ঢাকা, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

এলা মুই আরামে শান্তিত নিন্দাবা পারিম

রবিউল এহ্সান রিপন, ঠাকুরগাঁও: | প্রকাশের সময় : রবিবার ২ জানুয়ারী ২০২২ ১২:১৪:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

এই শিতের রাইতত ঠিক মতন নিন্দাবা পারু না। সারাদিন ভিক্ষা করে রাইতত জারের তানে নিন্দ ধরে না। আইজ স্যার আসে একটা কম্বল দিল। এলা রাইতত শান্তিতে নিন্দাবা পারিম। জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে শীতে কম্বল পেয়ে এভাবেই নিজের অনুভুতি জানাচ্ছিলেন মোবারক (৫৫)।

শনিবার রাতে বছরের প্রথম দিনে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে শীতার্থ অসহায় ভবঘুরে দরিদ্র মানুষকে প্রায় ২শত শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান ও তার পরিবার।

শহরের বাজস্ট্যান্ড এলাকায় একটি মার্কেটের নিচেঁ ঠান্ডায় জরোসরো হয়ে ঘুমিয়ে থাকা মোবারক কে ডেকে কম্বল দেন জেলা প্রশাসক। মোবারক তখন আবেগে এসব কথা বলেন। সারাদিন ভিক্ষা করে খাওয়ার ব্যাবস্থা হলেও রাতে ঘুমান মার্কেটের নিচে। ঠান্ডায় কোন কম্বল না থাকায় একটি ছেড়া বস্তা গায়েঁ দিয়ে শুয়ে ছিলেন। কম্বলটি পেয়ে আবেগে কান্না করেন এবং দোয়া করেন।

এসময় বাজস্ট্যান্ড এলাকার এক রিক্সা চালক মোখলেসুরকেও কম্বল দেন জেলা প্রশাসক। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারাদিন রিক্সা চালাই। সরকারের পক্ষ হতে শীতে কম্বল দেওয়া হয় ঠিকই কিন্তু অনেকক্ষন লাইনে দাড়িয়ে থেকে কম্বল নেওয়া সম্ভব হয় না। আজ হঠাৎ স্যার এভাবে কম্বল দিবে কোনদিন ভাবতেও পারি নাই আমি।

আধুনিক সদর হাসপাতালের বারান্দায় শীতে জরোসরো হয়ে বসে থাকা এক বৃদ্ধ চাচাকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে কম্বল দেন জেলা প্রশাসকের স্ত্রী। বৃদ্ধ চাচা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার পরে দু হাত তুলে দোয়া করেন। বৃদ্ধ চাচা এসময় বলেন, মোর বেটি অসুস্থ। হসপিটালত ভর্তি করাইছু। ওইঠে মোক থাকিবা দেয় না ওইতানে বাহিরত বসে আছু। কাপড়ও আনু নাই ওইতানে ঠান্ডায় কাপেছিনু। কুন্ঠে থেকে যে মাইগেনা আসে মোক কম্বল দিল মুই তো বুঝিবার পারিনু নাই। আল্লাহর ওমাহর ভালো করিবে।

এর আগে জেলা প্রশাসক ও তার পরিবার শহরের কালিবাড়ি এলাকার হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কম্বল বিতরণ করেন। এছাড়াও শহরের রেল স্টেশন, রোড এলাকা, হসপিটাল, চৌরাস্তা সহ রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা অসহায় শীতার্থ মানুষদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন।

পরে জেলা প্রশাসকের স্ত্রীর কাছে বছরের প্রথম দিনে এমন উদ্যেগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। বছরের প্রথম দিনটা একটু অন্য রকম ভাবে স্বরনীয় করে রাখার জন্যই এই উদ্যেগ। আমার ছোট দুই সন্তানকেও নিয়ে বের হয়েছি। তাদেরও জানা উচিৎ মানুষের পাশে দাড়ানো। আর আমার নিজের অনেক ভালো লাগছে এভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে পেরে।

জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের প্রকোপটা অনেক বেশি। আর প্রশাসন মানুষের দোড়গোড়ায় পৌছানোর জন্য এই উদ্যেগ। বছরের প্রথম দিন সন্তান স্ত্রী সহ শীতার্থ মানুষকে কম্বল দেওয়ার জন্য বের হয়েছি। এই শীতে যেসব মানুষ কষ্ট পাচ্ছে তাদের কষ্টগুলো কাছ থেকে জেনে সহযোগীতা করছে জেলা প্রশাসন। তবে সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে এই শীতে অনেক অসহায় মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। আর আমার সন্তানদের অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোটা এখন থেকেই শেখানোর চেষ্টা করছি। বছরের প্রথম দিনে অসহায় শীতার্থদের কম্বল বিতরণ করতে পেরে ভালোই লাগছে।