বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার দক্ষিণে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য এ উপজেলা থেকে দুইশ কিলোমিটার দূরে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার। এই সীমানা এলাকায় নাই কোন নদ-নদী। পাহাড়ি আকাঁবাকা পথে হেটে নিমিষে পাড় হওয়া যায় মিয়ানমারের ওপারে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত ৭ থেকে ৮ মাসের অধিক সময় ধরে আলীকদমে চোরাই পথে মিয়ানমারের অবৈধ গরু ও ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য চলে আসছে।
জানা যায়, আলীকদম সীমান্তবর্তী এলাকা পৌয়ামুহুরী, কুরুকপাতার সড়ক পথে সিত্রা পাড়া, বড় আগলা পাড়া ও নদী পথে সিন্ধু মুখ পাড়া, ইন্দু পাড়া, কচুর ছড়া, পানির ছড়াসহ বেশ কিছু এলাকা দিয়ে চোরাকারবারিরা ইয়াবা, গরু ও মহিষ নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী পোয়ামুহুরী-কুরুকপাতা এলাকার ছোট বেতি, বড় বেতি, শীল ঝিরি, পাত্তারা ঝিরি বড় আগলা পাড়া, সিন্দু মুখ পাড়া, ইন্দু পাড়া এলাকায় জমায়েত করা হয়। পরে সেখান থেকে রাতের আঁধারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করেন চোরাকারবারিরা। পাহাড়ের লোকালয় জনপদ ব্যবহার করে আলীকদম থেকে প্রতিদিন রাত ২ থেকে ভোর ৫ টায় পায়ে হেঁটে ও ট্রাক ভর্তি করে রাতের আঁধারে গরু পাচার করেছে। ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুরুকপাতা ইউনিয়নের সীমান্ত চোরাচালানে সদস্য গরু ব্যবসায়ী মোঃ লালু, হারুন, প্রদীপ,সালাউদ্দিন, ইউনুছ মিয়া, ছৈয়দ আলম, নামে এই ব্যক্তিরা সীমান্তের ওপার থেকে অবৈধভাবে গরু চোরাচালান করেন থাকেন। আবার সীমান্তবর্তীতে কোথাও মিয়ানমারের বিজিবি, কোথাও আরাকান আর্মি, এবং আরসার সদস্যদের সঙ্গে ম্যানেজ করার কারনেই বিনা বাঁধায় মিয়ানমারের থেকে গরু, মহিষসহ ইয়াবা ও বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বাজার ইজারাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি সঙ্গে নিয়ে এসব অবৈধ বাণিজ্য করে আসছে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও প্রশাসন ম্যানেজ করার নামে প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের থেকে সমিতির নামে প্রত্যেক গরু থেকে চাঁদা আদায় করছে সমিতির লোকজন। যা প্রতিটি মহিষ দুই হতে তিন হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে থাকেন অবৈধ গরু সমিতির সিন্ডিকেটরা। এর ফলে চোরাকারবারী চক্রটি ওপারে বাংলাদেশ ভুখন্ডের তথ্য পাচার করছে কিনা সেই প্রশ্নও উঠেছে জনমনে।
এদিকে গত এক মাস পূর্বে আলীকদম সীমান্তে বেশ কিছু অবৈধ গরু ও মহিষ জড়ো করা হয় সিমান্ত ওপারে। পরে মিয়ানমারের ওপারে আরসার নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু যুবক অর্থের লেনদেন করে থাকেন। সবশেষে গরুগুলো বাংলাদেশের সিমানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। চক্রটি গরু মহিষ ছাড়াও ইয়াবা, বিদেশী মদ, সিগারেট এবং কফি ও ক্যালসিয়ামও পাচার করছেন সীমান্ত দিয়ে।
স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি অবৈধ গরু ব্যবসার নামে যেসব ব্যাক্তি সক্রিয় হয়েছে তাদের অনেকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। আবার এই ব্যবসায় একাধিক মামলাও পালাতক আসামি জড়িত রয়েছে। অনেকে আবার সরকারি রিজার্ভ ফরেস্টের পাথর খেকো ও রির্জাভ বনের চোরাই কাঠ ব্যবসায়ী জড়িত বলে জানা যায়।
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী বলেন, মিয়ানমারের সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দায়িত্ব পালন করে আসছে। ইয়াবা ও গরু মহিষের চালান আলীকদম উপজেলা থেকে চকরিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার, পটিয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন গরু ব্যবসায়ী সমিতির সিন্ডিকেটরা। এক্ষেত্রে কেউ পুজি, কেউ ক্ষমতা বিনোয়াগ করে থাকে সমিতির নামে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমিতির দায়িত্বরত সর্দার সাথে কথা হয় অবৈধ গরু চোরাচালান বিষয়ে। তিনি বলেন, অবৈধ গরু ও মহিষ ব্যবসায়ীদের কাজ থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়। সে টাকা ম্যনেজ জন্য দেওয়া হয় বিভিন্ন খাতে। সেসব খাত হল- স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তর।
গরু ব্যবসায়ী মো. জয়নাল (চকরিয়া) বলেন, আলীকদমে দূর্গম এলাকার কুরুকপাতা ইউনিয়নের লোকজনের কাছ কিছু নগদ ও অগ্রীম টাকা দিয়ে রাখি। গরু বিক্রি পর পাওনা টাকা পরিশোধ করে আবার অবৈধ গরু নিয়ে আসি।
আলীকদম ব্যাটালিয়নের (৫৭ বিজিবি) লে. কর্নেল মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আনা গরু ও মহিষ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার কালে চোরাই পথে আনা মিয়ানমারের অসংখ্য গরু ও মহিষ জব্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে (৫৭ বিজিবি) আলীকদম ব্যাটালিয়ন অভিযান পরিচালনা করে নিলামের মাধ্যমে ৮ কোটি টাকারও বেশি গরু মহিষ নিলাম দিয়েছে। এছাড়াও সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরা তৎপর আছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।