ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অন্ধকার কেটে গেলেই লড়াই শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৬ জানুয়ারী ২০২২ ১২:৩৬:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের সব রকম প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে ঘড়ির কাঁটায় ১৫ জানুয়ারি শুরুর পর থেকেই। এর আগে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপির বিভিন্ন পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারসহ সব প্রার্থী দিনভর পথসভা, গণসংযোগ, গণমিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। প্রার্থীরা ভোট টানতে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ভোটের আগে হয়রানিমূলক গ্রেফতার বন্ধের দাবি জানান তৈমূর। বহিরাগতরা যেন নির্বাচনী এলাকায় না থাকতে পারে, সেজন্য নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপও চান তিনি।

 

প্রচারণার শেষ দিনে ডা. আইভী তার বাড়িতে সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে পরাজিত করতে অনেকগুলো পক্ষ এক হয়েছে। তিনি বলেন, ১৮ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে কাজ করে আসছি। ২০০৩ সালে যখন আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচন করি, তখন অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের মানুষ অন্যায়-অত্যাচার, খুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে থেকে নৌকায় ভোট দেবে।

 

শেষ দিনে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বন্দরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কবিলার মোড়ে পথসভা করেন। তিনি বলেন, হাতি প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। ১৮ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে পরিবর্তন চায় নারায়ণগঞ্জবাসী।

 

শেষ বেলায় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ নগরীর চাষাঢ়া শহীদ মিনার থেকে বেলা ১১টায় ও বিকালে গণমিছিল বের করেন।

 

অন্যদিকে ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। শনিবার (১৫ জানুয়ারি) রাত থেকেই নগরীর নিরাপত্তা জোরদার করতে মাঠে নেমেছে ১৮ প্লাটুন বিজিবি। নির্বাচনী সহিংসতা এড়াতে প্রতিটি ওয়ার্ড ও ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

 

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরশেনের সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসূল অঞ্চলের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ৪ জন। ২৭টি ওয়ার্ডে ১৯২টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ভোট কক্ষের সংখ্যা এক হাজার ৩৩৩ ও অস্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ৯৫টি। প্রতিটি অঞ্চলে একজন করে প্রিসাইডিং অফিসার থাকবেন। একইসঙ্গে ৩টি ওয়ার্ডে একজন করে মোট ৯ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার থাকবেন।

 

অন্যদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচনের দিন কেন্দ্রগুলোতে ৩০ জন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনজন অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।

 

তিনি জানান, প্রতিটি কেন্দ্রকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। রাত থেকেই নারায়ণগঞ্জে ১৮ প্লাটুন বিজিবি নামবে। এছাড়া র‌্যাবের ১০০ টিম, সাদা পোশাকে পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে থাকবে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নির্বাচনের দিন যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই পুলিশ, সাদা পোশাকে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশসহ তিনটি স্তুরে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম। তিনি জানান, নির্বাচনী পরিবেশ উৎসবমুখর। কিন্তু কয়েকটি ওয়ার্ডে সমস্যা আছে। যা খুব জটিল কিছু না। নির্বাচনকে কেন্দ্র এমন কিছু এলাকা এরকম থাকে। তারপরও আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে ৩০টি কেন্দ্রকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

 

ভোটের দিন নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ছাড়া কেউ চলাচল করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি)।

 

তিনি বলেছেন, আমাদের তরফ থেকে নির্বাচনী কোনো সহিংসতার আশঙ্কা নেই। নির্বাচনের দিন কোনো বহিরাগতকে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে দেবো না। ভোটের দিন সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে চলাচল করতে দেওয়া হবে। এজন্য রোববার (১৬ জানুয়ারি) নগরবাসীকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে চলাচল করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

 

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের শুরু থেকেই সরকারি দলের মেয়র প্রার্থী নৌকা প্রতীকের ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের মধ্যে চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। রোববারের (১৬ জানুয়ারি) নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৩৪ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৪৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।