ গত ১১ ডিসেম্বর তারা অব্যাহতি চেয়ে হাসপাতাল পরিচালক বরাবর চিঠি দেন। পরিচালকের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তারা ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ল্যাবে কাজ করেন। তবে ১৭ ডিসেম্বর থেকে তারা আর ল্যাবে আসেননি।
ডিএনএ ল্যাবে কাজের চাপ বেড়েছে উল্লেখ করে তারা হাসপাতাল ল্যাব ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এসএম হাসান এ লতিফ। তিনি বলেন, দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বেচ্ছায় করোনা ল্যাবে যুক্ত হয়েছিলেন তারা। দীর্ঘ ২ বছর বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন। কিন্তু এখন সেই সুযোগ নেই।
এদিকে, সম্প্রতি রামেক হাসপাতাল ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষার কিট নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠে। এই কাণ্ডে অব্যাহতি নেওয়া দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার নাম আসে।
পরে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতাও পায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উচ্চতর তদন্তের নামে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ঝুলে ছিল। এরই মধ্যে এই দুই কর্মকর্তা দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন।
রামেক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, এই দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার সঙ্গে ল্যাবের দুই টেকনোলজিস্ট দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলেন। এরই জেরে ওই দুই টেকনোলজিস্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কিট নয়ছয়ের অভিযোগ আনেন। নথিপত্র সংরক্ষণ ত্রুটি থেকে এমন কাণ্ড ঘটতে পারে।
তবে অভিযোগকারীদের দাবি, কাগজেকলমে ৪৯ হাজার ৪০০ কিটের মধ্যে প্রায় সবই ব্যবহার দেখানো হয়। কিন্তু এর মধ্যে অন্তত ২ হাজার কিট গায়েব হয়েছে।
অভিযোগ পেয়ে গত ৯ নভেম্বর রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান শাহ আলমকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তদন্ত শেষে দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার অব্যাহতিসহ উচ্চতর তদন্তের সুপারিশ করে কমিটি।
কিট নয়ছয়ের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এসএম হাসান এ লতিফ জানান, অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কাজের প্রচণ্ড চাপের কারণে কিটের হিসেব রেজিস্টার খাতায় তোলা হয়নি। এই হিসাব রেজিস্টারে তোলার কাজও আমাদের নয়। এটা যে ভিত্তিহীন তা তদন্তেই প্রমাণিত।
রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, ওই দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ নন। দেশে করোনার ক্লান্তিকালে তাদের রামেক হাসপাতাল ল্যাবে কাজে লাগানো হয়েছিল। ডিএনএ ল্যাবে কাজের চাপ বেড়ে গেছে জানিয়ে তারা হাসপাতাল ল্যাব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, দক্ষ জনবল সংকটে হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাব আপাতত বন্ধ রয়েছে। এখন করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী। রামেক ল্যাবেই এই পরীক্ষা হচ্ছে। তবুও দক্ষ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জনবল পেলেই ল্যাব চালু হবে।