ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অ্যাপে ধান-চাল ক্রয়ে সাড়া কম কৃষকের

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বুধবার ১৭ অগাস্ট ২০২২ ১১:৩৮:০০ পূর্বাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

 

সরকারিভাবে ধান কেনার ক্ষেত্রে কৃষকের সময়, খরচ ও হয়রানি কমাতে ২০১৯ সালে অ্যাপ চালু করেছিল সরকার। আমন মৌসুমে ১৬টি উপজেলা দিয়ে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার এ কার্যক্রম শুরু হয়। এখন ২৫৬টি উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনা হচ্ছে। চলতি অর্থবছর (২০২২-২৩) নতুন ৪৮টি উপজেলা নিয়ে মোট ৩০৪টি উপজেলায় অ্যাপে ধান কেনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে খাদ্য বিভাগ।

তবে গত কয়েকটি সংগ্রহ মৌসুমে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে দাম বেশি থাকায় অ্যাপে ধান দিতে আগ্রহ নেই কৃষকের। স্বাভাবিকভাবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সরাসরিও ধান কিনতে পারছে না সরকার।

তবে খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা একটি সফল কর্মসূচি। প্রচার-প্রচারণা, কৃষি বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন ও খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কৃষকরা এরই মধ্যে বিষয়টি বুঝে উঠেছেন। কিন্তু বাজারের তুলনায় সরকারকে ধান দেওয়া লাভবান না হওয়ায় কৃষকের সাড়া মিলছে না। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম কম থাকলে তখন অ্যাপের সুফল পাওয়া যাবে।

অন্যদিকে মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহেও ‘ডিজিটাল চাল সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা’ চালু করা হয়। এরই মধ্যে ৫৩টি উপজেলায় এ ব্যবস্থাপনায় চাল সংগ্রহ করছে সরকার। চলতি অর্থবছর নতুন ৩২টিসহ এ ব্যবস্থা মোট ৮৫টি উপজেলায় উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরকার বোরো ও আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান ও চাল কিনে মজুত করে। এ মজুত থেকে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দরিদ্রদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) মাধ্যমে চেষ্টা করা হয় বাজার নিয়ন্ত্রণের।

খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে সাড়ে ৬ লাখ টন ধান ও সাড়ে ১৩ লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবশেষ ১১ আগস্ট পর্যন্ত ২ লাখ ৩২ হাজার টন ধান ও সাড়ে ৯ লাখ টনের মতো চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৮ এপ্রিল থেকে ধান ও ৭ মে থেকে চাল কেনা শুরু হয়। সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয় ধান ২৭ টাকা, সিদ্ধ চাল ৪০ টাকা। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ চলবে। এখন বাকি এই কয়েকদিনের মধ্যে ধানের লক্ষ্যমাত্রা কোনোভাবেই পূরণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

চলতি বোরো মৌসুমে সাড়ে ৬ লাখ টন ধান ও সাড়ে ১৩ লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাজারে ধানের কেজি ২৯ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দাম ২৭ টাকা। তাই সরকারি গুদামে ধান দিতে কৃষকের আগ্রহ নেই। গত আমন মৌসুমেও তিন লাখ টন ধানের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ৮৪ হাজার ৪৭০ টন সংগ্রহ করতে পেরেছিল খাদ্য অধিদপ্তর।

খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংগ্রহ) মো. রায়হানুল কবীর বলেন, ‘আমরা আড়াই লাখ টনের মতো বোরো ধান সংগ্রহ করেছি। এর অর্ধেক এসেছে অ্যাপের মাধ্যমে। অ্যাপে ধান-চাল সংগ্রহের কর্মসূচিটি সফল। এটি খুব ভালোভাবে চলছে। কৃষকরা সাড়া দিচ্ছেন। তাই চলতি অর্থবছর অ্যাপের মাধ্যমে ধান-চাল কেনার কর্মসূচিটি আরও সম্প্রসারিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কৃষি বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন, খাদ্য বিভাগ সবাই এ বিষয়ে প্রচারণা চালিয়েছে। কৃষকদের পরামর্শ ও সচেতন করতে কার্যক্রম চালিয়েছে। কৃষকদের ডেকে এনে রেজিস্ট্রেশনও করিয়েছে। তবে সিস্টেমটি কতটা ফলপ্রসূ হবে সেটা নির্ভর করছে বাজারমূল্যের ওপর। কারণ সরকারের দেওয়া দামে কৃষক লাভবান না হলে তারা তো ধান দেবে না। সেটা অ্যাপে হোক কিংবা আগের সিস্টেমে হোক।’

‘অ্যাপে ধান কেনার কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে সারাদেশে নিয়ে যাওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য’ বলেন পরিচালক।

নওগাঁর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবির বলেন, ‘শুরুতে কৃষক কিংবা মিলারদের অনলাইন ব্যবস্থা জটিল মনে হতো। কারিগরি কিছু সমস্যাও ছিল। এখন সবাই সুবিধাটা বুঝতে পারছেন। কৃষি বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন ও আমরা মিলে কাজ করে এ অবস্থায় নিয়ে এসেছি। তবে বাজারে ধান ও চালের দাম বেশি হলে তখন কৃষক কিংবা মিলারদের আগ্রহটা কম থাকে।’