ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

এমপির চড়ে দুই শিক্ষক হাসপাতালে, এলাকায় তোলপাড়

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২০ মে ২০২২ ০৪:৫০:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়
 
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজের দুই সহকারী অধ্যাপককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের বিরুদ্ধে। এতে আহত এক শিক্ষক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এমপির এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড়ে আহত শিক্ষক সাজ্জাদ হোসাইনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অপর শিক্ষক মোশারফ হোসেন বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় শিক্ষকদের নিরাপত্তার দাবিতে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর এলাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
 
এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ মে) রাতে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহাবুবুর রহমান।
 
এর আগে একই দিন বিকেলে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটে।
 
লাঞ্ছিত দুই শিক্ষক হলেন- কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন ও গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন।
 
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে পুরো জেলাজুড়ে জনসাধারণের মাঝে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে এমন ঘটনায় ক্ষুব্দ অন্য শিক্ষকরা এর প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
 
ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহাবুবুর রহমান উল্লেখ করেছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কলেজে প্রবেশ করেন। পরে গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসাইনকে ‘তুই শিবির করিস’ বলে কানে-মুখে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। সেই সঙ্গে শিক্ষকদের কমন রুমে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে চলে যান।
 
এদিকে, ন্যক্কারজনক ওই ঘটনায় কলেজের নন-এমপিওভুক্ত বাংলা বিভাগের প্রভাষক সুব্রত ও অবসরপ্রাপ্ত উপধ্যাক্ষ মজিদ মন্ডল জড়িত রয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ঘটনার সময় কলেজের দুই কর্মচারী তাপস ও সবুজ সহকারী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেনকে টানাহ্যাঁচড়া করেন। পরে বিকেল পর্যন্ত বহিরাগত ব্যক্তিরা দুদকের কিছু নথি হাতিয়ে নিতে কলেজের একটি কক্ষে তাকে আটকে রাখেন।
 
অন্যদিকে, ভুক্তভোগী শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তিনি নিজ বিভাগ সংশ্লিষ্ট জরুরি কিছু কাজ করছিলেন। ওই সময় কয়েকজন বহিরাগত দুষ্কৃতকারী ‘তুই শিবির করিস’ বলে তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এতে কানে গুরুতর ব্যথা পান। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
 
কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, কলেজ থেকে সরকারি খাতা চুরির বিষয় নিয়ে সাত বস্তা অব্যবহৃত খাতা চুরির অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশে আদালতে একটি মামলা হয়। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। ওই ঘটনার ছয় সাক্ষীর মধ্যে লাঞ্ছিত দুই শিক্ষকও রয়েছেন। বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বেলা ১টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে আসেন। এ সময় তাদের সাথে খাতা চুরির সাথে জড়িত শিক্ষক আব্দুল মজিদ মণ্ডল, রকিবুল ইসলাম মিল্টন এবং সুব্রত কুমার নন্দী ছিলেন।
 
সংসদ সদস্য অফিস কক্ষে এসে কর্তব্যরত শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেনের ওপর আকস্মিকভাবে চড়াও হন। ‘তুই শিবির করিস’ বলেই তাকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। অপর শিক্ষক মোশারফ হোসেনকে একইভাবে হেনস্থা করতে থাকেন। তাদের আক্রমণে দুই শিক্ষকই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় মোশারফ হোসেনের কাছে খাতা চুরি মামলায় দুদক ও তদন্ত কর্মকর্তার কাগজপত্র দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। আর এমপি শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেনকে মারপিট করতে থাকেন। হামলায় সাজ্জাদ হোসেনের কানের পর্দা ফেটে যায়। পরে তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
 
মারধরের শিকার অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হঠাৎ এসেই শিক্ষক রুমের সবাইকে বের করে দেন। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি আমাকে ‘তুই শিবির করিস’ বলে থাপ্পড় মারেন। পরপর তিনি ক্রমাগত থাপ্পড় মারেন আমাকে।
 
সহকারী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, দুদকের একটি ফাইল হাতিয়ে নিতে প্রভাষক সুব্রত ও অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মন্ডল প্রথমে এসে আমাকে অপমান-অপদস্ত করেন ও মারধর করতে উদ্যত হন। কিন্তু এ ধরনের একটি সরকারি ডকুমেন্ট নিতে হলে কালীগঞ্জ ইউএনওর সম্মতি ছাড়া দেওয়া যাবে না, বলে আমি জানিয়ে দিই।
 
পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজে ঝামেলা হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে থানা পুলিশকে কলেজে পাঠানো হয়। পরে সেখানে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে কলেজের একটি ফাইল নিয়ে কয়েকজন শিক্ষকের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে করা লিখিত অভিযোগ এখনও তার হাতে পৌঁছায়নি বলে জানান তিনি।
 
ঘটনার ব্যাপারে জানতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
 
এদিকে, কলেজ শিক্ষকরা নিরাপত্তার দাবিতে পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। শিক্ষক প্রহারের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এলাকায় তোলপাড় ‍শুরু হয়েছে।