আজ ১৫ ডিসেম্বর। গাজীপুর মুক্ত দিবস। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৭১ সালের এই দিনে গাজীপুর মহানগরীর ছয়দানা এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর সম্মুখযুদ্ধ হয়।
এতে পাকিস্তানি বাহিনীর বিভিন্ন ধরনের ভারী অস্ত্র ও যানবাহন ধ্বংস এবং বহু সেনা নিহত হয়। হানাদার মুক্ত হয় গাজীপুর জেলা।
ভৌগলিক কারণে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল গাজীপুরে। নভেম্বরের শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা চতুর্মুখী গেরিলা অভিযান জয়দেবপুর সেনানিবাস, সমরাস্ত্র কারখানা, রাজেন্দ্রপুর অর্ডন্যান্স ডিপোসহ পাকিস্তানি বাহিনীর বিভিন্ন অবস্থানে পরিকল্পিত আক্রমণ শুরু করে।
এতে ভীতসন্ত্রস্ত ও বিপর্যস্ত পাকিস্তানি বাহিনী তাদের অবস্থান গুটিয়ে নিয়ে সেনাঘাঁটিতে একরকম অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
ডিসেম্বরের ১৩ এবং ১৪ তারিখ গাজীপুরে সেনানিবাসে সম্মিলিতভাবে আক্রমণ চালায়। টিকতে না পেরে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকা ফিরে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করে।
তারা জয়দেবপুর সেনানিবাস, সমরাস্ত্র কারখানা এবং অর্ডন্যান্স ডিপো থেকে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র ও যানবাহন নিয়ে ঢাকা যাওয়ার পথে চান্দনা চৌরাস্তায় অবস্থান নিতে শুরু করে।
১৫ ডিসেম্বর চান্দনা চৌরাস্তায় জড়ো হওয়া পাকিস্তানি বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ঢাকার পথে রওনা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ছয়দানা ও টঙ্গীতে অবস্থান নেয়। পাকিস্তানি বাহিনীর বহর মহানগরীর ছয়দানা এলাকায় পৌঁছলে শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ।
অন্যদিকে কাশিমপুরে অবস্থান নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বড় একটি দল ও মিত্রবাহিনী কামান ও মর্টারের গোলাবর্ষণ করতে থাকে। গভীর রাত পর্যন্ত দুইপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলে। কিন্তু মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর গোলাবর্ষণে পাকিস্তানি বাহিনী একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বহু সেনা নিহত হয়। বিধ্বস্ত হয় ট্যাংক, কামান, মর্টারসহ তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও যানবাহন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ঢাকার কাছে এটাই ছিল পাক বাহিনীর সবচেয়ে বড় যুদ্ধ।
এভাবে ১৫ ডিসেম্বর পাক হানাদার মুক্ত হয় গাজীপুর।
গাজীপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ছাত্তার মোল্লা বলেন, ১৯ মার্চ গাজীপুর তৎকালীন জয়দেবপুরে শুরু হয়েছিল হানাদারদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ।
সেদিন শহীদ হয়েছিল নিয়ামত, হুরমত ও মনু খলিফা। আজও সেই স্মৃতিগুলো ভেসে আসে। ১৫ ডিসেম্বর গাজীপুর হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে শুরু হয়েছিল মুক্তির আনন্দ।