ঢাকা, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

আধুনিকতার যুগে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার মাটির ঘর

এম এস জিলানী আখনজী, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৬:৪৫:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

 দিন বদল কিংবা আধুনিকতার যুগে ছন ও টিন দিয়ে মাটির তৈরি ঘর হারিয়ে যেতে বসেছে। তার স্থলে এসে পৌছেছে হরেক রকম প্লাষ্টিক সামগ্রীসহ দালান কোঠা। 

 
প্রথম দিকে মানুষ গুহায় বসবাস করতো। তারপরে মাটির ঘর। টিনের ঘর। এবং বর্তমানে আধুনিকতার স্পর্শে মানুষ ইট-পাতরের দালান ঘরে বসবাস করছেন। 
 
দিন-দিন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের গ্রামগুলোতে মাটির তৈরী ঘরগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। কোন এক সময় এটি নিম্নবিত্তের মাথা গোজার ঠাঁই হলেও, তা অভিজাত পরিবারের লোকজনও শখের বসে তৈরী করেছেন। এখনও অনেকে সেই মাটির তৈরী ঘরকে ঐতিহ্য হিসেবে ধরে রেখেছেন। 
 
ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাসহ অন্যান্য এলাকায় এখনও অল্প সংখ্যক মাটির তৈরী ঘর রয়েছে। একেকটি মাটির তৈরী ঘরের বয়স অর্ধশত বছরের উপরে। বিশেষ করে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিত ১নং গাজীপুর ইউনিয়নের আসামপাড়ার বাল্লা, কেদারাকোট, টেকারঘাট, উছমানপুর, দলাজাই ও সাদ্দাম বাজার এলাকায় এসব মাটির তৈরী ঘর চোখে পড়ে। অপরদিকে ২নং আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের গাদীশাইল, গেড়ারুক, ডুলনা, তৈগাঁও, ছয়শ্রী, দক্ষিণ ছয়শ্রী (বাগাডাইয়া), কারামন্ডল-হাড়াজুরা, গঙ্গানগর-আশ্রাবপুর এলাকাসহ উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামগুলোতে এসব মাটির তৈরী ঘর এখনও চোখে পড়ে। 
উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ ছয়শ্রী (বাগাডাইয়া) গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আব্দুল কাদির সরদার বলেন, আমাদের গ্রামে এখনও বেশ কিছু মাটির তৈরী ঘর রয়েছে। আমার বাপ-দাদার হাতে তৈরী করা ৬০ থেকে ৬৫ বছর আগের মাটির ঘরটি এখনও রয়েছে। ঘর তৈরীর কারিগর না থাকা সহ মানুষের বিলাসীতায় নতুন করে তেমন মাটির ঘর তৈরী হচ্ছে না। অপরদিকে একই ইউনিয়নের গাদীশাইল গ্রামের মরহুম আতাব উল্লার স্ত্রী মীর চান বিবি বলেন, এ ঘরটি আমার স্বামী তৈরী করেছিলেন। ঘরটির বয়স ৫০ এর উর্ধ্বে চলে। মাটির তৈরী ঘরে বসবাস করতে কেমন লাগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরমের দিনে শীতল আর শীতের দিনে উষ্ণ। বর্তমানে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের মতো। 
 
আহম্মদাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও আমুরোড হাইস্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, চুনারুঘাট উপজেলায় একসময় প্রায় বাড়ীতেই মাটির ঘর ছিল। তখনকার সময়ে ধনী-গরিব কোন ভেদাভেদ ছিল না। তাছাড়া মাটির ঘরে আলাদা স্বস্তী ছিল। বর্তমানে মানুষের আধুনিক জীবন যাপনের ইচ্ছা ও অর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাটির বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে ইট দালানের বাড়ী-ঘর তৈরীতে ঝুকে পড়েছেন। আগের দিনে জমিদারদের ছিল দো’তালা মাটির তৈরী বাড়ী-ঘর। সে সময়ে যাদের প্রচুর ধন-সম্পদ ছিল তারাই মাটির দো’তালা বাড়ী-ঘর বানাতো। 
 
চুনারুঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিা মোঃ মুহিদুল ইসলাম  জানান, উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকার মাটি এটেল প্রকৃতির তাই এ মাটি দিয়ে সহজেই মাটির ঘর তৈরী করা যায়। অনেক এলাকা উঁচু হওয়ায় পানি জমে না, তাই এ ঘরগুলোও মজবুত হয়। এক সময় সাধারণত কৃষাণ-কৃষাণীরা তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অল্প কয়েক দিনেই কম খরচে মাটির ঘর তৈরী করতো। উপরে ছন দিয়ে তৈরী মাটির ঘরের পর অবস্থা সম্পন্ন ব্যাক্তিরা উপরে টিন দিয়ে মাটির ঘর তৈরী শুরু করে। আধুনিকতার স্পর্শ আর কালের বিবর্তণে এখন মাটির ঘর ভেঙ্গে তৈরী করা হচ্ছে বিল্ডিং আর বিল্ডিং। তবে পাহাড়ী ও নিচু এলাকার জন্য ভয়ংকর। বন্যা, ভূমিকম্প বা প্রবল ঝড়-বৃষ্টি না হলে এসব ঘর প্রায় শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। আগের দিনে মাটির তৈরী ঘর দো’তলা পর্যন্ত করা হত। অত্যান্ত আরামদায়ক মাটির আবাস, দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি বিত্তবানরাও এক সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন।