ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৮ই ফাল্গুন ১৪৩১

অন্তর্বর্তী সরকারকে ভারতের কাছে তিস্তার ন্যায্য পানি চাইতে হবে: মির্জা ফখরুল

রিয়াদ হাসান | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১২:০০:০০ পূর্বাহ্ন | রাজনীতি

 বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্র্বতী সরকার নিজেদেরকে নিরপেক্ষ সরকার বলে। তাই ভারতের কাছে তিস্তার ন্যায্য পানি চাইতে হবে। আমরা ভারতকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই। তবে ন্যায্য পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দিতে হবে। সীমান্তে আমাদের নাগরিককে গুলি করে হত্যা বন্ধ করতে হবে।

উপস্থিত মানুষের উদ্দেশে তিনি বলেন, লড়াই না করে কিছু পাওয়া যায় না। লড়াই করে আমাদের গুলো অধিকার আদায় করবো, ন্যায্য পাওনা বুঝে নেবো। এখন নতুন লড়াই শুরু হয়েছে। সেটা হলো- বাঁচা মরার লড়াই, স্বাধীনতার লড়াই। জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার তিস্তা রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন চর পয়েন্টে তিস্তা রক্ষা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তাবায়নের দাবিতে সমাবেশ এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। 'জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে এদিন একই সাথে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১ পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেছে 'তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি।' টানা ৪৮ ঘণ্টার এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশের সভাপতিত্বে করেন 'তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি'র প্রধান সমন্বয়কারী বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে বাংলাদেশকে বেঁচে দিছে কিন্তু তিস্তার একফোঁটা পানি আনতে পারে নাই। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪ টা নদী আছে, প্রত্যেকটা নদীতেই তারা বাঁধ বসিয়ে রেখেছে। একদিকে ভারত আমাদেরকে পানি দেয় না, অন্যদিকে বাংলাদেশের শত্রু হাসিনাকে তারা বসিয়ে রেখেছে।  

তিনি বলেন, আজকের যে আন্দোলন শুরু হচ্ছে এটা কি আমরা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাব। মাওলানা ভাসানী যেমন তিস্তার রক্ষার আন্দোলন শুরু করেছে, বহুদিন পর আজ আসাদুল হাবিব দুলুভাই সেই আন্দোলন আবার শুরু করেছে। 

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচন দিন। জনগণ অনেক বছর ভোট দিতে পারেনি। তাই জনগণ চায় ভোট দিয়ে নিজের প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠিয়ে তাদের দ্বারা তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করাতে। ভোট হলে দেশে যে অস্থিতিশীলতা চলছে, তা বন্ধ হবে। জনগণ প্রতিনিধি পাবে তাদের কথা বলার। 

জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বাংলায় কথা আছে ঠেলার নাম বাবাজি। আজকের এই কর্মসূচি যখন ৬০ দিন আগে ঘোষণা করা হয়েছিল এরপর গত কয়েক দিন আগে ভারত পানি ছাড়া শুরু করেছে। আমরা বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে ঘোষণা করতে চাই, যদি তিস্তার ন্যায্য হিসসা না দাও তাহলে আমরা এককভাবে 'তিস্তা মহাপরিকল্পনা' বাস্তবায়ন করব। স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের অধিকার আছে যে কোন সিদ্ধান্ত নেবার। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তিস্তার এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব।

বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, শুকনো মৌসুমে  ভারত উজানের পানি আটকে রাখে, আর বর্ষার মৌসুমে ছেড়ে দেয়। যার ফলে আমাদের এখানে বন্যায় সব ভেসে যায়। এটা কি কোন বন্ধুর পরিচয়? কোন ভাবেই না। তাই ভারত আমাদের বন্ধু না। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে বলব এখন সময় এসেছে ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সময় এসেছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিসসা পেতে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের সরকারকে যেতে হবে। মাওলানা ভাষানীর মত প্রয়োজন হলে আবারো আমরা লং মার্চের আয়োজন করব। এবাই তিস্তার লড়াই আমাদের জিততেই হবে, যদি এই জনপদের লোকদের বাচাতে চাই।

সভাপতির বক্তব্যে 'তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি'র প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, বহু পথ বহু সময় আমরা অতিক্রম করেছি। দীর্ঘ সময় স্বৈরশাসকের যাতা কলে আমরা পরে ছিলাম। কথা বলতে পারি নাই, সোভা যাত্রা তো দূরের কথা, মিছিল তো দূরের কথা। এখন মুক্ত বাংলাদেশ স্বাধীন বাংলাদেশ। জুলাই বিপ্লবের মধ্যদিয়ে আমাদের কথা বলার অধিকার সৃষ্টি হয়েছে। এই রংপুর ছিল রঙ্গে রসে ভরপুর। তাকে আজ বিড়ান ভূমিতে পরিনত করা হয়েছে। ছিন্নমূল মানুষ বাড়ি ঘর হারিয়ে দেশান্তরি হয়ে কোথায় চলে গেছে আমরা বলতে পারি না। 

তিনি বলেন, আমাদের দাবি তিস্তার পানির ন্যায্য হিসসা বুঝে পাওয়া। আমাদের আরেকটি দাবি রয়েছে, তিস্তা নিয়ে একটি পরিকল্পনা হয়েছে, সেই পরিকল্পনার মাধ্যমে তিস্তাকে শাসন করা, ড্রেজিং করা, এখানে শিল্প কারখানা তৈরি করা এবং কর্মসংস্থান তৈরি করা। অনতিবিলম্বে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। আগামিকাল আমরা তিস্তার পানিতে নামব, কেননা আমরা দেখিয়ে দিতে চাই তিস্তার পানি এখন হাটুর নীচে।

বায়ান্ন/আরএস