ঢাকা, মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১

ইবির কোটি টাকা মূল্যের ফার্নিচারে ফাটল

আর আই রাজিব: | প্রকাশের সময় : বুধবার ২৪ মে ২০২৩ ০৯:৩৬:০০ পূর্বাহ্ন | শিক্ষা


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিভিন্ন বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ার টেবিল গুলো মাস না পেরুতেই ফেটে যাচ্ছে। কোটি টাকা ব্যয়ে আনা এই ফার্নিচার গুলো অল্প ঘর্ষণের ফলে রং বদলে যাওয়াসহ অনিয়মের অভিযোগে উঠেছে। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ফাটল ধরা চেয়ার-টেবিল গুলো তড়িঘড়ি করে পরিবর্তন করে দিলেও বাকি চেয়ার-টেবিলগুলো এখনওি সরায়নি তারা। এতে বাকি পণ্যগুলোও দ্রুততম সময়ের ভিতরে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন ও তথ্য সূত্রে,  বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে অনেক  চেয়ার-টেবিল গুলো ক্যাম্পাসে নিয়ে আসতেই  ফাটল ধরছে। ফাটল ধরা চেয়ার-টেবিল গুলো পুনঃরায় পরিবর্তন করা হলেও অনেক চেয়ার-টেবিল এখনো বিভাগগুলোতে রয়ে গেছে। আবার অল্প একটু ঘর্ষণের পরে আবার রং উঠে যাওয়া অভিযোগ রয়েছে। 
প্রকৌশলী অফিস সূত্রে, বিভিন্ন বিভাগের জন্য ৬০০০ হাজার চেয়ার ও ২০০০ টেবিলের অর্ডার করা হয়। যেখানে মোট বাজেট ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এই কাজের অনুমোদন পায় আখতার ফার্নিচার। অভিযোগ রয়েছে, আখতার ফার্নিচারের পণ্যগুলো ঢাকা সাভার থেকে আনার কথা থাকলে এই পণ্য গুলো খুলনা ও মাগুরা জেলার বিভিন্ন লোকাল কারখানাতে তৈরি করা হয়েছে বলে । যদিও বিষয়টি অস্বীকার করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিস ও আখতার ফার্নিচার। তারা বলছে,  এটি ঢাকা সাভার থেকেই তৈরী কৃত এবং এতে কোন অনিয়ম পাওয়া যায়নি। এটিই ইবির ইতিহাস সবচেয়ে মান সম্মত ফার্নিচার। অতিরিক্ত তাপের কারণে কাঠ গুলো ফেটে যাচ্ছে।
তবে সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছে উল্টো কথা মাস না পেরুতেই এত মান সম্মত টেবিল চেয়ার গুলো ফেটে যাওয়ার কারণ? ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, বিভিন্ন বিভাগ শ্রেণীকক্ষ ও চেয়ার টেবিল সংকটে ভুগতেছিল। নতুন চেয়ার টেবিল পেয়ে মনের মাঝে এক প্রকার প্রশান্তি অনুভব করতেছিলাম। এমন সময় দুই একদিন যেতে না যেতে দেখছি চেয়ার টেবিল গুলো ফেটে ও রং উঠে যাচ্ছে। যা দেখে আমাদের কষ্টের উদ্রেক হয়,  এগুলো মেনে নেওয়ার বিষয় নয়।
তারা আরও বলেন, এটি আসলেই আখতার ফার্নিচারের পণ্য কিনা আমাদের মনের মাঝে এই সন্দেহ থেকেই যায়।  বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে জোর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।


এ বিষয়ে ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি  সহকারী অধ্যাপক অর্ঘ্য প্রসূন সরকার বলেন, কিছু চেয়ার টেবিলে ফাটল দেখা গিয়েছে। আমরা কারো কাছে কোন অভিযোগ করিনি তবে অন্যান্য বিভাগ অভিযোগ করলে তা পরিবর্তন করে দেয়। পরিবর্তন করলেও এখনো কিছু চেয়ার টেবিল ফাটল অবস্থায় রয়েছে।

এ বিষয়ে আখতার ফার্নিচারের কুষ্টিয়া শাখায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা রেজা বলেন, আমাদের ফার্নিচার গুলো ৩৫° থেকে ৪০° সিজন করা হয়। সিজনটি বৈশ্বিক আবহাওয়ার কারণে অটোমেটিকলি ৪০° এর উপরে পরার কারণে কিছু সংখ্যক প্রোডাক্টের জয়েন্ট গ্যাপ হয়েছিল। জয়েন্ট গ্যাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৌশলী অফিস থেকে আমাদের জানালে ফেটে যাওয়া গুলো পরিবর্তন করে দিয়েছি। কিছু বিভাগে পরীক্ষা চলছে পরীক্ষা শেষ ওখানে থাকা ফাটা প্রোডাক্ট গুলো পরিবর্তন করা হবে। আখতার ফার্নিচার হলো বাংলাদেশের ব্র্যান্ড কোম্পানি এই পণ্য গুলো ওয়ারেন্টি দেওয়ার কথা ছিল আমরা এটি ১ বছরের জন্য গ্যারান্টি করে দিয়েছি।

রং উঠে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে রং প্রথমে চেয়েছিল তা দেয়া হয়েছিল। তা হলো রোজ রং এটি তারাই পছন্দ করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে অভিযোগ আসলে ওই রং আর যায়নি। পরে যে রং দেয়া হয়েছে তা উঠবেও না পানিতে ভিজিয়ে রাখলেও কিছু হবেনা। আর রোজ রংটির প্রোডাক্ট শুধু ফার্মেসি বিভাগে কিছু গিয়েছিল অন্য কোন বিভাগে এই নরমান রংটি যায়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী মুন্সী শহিদ উদ্দীন মো. তারেক বলেন, অতিরিক্ত তাপের কারণে চেয়ার-টেবিল গুলো ফেটে গিয়েছে। তবে রং উঠার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এটিই ইবির ইতিহাসে সর্বোচ্চ মানের চেয়ার-টেবিল। যারা এ নিয়ে অভিযোগ এনেছে তা ভিত্তিহীন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ট্রেজারার প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন ভূইয়া বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি ডিল করছে প্রকৌশল অফিস। তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে চেয়ার-টেবিল গুলো প্রবলেম হয়েছে তা ফেরত নিয়ে নতুন ভাল প্রোডাক্ট দিতে। তবে নিম্নমানের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রোডাক্ট গুলো নিম্নমানের কিনা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।