ঢাকা, বুধবার ১ মে ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১

আপিল বিভাগে দুটি কোর্ট বন্ধ থাকায় মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসুত্রিতা, বিচারপ্রার্থিরা বিপাকে

কাজী হুমায়ুন কবির : | প্রকাশের সময় : বুধবার ৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০৭:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ হল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আপীল আদালত। এটি হল প্রথম স্তরের আপীল আদালত, যা হাইকোর্ট বিভাগের চূড়ান্ত বিচারিক রায় পর্যালোচনা করার কর্তৃত্ব রাখে।  এককথায় ন্যায় বিচারের জন্য সর্বশেষ আবেদনের আদালত। নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা যায়। সংবিধান অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের রায়, ডিক্রী, আদেশ বা দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল শুনানী ও তাহা নিষ্পত্তির এখতিয়ার আপীল বিভাগ রাখেন। সাধারণত নিম্ন আদালতে চলা বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়েও উচ্চ আদালতে মামলা হতে পারে। উচ্চ আদালতে মামলা করার জন্য আপিল বিভাগে প্রার্থীরা যান। অনেক ক্ষেত্রে হাইকোর্ট কোন নির্দিষ্ট মামলার ব্যাপারে নিম্ন আদালতকে শুনানীর নির্দেশনা দেয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে মামলাটি উচ্চ আদালতে নিয়ে আসা হয়। নিম্ন আদালতে যে সমস্ত বিচার হয়, তার বিরুদ্ধে কিংবা রিট বা আদিম এখতিয়ারের বিষয় হাইকোর্টডিভিশনে নিষ্পত্তি করা হয়।

হাইকোর্ট ডিভিশনের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির প্রতিকার লাভের জন্য মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচার প্রার্থীরা আপিল করেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে হলে প্রথমে সুপ্রিম কোর্টের লিভ টু আপিল বা অনুমতি নিতে হয়। সুপ্রিম কোর্টে পূর্ণাঙ্গ শুনানির পর অনুমতি মঞ্জুর হলে নিয়মিত আপিল করা যায়। সহজভাবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচার প্রক্রিয়া এভাবেই হয়ে থাকে। তাছাড়াও মাঝখানে অন্য আরেকটি প্রক্রিয়া রয়েছে। আপিলেট ডিভিশন রুলস মতে, হাইকোর্টের পরাজিত পক্ষ সুপ্রিম কোটের্ চেম্বার জজ নামক একক বিচারপতির চেম্বারে যেতে পারে। কিন্তু সেখানে এক অতি সংক্ষিপ্ত শুনানির মাধ্যমে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বা রায়কে স্থগিত করা যায়। আর এ সুযোগে হাইর্কোটের দেওয়া রায় ভোগের অধিকার থেকে বছরের পর বছর মানুষ বহুলাংশে বঞ্চিত হবার উপক্রম হয়েছে। 

জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল  বিভাগের বিচারকের সংখ্যা যখন কম ছিল, তখনও দুটি  পৃথক বেঞ্চে মামলা নিষ্পত্তি করা হত। কিন্তু বর্তমানে এ বিচারপতির সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টেও আপিল বিভাগে একটি মাত্র কোর্ট দিয়েই বিচার কাজ চালানো হচ্ছে। আপিল বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে কিছু বিচারপতির পদ খালি থাকলেও নানাবিধ হিসাব-নিকাশের কারণে সে পদ পূরণ করা হচ্ছে না। দেশে ১৬ কোটি মানুষের সর্বোচ্চ আদালতের সংখ্যা মাত্র একটি! 

আপিল বিভাগের হাজার হাজার মামলার চাপ, দীর্ঘসূত্রিতা ও জটের কারণে কয়েক বছরেও সেই আপিলের নিস্পত্তি সম্ভব হয়নি। এতে অনেক বিচার প্রার্থী দীর্ঘদিন ধরে মামলার দীর্ঘসুত্রিতায় আপিল বিভাগের দরজায় ঘুরতে থাকে। অনেকে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার বিষয়ে বাস্তবে অনেক জটিলতা পোহান। 

জানা যায়, গত পহেলা সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে কোর্ট বন্ধ হওয়ার পর ৭অক্টোবর ২০২৩ইং থেকে পুনরায় কোর্ট খুলে। নিয়মমতো এই বিভাগের তিনটি কোর্ট খুলার কথা থাকলেও ২ এবং ৩নং কোর্ট খোলা হয়নি। ফলে ১নং কোর্টের বিচার প্রার্থিরা সাড়া পেলেও ২ ও ৩নং কোর্ট অদ্যবধি বন্ধ থাকায় সেই কোর্টগুলোর বিচারপ্রাথীরা পড়েন বিপাকে। সেই সাথে বাড়ছে মামলার দীর্ঘসুত্রিতা। এ থেকে বিচারপ্রার্থিদের মধ্যেও বাড়ছে অসন্তোষ।

এক বিচার প্রার্থী বলেন, আপিলেট বিভাগের তিনটি কোর্টে বিচার প্রক্রিয়া চলে। এর মধ্য গত কয়েকমাস ধরে দুটো কোর্ট বন্ধ রয়েছে। এই কোর্ট গুলোতে মামলার সংখ্যাও প্রায় পাঁচশর উপরে। এসব মামলাগুলো দীর্ঘদিন ধরে কোন গতি পাচ্ছেনা। যার ফলে আমরা ভুক্তভোগীরা অনেক হয়রানীতে আছি। দুটি বেঞ্চ চালু হলে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি হতো। আমরা যারা সঠিক বিচার প্রত্যাশী হয়ে আপিল করেছি আমরাও দীর্ঘসুত্রিতা থেকে বাচতাম, সেইসাথে হয়রানী থেকেও বাচতাম।